ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অবিলম্বে দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করুন: গণমিছিলে খালেদা জিয়া

মান্নান মারুফ/আসাদ জামান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১০
অবিলম্বে দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করুন: গণমিছিলে খালেদা জিয়া

ঢাকা: ভারতের সঙ্গে সরকারের চুক্তিকে দেশের স্বার্থ বিরোধী উল্লেখ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, অবিলম্বে দেশ বিরোধী এই চুক্তি বাতিল করুন। দেশের টাকায় অন্যের স্বার্থ রক্ষা করতে কিছুতেই দেওয়া হবে না।

এছাড়াও সরকার জনগণের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে রমজানের পর নতুন কর্মসূচি দেওয়ার কথা বলেন খালেদা জিয়া।

সোমবার বিকেলে গণমিছিল শুরুর আগে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘ভারতের সাথে ইতিপূর্বে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে গোপন চুক্তি করেছেনে তা জনগণ জানতে চায়। চুক্তি যদি দেশ বিরোধী না হবে তাহলে তা প্রকাশ করছেন না কেন?’

ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রবণ মূখার্জির উপস্থিতিতে শনিবার যে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে তাকে গোলামী চুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ ভারতের সাথে ২৫ বছরের গোলামী চুক্তি করেছিল ক্ষমতায় থাকার জন্য। তারপরও বিদেশি প্রভুরা তাদেরকে ক্ষমতায় রাখতে পারেনি। এবারও বিদেশি প্রভুদের খুশি করতে দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি করে সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। ’

খালেদা জিয়া চুক্তির বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।

জাতীয় সংসদকে সরকার মাছের আড়ত ও চিড়িয়াখানা বানিয়ে রেখেছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজকে সংসদ বলে কিছু নেই। সরকারই সংসদকে চিড়িয়াখানা ও মাছের আড়ত বলে আখ্যায়িত করেছে। ওই চিড়িয়খানা বা মাছের আড়তে গিয়ে জনগণের কথা বলা যায় না। তাই আমরা জনগণের কথা বলতে রাজপথে এসেছি। আশা করি জনগণ আমাদের সাথে থাকবে। ’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই সরকার যে ওয়াদা করে ক্ষমতায় এসেছিল তা পূরণ করতে পারেনি। গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ নেই। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে জনগণের ত্রাহি অবস্থা। আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি। দেশ পরিচালনা এ সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। যদি দ্রব্যমূল্য কমাতে না পারেন, গ্যাস-বিদ্যু-পানি সংকট দূর করতে না পারেন তাহলে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। জনগণ আবার সিদ্ধান্ত নেবে কারা জনগণের পক্ষে কাজ করবে। ’

খালেদা জিয়া প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে দলীয় করণের অভিযোগ করে বলেন, ‘সচিবালয়সহ সব জায়গা থেকে যোগ্য কর্মকর্তাদের সরিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় লোকদের বসানো হচ্ছে। প্রশাসন এখন স্থবির। ভালো ভালো কর্মকর্তাদের হয় চাকরিচ্যুত নয়তো ওএসডি করা হচ্ছে। ’

এসব কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনার আওয়ামী লীগের হুমকি-ধামকিতে ভয় পাবেন না। সততা ও সাহসিকতার সাথে কাজ করে যান। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বকেয়া বেতনসহ চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ’

খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘এ সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু আমাদের কোনো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে দেয় না। সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই বুঝতে  পেরে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর নিপীড়ণ-নির্যাতন শুরু করেছে। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়ারনি করা হচ্ছে। এভাবে হামলা-মামলা দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যায় না। ’

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণ মিছিলটি পল্টন, দৈনিকবাংলা, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ হয়ে মগবাজার গিয়ে শেষ হয়।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংকট, সরকার দলীয় ক্যাডারদের তা-ব-টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি বন্ধ, নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি, মামলা প্রত্যাহার, চৌধুরী আলমের সন্ধান, সংবাদপত্রের ওপর হস্তক্ষেপ, সাংবাদিক নির্যাতন, বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ, প্রাশাসনের দলীয় করণ, ভারতের সাথে টিপাইমুখ বাধ চুক্তি, বন্দর ব্যাবহার ও করিডোর দেওয়ার প্রতিবাদে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান থেকে বিশাল এক গণমিছিল কর্মসূচি দেয় বিএনপি।
 
গণমিছিলে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ্, এমকে আনোয়ার, আ স ম হান্নান শাহ, নজরুল ইসলাম খান, সরোয়ারি রহমান, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ার আব্দুল্লাহ আল নোমানা, সেলিমা রহমান, সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ, সাদেক হোসেন খোকা, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, মীর নাসির উদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব, আমান উল্লাহ আমান, সালাউদ্দিন আহমেদ, রুহুল কবির রিজভী বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, প্রচার জয়নুল আবদীন ফারুক, সহপ্রচার সম্পাদক শফি বিক্রমপুরী মহিলা দলের সভাপতি নূরী আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।  

উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব  খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশ সময় ১৮৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।