ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কুড়িগ্রামে শনিবার বসছে সীমান্তহাট

ফজলে ইলাহী স্বপন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১১
কুড়িগ্রামে শনিবার বসছে সীমান্তহাট

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলার সীমান্তবাসীদের জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে সীমান্তহাট। আগামী শনিবার হাটের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে।

তবে এই হাট নিয়ে ভারতীয়দের আগ্রহ কম। হাটে প্রবেশের জন্য ভারত থেকে ৬৯ জনের তালিকা পাওয়া গেছে। পক্ষান্তরে হাটে প্রবেশের জন্য আড়াই হাজার বাংলাদেশি আবেদন করেছেন।

বালিয়ামারি সীমান্তবর্তী এলাকার জিঞ্জিরাম নদীর পাড়ে চার বিঘা জমির উপর নির্মিত সীমান্তহাটটিতে উভয় দেশের মানুষ নিত্যপণ্য কেনা-বেচা করতে পারবেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান এবং ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী ড. মুকুল সাংমা হাটের উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. জাকির হোসেন, মো. জাফর আলী, আহমেদ নাজমীন সুলতানা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, রংপুর বিভাগীয় কমিশনারসহ অন্যান্য অতিথি। ভারতের পক্ষে লোকসভার সদস্য আব্দুস সালেহ, মেঘালয় রাজ্যের মুখ্য সচিব ও ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেডসহ অন্য অতিথিরা।

রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সীমান্তহাট কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে জানান, প্রতি বুধবার হাটটি বসবে। শীতকালে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এবং গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হাটে কেনা-বেচা চলবে। হাটে মালামাল বিক্রেতা থাকবে বাংলাদেশের ২৫ জন এবং ভারতের ২৫ জন। হাটে ক্রেতা হিসেবে ভারতের পক্ষ থেকে ৬৯ জনের তালিকা পাওয়া গেছে। পক্ষান্তরে হাটে ক্রেতা হিসেবে বাংলাদেশের আবেদন পাওয়া গেছে আড়াই হাজার। এগুলো যাচাই করে অনুমতি দেওয়া হবে এবং প্রত্যেক ক্রেতা-বিক্রেতার পরিচয়পত্র থাকবে।

তিনি আরও জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে উভয় দেশের ৩০০ করে ৬০০ জন ক্রেতা হাটে যেতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে ধারালো অস্ত্র, মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, জুয়েলারি, সিগারেট, ম্যাচ এবং ছোট শিশুদের নিয়ে হাটে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। বাংলাদেশ-ভারতের হাট ব্যাবস্থাপনা কমিটি এসব কিছুর তত্ত্বাবধানে থাকবে।

আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১০৭২-এর ৪ এবং ৫ নম্বর সাব পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে জিরো লাইনের উভয় দিকে বাংলাদেশ অংশে ৭৫ গজ এবং ভারত অংশে ৭৫ গজ জায়গা জুড়ে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে হাটটি বসবে।

বাংলাদেশ অংশে কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারি সীমান্তের ব্যাপারীপাড়া এলাকার জিঞ্জিরাম নদীর পূর্ব প্রান্তে এবং ভারতীয় অংশে রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার আমপাতি মহুকুমার মহেন্দ্রগঞ্জ থানার কালার চর সীমান্ত।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চারিদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ভারত আটটি হাটছাউনি ও দু’টি শৌচাগার নির্মাণ করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নির্মাণ করা হয়েছে হাটের জন্য রাস্তা ও জিঞ্জিরাম নদীর উপর একটি বাঁশের সাঁকো। হাটে উভয় দেশের ১০টি কৃষিজাত পণ্যসহ ৪৭টি পণ্য কেনাবেচা হবে। কোনো ব্যক্তি ৫০ ইউএস ডলার বা ৩ হাজার টাকার সমপরিমাণের বেশি পণ্য ক্রয় করতে পারবেন না।

যেসব পণ্য কেনা-বেচা হবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কৃষিজাত পণ্য, প্রসাধন সামগ্রী, আসবাবপত্র, মসলা জাতীয় দ্রব্য, ফলমূল ইত্যাদি।

ভারতের পক্ষ থেকে স্থানীয় কৃষিপণ্য, ঐতিহাসিক পণ্য, মসলাজাত দ্রব্য, উপজাতিদের তৈরি বিভিন্ন পণ্য, মাছ ও শুটকি মাছ, দুগ্ধজাত পণ্য, পোলট্রি পণ্য, কুটির শিল্প, কাঠের আসবাবপত্র, ইক্ষুজাত পণ্য, হ্যান্ডলুম ও হ্যান্ডিক্র্যাফট।

বাংলাদেশের পক্ষে চিপস, চানাচুর, আলু, তৈরি পোশাক, শুটকি, মুরগি ও ডিম, সাবান, সিম, ফার্নিচার ইত্যাদি।

দু’দেশের মধ্যে ফল, মসলা, মরিচ, হলুদ, পান সুপারি, আলু, মধু, বাঁশ ইত্যাদিও ক্রয়-বিক্রয় হবে। হাট পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য উভয় দেশের দু’জন সুইপার নিয়োজিত থাকবে। যারা হাটে যাতায়াত করবেন তাদের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হবে।

রাজীবপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো বাংলানিউজকে জানান, সীমান্ত হাটটি চালু হলে বালিয়ামারি, মন্ডলপাড়া, সান্ডারপাড়া, জালছিরাপাড়া, কড়াইডাঙ্গিপাড়া, আলগারচর, লাঠিয়ালডাঙ্গা, ব্যাপারীপাড়া, জাউনিয়ারচর, মিয়াপাড়া ও বাউলপাড়া গ্রামসহ রাজিবপুর এবং এর লাগোয়া রৌমারী উপজেলার বিপুল সংখ্যক মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

ভারতীয় অংশের বলদানগিরি, ওয়াদাগিরি, জানগিরি, মারহালিপাড়া, কালাইরচর ও ঢাকঢাকিপাড়া গ্রামসহ এর আশেপাশের এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ উপকৃত হবে বলে জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, হাট উদ্বোধনের সকল প্রক্রিয়া শেষ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে উচ্চ পর্যায়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর সীমান্তহাট স্থাপনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।