ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘দেশ গ্যাসে ভাসছে’ একথা কেন বলা হতো, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১০
‘দেশ গ্যাসে ভাসছে’ একথা কেন বলা হতো, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের গ্যাস সঙ্কট নিয়ে আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে তিনি জানতে চেয়েছেন- ‘দেশ গ্যাসে ভাসছে’ এমন কথা আগে কেন বলা হতো।



বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে রোববার সচিবালয়ে অফিস করার সময় এ প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের একথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, ‘আগে শুনতাম দেশ গ্যাসে ভাসছে। কিন্তু ক্ষমতায় এসে দেখি গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কট। তবে আগে গ্যাসে দেশ ভেসে যাওয়ার কথা কেন বলা হতো?’

এ সঙ্কটের জন্য  বিগত জোট সরকার ও তত্ত্বাধায়ক সরকারকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, ‘ওই সাত বছরে দেশে এ খাতে কোনো কাজ হয়নি। ’

আসন্ন রমজানে মুসল্লিদের যেন বিদ্যুতের কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতি নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারে সবাইকে যতটুকু সম্ভব সাশ্রয়ী হওয়ার আহবান জানান।

আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ ও গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পদ্ধতিগত কোনো সমস্যা যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেন। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো অন্তরায় সৃষ্টি হলে তা দূর করতে প্রয়োজনে বিধিবিধান পরিবর্তন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী।

বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে সচিবালয় ছেড়ে যান প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে মন্ত্রণালয়ে প্রায় আড়াইঘণ্টা অবস্থানকালে তিনি সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগকে ধন্যবাদ জানান বলেও আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সরকারের দুই বছরের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যে অগ্রগতি হয়েছে এর জন্য এই মন্ত্রণালয়ের সকলকে ধন্যবাদ জানান। পাশপাশি নবায়নযোগ্যা জ্বালানীর ব্যবহার ক্রমশ বাড়নোর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন।

জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকে গ্যাসের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেছি প্রধানমন্ত্রীর কাছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে আমরা সময়বদ্ধ একটি পরিকল্পনা সংসদে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করেছি।
 
তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১০ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১৫৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও টার্গেটে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। ’

জ্বালানি সচিব জানান, চলতি বছরের মধ্যে আমরা ১৮৮ মিলিয়ন ঘনফুট অতিরিক্ত গ্যাস উৎপাদন সম্ভব হবে।   ২০১৩ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১২৮৫ মিলিযন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। প্রায় কাছাকাছি সময়ে এলএনজি থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
 
প্রধানমন্ত্রী গৃহস্থালি কাজে এলপিজি বা বোতল-গ্যাস ব্যবহারের জন্য উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। এ ছাড়াও এলপি গ্যাস উৎপাদনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে এর উৎপাদন বাড়াতে একটি কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

চট্টগ্রামের চলমান গ্যাস সংকট সমস্যা সমাধানে গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর সঙ্গে উৎপাদন বন্টন চুক্তি (পিএসসি) করে ফেলার জন্য বৈঠকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মুলত জ্বালানি বিভাগের কর্মকান্ড দেখতে এসেছেন। জ্বালানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ওতোপ্রোতভাবে জড়িত হওয়ার কারণে সংগত কারণেই বিদ্যুতের বিষয়টি চলে আসে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বিদ্যুতের সর্বশেষ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছি। ’

তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতায় আসাার পর আমরা জাতীয় গ্রিডে মোট ৮৭১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করতে পেরেছি। এই পর্যন্ত ২৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। আরও ২৫০০ মেগাওয়াটের কার্যাদেশ দেওয়া হবে।

রমজানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ সচিব জানান, রমজানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের চাহিদা ৯২০ মিলিয়ন ঘনফুট।

রমজানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করে সচিব বলেন, ‘রমজানের আগে আমরা আরও বিদ্যুৎ পাবো। তখন পরিস্থিত এখনকার মত থাকবে না। ’

প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকান্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জানিয়ে সচিব জানান, ‘বিদ্যূৎ উৎপাদনে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় : ১৮২৪, আগস্ট ৮, ২০১০।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।