ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চেতনা-সাম্য, মাতৃভাষার প্রতীক শহীদ মিনার

মেহেদী হাসান পিয়াস, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬
চেতনা-সাম্য, মাতৃভাষার প্রতীক শহীদ মিনার ছবি: রাজীব/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: “স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো
চারকোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো! যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য
পারেনি ভাঙতে
হীরের মুকুট নীল পরোয়ানা খোলা তলোয়ার
খুরের ঝটকা ধুলায় চূর্ণ যে পদ-প্রান্তে
যারা বুনি ধান
গুণ টানি, আর তুলি হাতিয়ার হাঁপর চালাই
সরল নায়ক আমরা জনতা সেই অনন্য ।

ইটের মিনার
ভেঙেছে ভাঙুক! ভয় কি বন্ধু, দেখ একবার আমরা জাগরী
চারকোটি পরিবার।


 
১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশের হাতে প্রথম শহীদ মিনার ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ শিরোনামে এই কবিতাটি লিখেছিলেন।

প্রথম শহীদ মিনার ভাঙার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। ২১ ফেব্রুয়ারি নৃসংশতার পর ২৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্মমতায় সংক্ষুব্ধ তরুণ আলাউদ্দিন আল আজাদ ঘটনার পর পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলে বসে এ কবিতাটি লিখেছিলেন।

সেদিন ইটের শহীদ মিনার ভেঙে দিলেও ভাষার মর্যাদা রক্ষায় কোটি প্রাণে যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, অমর-অক্ষয় মিনার গড়ে উঠেছিল তাকে এতটুকু টলাতে পারেনি পাকিস্তানের বর্বর শাসকগোষ্ঠী। প্রতিবাদ-প্রতিরোধের সে দীর্ঘ সংগ্রাম কেবল মাতৃভাষার মর্যাদাই রক্ষা করেনি, একাত্তরে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারও প্রতিষ্ঠা করেছিল।

আজও অশুভের সাথে আপোসবিহীন দ্বন্দ্বে বাঙালির প্রধান অস্ত্র অসাম্প্রদায়িক, সার্বজনীন চেতনায় গড়ে একুশের শহীদ মিনার। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলের পাশে ভাষা আন্দোলনের গৌরব নিয়ে গম্ভীরভাবে যে শহীদ মিনারকে আজ অহর্নিশ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি, এ শহীদ মিনারটিও পাষণ্ড পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েছিল।

শুরুর কথা:
২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারির শহীদদের স্মরণে ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা। শহীদ মিনার নির্মাণ শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে।

বর্তমানে যে জায়গায় শহীদ মিনারটি অবস্থিত তার পূর্ব-দক্ষিণ কোণে প্রথম শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়েছিল (মেডিকেল হোস্টেলের ১২ নং শেডের পূর্ব প্রান্তে) হোস্টেলের মধ্যবর্তী রাস্তা ঘেঁষে কোণাকুণিভাবে। শহীদদের রক্তভেজা স্থানে নির্মিত সাড়ে ১০ ফুট উঁচু ও ৬ ফুট প্রস্থের এ ছোট স্থাপত্যটির নির্মাণকাজ শেষ হলে কাগজে ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ লিখে এর গায়ে সেঁটে দেওয়া হয়।

যেভাবে নির্মাণ করা হয় প্রথম শহীদ মিনার:
ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিনের তত্ত্বাবধানে প্রথম শহীদ মিনারটির ডিজাইন করেছিলেন বদরুল আলম এবং সাঈদ হায়দার। তাদের সহযোগিতা করেছিলেন দু’জন রাজমিস্ত্রী; যাদের নাম আজও অজানা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ সম্প্রসারণের কাজের জন্য জমিয়ে রাখা ইট-বালি এবং পুরান ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে আনা হয় সিমেন্ট। ভোরে এটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।

শহীদ মিনার উদ্বোধন ও বিনাশ:
শহীদ মিনারটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিলো ২৪ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন সকালেই শহীদ শফিউরের পিতা শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। আবার জানা যায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন। ওই দিনই পুলিশ মেডিকেল হোস্টেল ঘিরে ফেলে এবং শহীদ মিনার ভেঙে দেয়।

পরবর্তী প্রেক্ষাপট:
প্রথম নির্মিত শহীদ মিনারটি ভেঙে দেওয়া হলেও জনতার হৃদয় থেকে শহীদদের মুছে দিতে পারেনি শাসকগোষ্ঠী। তাই, ঢাকা মেডিকেলের অনুকরণে দেশের বিভিন্ন লেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও নির্মাণ করা হয় শহীদ মিনার। ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম শহীদ মিনারটি ভেঙে দেওয়ার পর ঢাকা কলেজে নির্মিত শহীদ মিনারটিও শোষকদের শ্যেনদৃষ্টি থেকে রক্ষা পায়নি। সে সময় দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে নির্মিত ছোট ছোট শহীদ মিনার ভাঙার খবর প্রকাশ পায়।

১৯৫৩ সাল থেকে ছাত্র-জনতা ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করতে থাকে। ঢাকা মেডিকেলের হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারের শূন্য স্থানটিতে লাল কাগজের অবিকল প্রতিকৃতি স্থাপন করে তা কালো কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এ শহীদ মিনার থেকেই শুরু হয় প্রথম প্রভাতফেরি।

দ্বিতীয় বার শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা:
১৯৫৪ সালের ৩ মে যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসে। একুশ দফার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ, একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস এবং ওই দিন সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করলেও ৩০ মে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যায়। ফলে ওই বছর তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
১৯৫৬ সাল। তখন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন আবুল হোসেন সরকার। তৎকালীন পূর্ত সচিব আব্দুস সালাম খান মেডিকেল হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য চূড়ান্তভাবে স্থান নির্ধারণ করেন।
 
শিল্পী হামিদুর রহমানের পরিকল্পনা:
১৯৫৭ সালে শিল্পী হামিদুর রহমান বিশাল জায়গাজুড়ে শহীদ মিনার কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি নকশা করেন। সহকর্মী ভাস্কর নভেরা আহমদকে সাথে নিয়ে তিনি মেডিকেল হোস্টেল প্রাঙ্গণে নির্মাণ কাজ আরম্ভ করেন। অসম্ভব নির্মাণশৈলী সমৃদ্ধ এ পরিকল্পনায় শহীদ মিনারের পাশে একটি জাদুঘর, পাঠাগার, ঝরণা ও ম্যুরাল নির্মাণেরও কথা ছিলো। অনেক দূর এগিয়েছিলো তার এ পরিকল্পনা।

কিন্তু ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এ অসম্পূর্ণ ও খণ্ডিত শহীদ মিনারেই ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, শপথ গ্রহণ ও আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে।

শহীদ মিনার নির্মাণের তৃতীয় পদক্ষেপ:
১৯৬২ সাল। পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর আজম খানের নির্দেশে তখনকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির পরামর্শ মতে মূল নকশা অনেকটাই পরিবর্তন ও সঙ্কুচিত করা হয়। মূল নকশাকে খণ্ডিত করে আরেকটি নকশা দাঁড় করানো হয়। এ নকশানুযায়ী নির্মিত শহীদ মিনারটি ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন শহীদ বরকতের মা হাসিনা বেগম।

স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে শহীদ মিনার:
একাত্তরের মুক্তি সংগ্রাম চলাকালীন পাক হানাদারদের বিষাক্ত ছোবল থেকে রেহাই পায়নি বাঙালির চেতনার এ কেন্দ্রবিন্দুটি। আবারও ভেঙে দেওয়া হয় শহীদ মিনারটি। কিন্তু ভাঙতে পারেনি বাঙালির চির দুর্মর হৃদয়ের শাণিত চেতনাকে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ মিনারটি ভেঙে দিয়ে পাক বাহিনী সেখানে ‘মসজিদ’ লিখে রাখে।

বর্তমান শহীদ মিনার:
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে নতুন করে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এবারও শহীদ মিনারের মূল নকশাটিকে পাশ কাটিয়ে ১৯৬৩ সালের সংক্ষিপ্ত ও খণ্ডিত নকশায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।

১৯৭৬ সালে নতুন করে একটি নকশা অনুমোদন করা হয়। কিন্তু নানা কারণে সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। ১৯৮৩ সালে শহীদ মিনার চত্বরকে সম্প্রসারণ করা হয়। সেই থেকে বর্তমান শহীদ মিনারটি এভাবেই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের চেতনার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্ব-মহিমায়।
 
শহীদ মিনারের পরিচিতি:
বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোট পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে। মাঝখানের স্তম্ভটি সবচেয়ে উঁচু এবং উপরের অংশটি সামনের দিকে নোয়ানো। এই উঁচু স্তম্ভটির দুই পাশে সমান ছোটো-বড় আরও চারটি স্তম্ভ।

 মনে করা হয়, অতন্দ্র প্রহরী চার সন্তানকে নিয়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন মা। পেছনে উদীয়মান লাল টকটকে সূর্য। অর্থাৎ, মাতৃভাষার অধিকার, মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যেমন অকাতরে জীবন দিয়েছিল রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত। তেমনি মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব আর মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় মায়ের পাশে এখনও অতন্ত্র প্রহরায় তার সন্তানেরা। আর পেছনের লাল সূর্যটা স্বাধীনতার, নতুন দিনের, অন্ধকার দূর করে আলোর উৎসারণ।    

ভাষাসংগ্রামী ও বিশিষ্ট লেখক-প্রাবন্ধিক আহমদ রফিকের ভাষায়, ‘শহীদ মিনার এখন শুধু ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি নয়, আমাদের অনুপ্রেরণারও অনন্ত উৎস। পবিত্র বেদির কাছে এসে সব ধরনের অন্যায়, অবিচার, জুলুম-নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শপথ নেওয়ার পবিত্র স্থান। “

এখনও অসম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার:
স্বাধীন বাংলাদেশেও স্বার্থান্বেষী মহলের আগ্রাসনে পড়ে আমাদের প্রাণের শহীদ মিনার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায়, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ছিন্নমূল, মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল শহীদ মিনারের পাদদেশ।

২০০০ সালের দিকে ধীরে ধীরে মাজার ও একটি মসজিদ গড়ে তোলে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জন্য আশপাশে বরাদ্দকৃত চার একর জমির একটি অংশ দখলও নেয় একটি গোষ্ঠী। তারা সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলে। ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতিস্মারক ও বাঙালি চেতনার প্রতীক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের দাবির মুখে আশপাশের সব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়। উচ্ছেদ করা হয় মাজার-মসজিদ। এর পরপরই শহীদ মিনারের চারপাশে নিরাপত্তা প্রাচীর দেওয়া হয়।
 
উচ্চ আদালতের রায় ঘোষণার পর কেটে গেছে চার বছর। কিন্তু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে এখন পর্যন্ত লাইব্রেরিসহ ভাষা জাদুঘর নির্মাণ করা হয়নি। কবে এই জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে তা বলা দুরুহ ব্যপার। যদিও রায় বাস্তবায়ন না করায় সরকারকে আদালত অবমাননার অভিযোগের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

হাইকোর্টের রায়ে শুধু জাদুঘরই নির্মাণ নয়, ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস (সংক্ষিপ্ত তথ্যাবলী) সন্নিবেশিত করে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ব্রুশিয়ার প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। যাতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এই ব্রুশিয়ার থেকে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে তথ্য পেতে পারেন। ২০১০ সালের ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট ৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে এ রায় দেন। রায়ে ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে জাদুঘর নির্মাণের জন্য পূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

রায়ে যা আছে: শহীদ মিনার সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের এবং এই দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্র অবহেলা করতে পারে না। তাই, আদালত মনে করে শহীদ মিনার সংরক্ষণের জন্য সরকারের ওপর নির্দেশনা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ, সংবিধানের ২৪ অনুচ্ছেদ বাঙালি জাতির ইতিহাস সংরক্ষণের দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের ওপর ন্যস্ত করলেও এ সম্বন্ধে কোনো পদক্ষেপ এযাবত্কালে কোনো সরকার গ্রহণ করেছে বলে প্রতীয়মান হয় না।

শুধু ভাষা জাদুঘর নির্মাণই নয়, হাইকোর্টের রায়ে ভাষাসৈনিকদের প্রকৃত তালিকা তৈরি, ভাষাশহীদদের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্তসহ ছবি সম্বলিত বোর্ড/ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন, শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ে মূল বেদিতে কোনো রকমের মিটিং, মিছিল, পদচারণা, আমরণ ধর্মঘট করা থেকে বিরত রাখতে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

রায়ে আরো বলা হয়, শহীদ মিনার সংগ্রামের প্রতীক, শহীদ মিনার সৃষ্টির প্রতীক। শহীদ মিনার পুরোনো রাষ্ট্র সমাজ ভেঙে নতুন রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার প্রতীক। শহীদ মিনার অন্যায় শাসন ও শোষণ অবসানের সংগ্রামের প্রতীক, শহীদ মিনার আর্থ-সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রতীক। শহীদ মিনার মানুষের মিনার, শহীদ মিনার সকল মানুষের জন্য উম্মুক্ত। জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায়, শ্রেণি, পেশা নির্বিশেষে মানুষের মিলনতীর্থ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। শহীদ মিনারে সকলকে আসতে হয়, কিন্তু কেন? কারণ, শহীদ মিনার মানুষের ভেদাভেদ ভোলায়, শহীদ মিনার মানুষকে মেলায়। শহীদ মিনার সব জাতির মাতৃভাষার প্রতীক।
 
ভাষাসৈনিকদের স্মরণে স্থাপিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্য ও পবিত্রতা সংরক্ষণ করবার উদ্দেশ্যে জনস্বার্থে মানবাধিকার সংগঠন 'হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ' হাইকোর্টে ২০১০ সালে রিট আবেদন দায়ের করেছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬
এমএইচপি/ জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।