ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে অপশক্তি কাজ করছে: সাজেদা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১০
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে অপশক্তি কাজ করছে: সাজেদা

ঢাকা: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে বিপুল পরিমাণ বিদেশি অর্থ আসছে বলে দাবি করেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে শনিবার নগরীর এলজিইডি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।



সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে পাহাড়ে গিয়ে আদিবাসীদের সমস্যার কথা শুনতে বলেছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তাকে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। গণতান্ত্রিক শক্তিকে ধংস করতে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য একটি বড় অপশক্তি কাজ করছে। তাদের কাছে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আসছে। ’

সংসদ উপনেতা জানান, সরকার আদিবাসী সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য সমুন্নত রাখতে আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক আইন তৈরি করেছে। তবে আদিবাসীদের দাবির মুখে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ শব্দদু’টি বাদ দেওয়া হচ্ছে।

পাহড়ে অশান্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পাহাড়িদের মধ্যে বাঙ্গালি ঢুকানোর কারণেই এ সমস্যা শুরু হয়েছে। এখন অভিবাসী বাঙ্গালিদেরও সরানো যাচ্ছে না। এ কারণে ভূমি সমস্যা সমাধানে ভূমি জরিপ জরুরি। ’

বক্তৃতার এক পর্যায়ে সন্তু লারমার পরামর্শে পাহাড় থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয় বলে জানান সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দিনব্যাপী এ সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক বিচারপতি গোলাম রাব্বানী। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। অন্যদের মধ্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন, এএলআরডি’র চেয়ারপার্সন খুশি কবীর ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং বক্তৃতা করেন। ড. আবুল বারাকাতের লেখা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।

প্রমোদ মানকিন বলেন, ‘সরকার আদিবাসীদের ভূমি বিরোধসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে গত এপ্রিলে ুদ্র নৃগোষ্ঠী সংস্কৃতি আইন প্রণয়ন করেছে। ’

আইনটি সংশোধন করে আদিবাসী সাংস্কৃতিক আইনে প্রবর্তন করার আহবান জানান তিনি।

বিচারপতি গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘জমির মালিকানা নিয়ে আলাদা দুটি দর্শন রয়েছে। বাঙালিরা জমির  ব্যক্তি মালিকানা দর্শনে বিশ্বাসী। আর আদিবাসীরা জমির সামাজিক মালিকানা দর্শনে বিশ্বাসী। আদিবাসীদের ভূমি সমস্যার সমাধান সামাজিক মালিকানা দর্শনের ভিত্তিতেই করতে হবে। ’

তিনি আদাবাসী ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির রণাবেণে বাংলা একাডেমীর আদলে রাজধানীতে একটি আদিবাসী একাডেমী গড়ে তোলার আহবান জানান।

দ্বিতীয় পর্বে খুশি কবীরের সভাপতিত্বে ‘আদিবাসী, ভূমি ও জীবন’ শীর্ষক  মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তথ্য কমিশনার অধ্যাপক সাদেকা হালিম ও সৈয়দ আবুল মকসুদ। এ সময় আদিবাসীদের সমস্যা নিয়ে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আদিবাসী ফোরামের নেতারা।

তৃতীয় ও  সমাপনী অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার সভাপতিত্বে প্রধন অতিথি ছিলেন খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্র্যাকের পরিচালক (সামাজিক ও উন্নয়ন কর্মসূচি) আন্না মিন্জ।

এ পর্বে ‘বাংলাদেশের আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ পরিচয় কেন সঠিক ও যথাযথ: একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চাকমা রাজা ও জতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আদিবাসীদের ভূমির সমস্যা সমাধানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক। ভূমি কমিশনকে আরও কার্যকর করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে। এছাড়া সমতল ভূমি সমস্যার সমাধানেও প্রয়োজনীয় পদপে নেওয়া হবে।

আদিবাসীদের সমস্যা সমাধানে একজন স্বতন্ত্র কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।

এ অধিবেশনের সভাপতি সন্তু লারমা বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকেই ুদ্র জাতি গোষ্ঠীর ওপর শোষণ নীপিড়ণ, বৈষম্য চলে আসছে । ভূমির জন্য আলফ্রেড সরেনসহ অনেককেই জীবন দিতে হয়েছে।   এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। যারা অদৃশ্য শক্তির বলে নানাভাবে জমির মালিক হয়েছে তারাই অত্যাচার, নির্যাতন করছে। ’

তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে। আগের আইন পরিবর্তন করে সময়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ আইন প্রনয়ণ করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে ভূমি কমিশন আইন সংশোধন করতে হবে।   নতুন করে একটি শক্তিশালী ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। ভূমি মামলা নিরসনে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ‘

সন্তু লারমা আরও বলেন, ‘জাতীয় নেতৃত্ব এখনো গণতান্ত্রিক হয়ে উঠতে পারেনি। এখানেই মূল সমস্যা। ’
 
এছাড়া দিনব্যাপী এ সেমিনারে সমতলের আদিবাসীদের জন্য স্বতন্ত্র ভূমি কমিশন গঠন, আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমির অধিকারকে স্বীকৃতিসহ বন ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর আদিবাসীদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, আদিবাসীদের অধিকৃত ভূমির ম্যাপিং ও রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা,  দখলকৃত জমি প্রকৃত মালিকের কাছে আইনী  প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থায়ীভাবে প্রদানের ব্যবস্থা করা, আদিবাসীদের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন কোনো প্রকল্প গ্রহনের আগে আদিবাসীদের মতামত ও সম্মতি গ্রহণ, ন্যাশনাল বা ইকোপার্ক ইত্যাদি প্রকল্প আদিবাসীদের সম্মতি ছাড়া না করা, কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হলে তাতে আদিবাসীদের অংশীদারিত্ব ও মালিকানা প্রদান, আইএলও কনভেনশনের ১০৭ নম্বর ধারা বাস্তবায়ন ইত্যাদি সুপারিশ উঠে আসে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।