চট্টগ্রাম: দেশে প্রথমবারের মতো পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের জন্য চট্টগ্রামে আবাসনের ব্যবস্থা করছে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন- বিজিএমইএ। ইতোমধ্যে নারী শ্রমিকদের জন্য ডরমিটরি নির্মাণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর সঙ্গে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছে বিজিএমইএ।
বিজিএমইএ ও সিডিএ কর্মকর্তারা জানান, নগরীর সল্টগোলা এলাকায় সিডিএর ৪১ কাঠা জমিতে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রাথমিকভাবে এতে তিন হাজার নারী শ্রমিকের আবাসনের সুযোগ থাকছে। পর্যায়ক্রমে আরো বেশি শ্রমিকের থাকার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ।
সিডিএর চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বাংলানিউজকে বলেন, নারী শ্রমিকদের থাকার জন্য এ ধরণের প্রকল্প এরআগে কখনো নেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে নারী শ্রমিকদের সম্মানে সিডিএ ও বিজিএমইএর যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
সিডিএর চেয়ারম্যান আরো জানান, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই ডরমিটরি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ২০১৩ সাল নাগাদ পাঁচটি ডরমিটরি ভবন বিজিএমইর কাছে হস্তান্তর করবে সিডিএ।
বিজিএমইএ সূত্র জানায়, তাদের অর্থায়নে সিডিএ পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
বিজিএমই-এর প্রথম সহ সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দেশের ইতিহাসে বিজিএমইএ প্রথম চট্টগ্রামের পোশাক শ্রমিকদের জন্য এ ধরণের ডরমিটরি ভবন নির্মাণ করছে। এটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। প্রাথমিকভাবে গৃহীত এই প্রকল্প সফল হলে চট্টগ্রামে এ ধরনের আরো কিছু প্রকল্প নেয়া হবে। নূন্যতম ভাড়ায় শ্রমিকরা ডরমিটরিতে থাকতে পারবেন।
অন্যান্যরা এধরণের উদ্যোগ নিলে চট্টগ্রামে আর শ্রমিক সংকট থাকবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সিডিএর উপ প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী শাহীনুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে জানান, এই প্রকল্পের আওতায় ছয়তলা বিশিষ্ট পাঁচটি ডরমিটরি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ফ্লোরে ৫০টি কক্ষ থাকবে। আর প্রতিকক্ষে ৮ থেকে ১০ জন করে নারী শ্রমিক থাকতে পারবেন।
এছাড়া গ্রাউন্ড ফ্লোরে হোস্টেল সুপারের রেসিডেন্স, অফিস, মেডিক্যাল সেন্টার, প্রার্থনা কক্ষ, ট্রেনিং সেন্টার, ক্লাস রুম, শপিং কর্নার, ওয়েটিং রুম, ক্যান্টিন ও কিচেনসহ জীবন-যাপনের জন্য আনুসঙ্গিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। প্রকল্পের টাকা চার বছরের কিস্তিতে পরিশোধ করবে বিজিএমইএ।
প্রসঙ্গত: চট্টগ্রামে ছোট-বড় ৭০০টি গামে পোশাক কারখানায় প্রায় চার লাখ শ্রমিক রয়েছেন। এরমধ্যে ৮৫ শতাংশই নারী শ্রমিক। কিন্তু এদের আবাসনের সুব্যবস্থা না থাকায় বর্তমানে কারখানাগুলো তীব্র শ্রমিক সংকটে পড়েছে। অনেক জায়গায় মাইকিং করে শ্রমিক চাওয়া হচ্ছে। কারখানার মালিকরা মনে করছেন, এ ধরণের আবাসনের ব্যবস্থা করা হলে শ্রমিক সংকট অনেকটা কেটে যাবে।
উল্লেখ্য, এক বছর ধরে বিজিএমইএ পোশাক শ্রমিকদের জন্য ডরমিটরি নির্মাণের জন্য সিডিএর সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে আসছিল। অবশেষে তাদের সেই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে।
এরআগে দেশে প্রথম চট্টগ্রামেই পোশাক শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য একশ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করে বিজিএমইএ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২১ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১১