ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সম্পর্ক ঝুঁকিপূর্ণ করার ক্ষেত্র নিজেই তৈরি করছে পাকিস্তান

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৬
সম্পর্ক ঝুঁকিপূর্ণ করার ক্ষেত্র নিজেই তৈরি করছে পাকিস্তান

ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে পাকিস্তানের অযাচিত হস্তেক্ষেপে দুদেশের সম্পর্ক যখন তলানিতে, ঠিক তখনই বিনা কারণে বাংলাদেশি কূটনীতিককে ফেরত নিতে বলেছে ইসলামাবাদ। এ আচরণের ফলে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে বলে অভিমত আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের।

আর পাকিস্তান নিজেই এর ক্ষেত্র তৈরি করছে বলে অভিমত তাদের।

জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে পাকিস্তান দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব ফারিনা আরশাদকে প্রত্যাহারে বাধ্য হয় পাকিস্তান। তারই জের ধরে মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) ইসলামাবাদ থেকে বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে ফিরিয়ে নিতে বলে পাকিস্তান। ফারিনার বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার সুস্পষ্ট অভিযোগ উঠলেও মৌসুমী রহমানের বিষয়ে কোন অভিযোগ আনতে পারেনি ইসলামাবাদ।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অবশ্য বলেছেন, এ ঘটনার মাধ্যমে নিজেদের মুখ রক্ষার চেষ্টা চালিয়েছে পাকিস্তান।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, “পাকিস্তানি কূটনীতিককে প্রত্যাহারের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশের কূটনীতিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে এটা এখন স্পষ্ট। তারা বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয় থেকে শুরু করে নানা ইস্যুতে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও ধৃষ্ঠতাপূর্ণ আচরণ করছে। যা দুদেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। কূটনৈতিক সংস্কৃতির কোনো পরোয়া না করে এসব আচরণ করছে পাকিস্তান। এমন আচরণ বৈরী সম্পর্কের দেশগুলোর মধ্যেও দেখা যায় না।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের এমন আচরণ উস্কানিমূলক। ইতিমধ্যে যুদ্ধপরাধ ইস্যুতে দুদেশের সম্পর্ক  ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এ সম্পর্ককে আরো ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে কূটনীতিক প্রত্যাহারের বিষয়টি। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে কেন্দ্র করে কিছুদিন ধরেই দেশে পাকিস্তানের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি উঠেছে। বিষয়টি রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও হয়ত চিন্তাভাবনা হচ্ছে। কিন্তু সম্পর্ককে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য পাকিস্তান নিজেই পরিবেশ তৈরি করছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা বাংলাদেশে যে হত্যা চালিয়েছিল, তার বিপরীতে পাকিস্তানের যেখানে ক্ষমতা প্রার্থনা করার কথা, উপলব্ধি করার কথা, সেটা না করে তারা বিষয়গুলোকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ”

এদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে এখনই সম্পর্ক ছিন্ন করার মত কঠোর সিদ্ধান্তে না গেলেও বিষয়টি কঠোর পর্যবেক্ষণে রেখেছ বাংলাদেশ সরকার।

এ বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়বস্তু হতে চাই না। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্বার্থে যেটুকু ধৈর্য ধারণ করা দরকার, আমরা তা করব। আমরা ধৈর্য সহকারে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করব।

পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার মত পরিকল্পনা এ মুহূর্তে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিষয়ে অভিন্ন কিছু স্বার্থ আছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা উচিত কি না, তা নিয়ে সংসদে আলোচনার কথা উঠেছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার সংসদের কাছে দায়বদ্ধ। তাই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সংসদে আলোচনা হতেই পারে। তবে আমরা কী করব সেটা সময়ই বলে দেবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে কেউ যদি অগ্রহণযোগ্য অবস্থান নিয়ে থাকে, কোনো ব্যক্তি বা স্বার্থান্বেষী মহলের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কেউ যদি ইতিহাসকে ৪৪ বছর পরে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা করে, তা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না। সে ক্ষেত্রে সংসদে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ’

বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের এ ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, এর আগে বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তান কেন আর কোন দেশ এভাবে বিনা কারণে কোনো কূটনীতিককে ফেরত পাঠিয়েছে- এমন রেকর্ড নেই। বাংলাদেশ নির্দিষ্ট কারণে তাদের একজন দ্বিতীয় সচিবকে প্রত্যাহার করতে বলে। সেখানে পাকিস্তান আমাদের একজন সিনিয়র কূটনীতিককে অকারণে দেশে ফেরত পাঠাতে বলে। বিষয়টি কোনভাবেই অবহেলা না করে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

কূটনৈতিক ইস্যু নিয়ে বিতর্ক শুরুর আগে গত ২২ নভেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী বদর প্রধান আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকরের পর 'উদ্বেগ' প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় পাকিস্তান।

অভ্যন্তরীণ ও স্পর্শকাতর এই বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের এই অযাচিত হস্তক্ষেপ ভালভাবে নেয়নি বাংলাদেশ। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনারকে  ডেকে এর প্রতিবাদ জানানো হয়। গণজাগরণমঞ্চসহ দেশের কয়েকটি সংগঠন ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করে। এরই সূত্র ধরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে (১৪ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক ছিন্ন ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।

এবার পাকিস্তানি বাহিনীর আরেক দোসর জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের চূড়ান্ত রায়ের আগের দিন বাংলাদেশি কূটনীতিককে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানায় পাকিস্তান। যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করছে বলেই অভিমত বিশ্লেষকদের।

** পর্তুগালে পৌঁছেছেন কূটনীতিক মৌসুমী রহমান
** বাংলাদেশি কূটনীতিককে ফেরত নিতে বলছে পাকিস্তান

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৬
জেপি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।