ঢাকা, বুধবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফিরে দেখা-২০১৫

আলোচনায় ছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন

তাবারুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
আলোচনায় ছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছবি: ফাইল ফটো

ঢাকা: বিদায়ী বছরের শুরুতে ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে যখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন চলছিল, তখন বিভক্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষণা আসে। এর ফলে সেই আন্দোলন অনেকটা স্থবির হয়ে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়ে ওঠে নগরবাসীর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।


 
পরে ১৮ মার্চ তফসিল ঘোষণা করা হয় মেয়াদ শেষে প্রায় আট বছর ধরে আটকে থাকা ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের। এতে ২৮ এপ্রিল ভোটগ্রহণের ঘোষণা করা হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি জোটের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া না দেওয়া নিয়ে চলে কানাঘুষা।
 
বহু জল্পনা-কল্পনা শেষে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে দুই সিটিতে দু’জনকে সমর্থন দেওয়া হলে বিএনপি থেকেও এ নির্বাচনে যোগদানের বিষয়ে ঘোষণা আসে। আওয়ামী লীগ ঢাকা দক্ষিণে প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন ও উত্তরে ব্যবসায়ী আনিসুল হককে মেয়র পদে সমর্থন দেয়। অন্যদিকে, বিএনপি দক্ষিণে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও উত্তরে দলের নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালকে সমর্থন দেয়।
 
বিভিন্ন মামলার কারণে গ্রেফতার এড়াতে মির্জা আব্বাস আত্মগোপনে থাকায় তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস এ নির্বাচনের প্রচারণা চালিয়ে যান। তখন অন্যান্য প্রার্থীরাও নির্বাচনী এলাকায় জোরেসোরে প্রচারণায় নেমে পড়েন।
 
এ নির্বাচনের প্রচারণা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে অপ্রীতিকর কিছু না ঘটলেও একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ আনেন। এ সময় দীর্ঘ ১৩ বছর পর আবারো স্থানীয় সিটি নির্বাচনের আমেজ দেখতে পান রাজধানীবাসী। পুরো রাজধানীতে মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রচারণার পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে যায়।
 
ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময়সীমায় প্রচারণা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত প্রার্থীদেরকে ভোটারদের দলবেঁধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইতে দেখা যায়। ওই সময় ঢাকা উত্তরের ৩৬টি ওয়ার্ড ও দক্ষিণের ৫৭টি ওয়ার্ডে মেয়র ও কাউন্সিল প্রার্থীরা একযোগে নির্বাচন প্রচারণায় মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও পথসভাসহ অন্যান্য প্রচারণা চালাতে থাকেন।
 
নির্দলীয় এ নির্বাচনে বড় দলের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ছাড়াও জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাসদ, সিপিবিসহ অন্যান্য দল সমর্থিত ও বহু স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র ও কাউন্সিলর পদে অংশ নেন।
 
এরপর আসে ২৮ এপ্রিল ভোটগ্রহণের দিন। সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম ঘণ্টা শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চললেও ৯টার পর থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ আনতে থাকেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।
 
সেদিন ভোট শুরুর চার ঘণ্টার মধ্যে সরকার সমর্থিতদের বিরুদ্ধে ‘ব্যাপক কারচুপির’ অভিযোগ এনে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এ সময় বিএনপি সমর্থিত উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস উপস্থিত ছিলেন।
 
দিনব্যাপী ভোট শেষে রাতে হয় গণনা। এতে বিপুল ভোটে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আনিসুল হক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সাঈদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হন। অপরদিকে, একই দিনে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন মেয়র নির্বাচিত হন।
 
এরপর ৬ মে তিন সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়ররা শপথ নেন। তাদের শপথবাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ১৪ মে থেকে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক দায়িত্ব পালন শুরু করেন। সাঈদ খোকন নগর ভবনে দায়িত্ব পালন শুরু করেন ১৭ মে থেকে।
 
পরে ২৯ জুলাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র হিসেবে আনিসুল হক ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ৬০১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন। এর একদিন পর ৩০ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য ২ হাজার ৮৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র সাঈদ খোকন।
 
পরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় যানজট নিরসনে ২২টি ইউ-লুপ নির্মাণ কাজের শুরু, নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ড উচ্ছেদ, ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, বিভিন্ন সড়কের ওপর থেকে বাজার অপসারণ এবং তেজগাঁও শিল্প এলাকার সড়ক থেকে দীর্ঘদিনের ট্রাক টার্মিনাল সরিয়ে বেশ আলোচনায় আসেন মেয়র আনিসুল হক।
 
কিন্তু এদিক থেকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে মেয়র সাঈদ খোকনের কাজের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
টিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।