ঢাকা: অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রত্যাহার করা বাংলাদেশের হাইকমিশনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী শিগগিরই দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেনাবাহিনীতে থেকেই চাকরির মেয়াদ শেষ করতে চান তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা থেকে শুক্রবার বিকেলে টেলিফোনে বাংলানিউজকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের প্রভাবশালী এই সেনা কর্মকর্তা।
শুক্রবারই সশস্ত্রবাহিনীতে ফিরে যাওয়ার আদেশের কপি হাতে পেয়েছেন জানিয়ে লে. জে. মাসুদ বলেন, ‘আজই সশস্ত্র বাহিনীতে ফিরে যাওয়ার আদেশের কপি পেয়েছি। এখান থেকে চলে যেতেও তো কিছু গোছগাছের ব্যাপার আছে। এরপরই দেশে ফেরার পালা। ’
তবে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে না ফিরে আমেরিকা কিংবা কানাডা যেতে পারেন, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবর প্রসঙ্গে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে লে. জে. মাসুদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন তো সরকারের চাকরি করলাম। এ মাসেই চাকরির বয়সসীমাও পেরিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ২০/২৫টি দেশ ঘুরেছি। এখন আমেরিকা বা কানাডা তো যেতেই পারি। ’
উল্লেখ্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় তিন বছর প্রেষণে হাইকমিশনারের চাকরিতে থাকার পর গত বুধবার তাকে সশস্ত্র বাহিনীতে প্রত্যাবর্তন করার আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
মঈন-ফখরুদ্দীনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে আনতে এবং ২০০৭ ও ২০০৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত রাজনীতিক-ব্যবসায়ীসহ সমাজের বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিদের চাপে ফেলতে জেনারেল মাসুদ অন্যতম কুশীলব ছিলেন বলেই মনে করা হয়।
হাইকমিশনারের চাকরির মেয়াদ শেষে সশস্ত্র বাহিনীতে প্রত্যর্পনের আদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ মাসেই (২৯ জুন) আমার বয়স ৫৭ হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই আমি এলপিআরে চলে যাচ্ছি। ’
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমত, আমি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আমার কর্মজীবন শেষ করে অবসরে যেতে পারছি। ’
জেনারেল মাসুদ আরও বলেন, ‘চাকরি শুরু করেছিলাম সেনাবাহিনীতে, আবার সেখান থেকেই অবসরে যাচ্ছি। ’
সরকারের কোনও পদ বা চুক্তিভিত্তিক কোনও দায়িত্বে যেতে এখন আপাতত কোনও ইচ্ছা তার নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিক্ষোভের কারণে মঈন-ফখরুদ্দিনকে সংসদীয় কমিটির সামনে তলব ও বিচারের মুখোমুখি করার কথা উল্লেখ করলে মাসুদ উদ্দিন বলেন, ‘আমাকে ডাকা হয়নি। কেনই বা হবে! আমি তো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আশেপাশে ছিলাম না। ’
‘দেশে কবে ফিরছেন’, জানতে চাইলে বিদায়ী হাইকমিশনার মাসুদ উদ্দিন বলেন, ‘কেবল তো চিঠি পেলাম। ঢাকায় তো শুক্র-শনি দু’দিন সাপ্তাহিক ছুটি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বন্ধ। তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখি। এরপরই যাওয়ার দিনক্ষণের ব্যাপার আসবে। তবে শিগগিরই দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ’
আমেরিকা বা কানাডার ভিসা সংগ্রহের খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জবাব এড়িয়ে যান।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বলেন, ‘কেন দেশে যাবো না! দেশে না যাওয়ার তো কোনও কারণ নেই। যারা বলছেন, দেশে যাবো না, তারা আসলে কি তথ্যের ভিত্তিতে বলছেন তা আমার জানা নেই। ’
দেশে না ফেরার বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে জেনারেল মাসুদ বলেন, ‘আমার দেশে না ফেরার কথাটি রিউমার (গুজব)। ’
অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা প্রসঙ্গে হাই কমিশনার মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘অনেক দায়িত্ব। লট অব চ্যালেঞ্জেস’।
‘চ্যালেঞ্জ কতটুকু পালন করতে পেরেছেন’, প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর মাসুদের ‘এর মূল্যায়ন তো আমি করতে পারবো না। ’
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে কাজ শুরু করেন লে. জে. মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।
১৯৫৪ সালের ৩০ জুন ফেনী জেলায় জš§গ্রহণকারী মাসুদ ১৯৭৫ সালের ১ মে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ওয়ান ইলেভেন খ্যাত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় সাভারের নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ছিলেন মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দিন।
ওই বছরই লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশের দুর্নীতি-অনিয়ম দূর করার অভিযানের জন্য গঠন করা ‘গুরুতর অপরাধ দমন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’র প্রধান সমন্বয়ক নিযুক্ত করা হয় এই জেনারেল মাসুদকে।
প্রায় বছরখানেক অভিযান চালানো হয় মাসুদের নেতৃত্বে। তবে এরপর ‘ভেতরের নানা ঘটনার’ ধারাবাহিকতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারই তাকে সাইডলাইনে পাঠিয়ে দেয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আমলের শেষ দিকে এসে হঠাৎ করেই অপাংক্তেয় হয়ে পড়েন জেনারেল মাসুদ। অল্প সময়ের মধ্যে তাকে নানা স্থানে বদলি করা হতে থাকে, কেড়ে নেওয়া হয় ক্ষমতাও।
২০০৮ সালের জুন মাসের ২ তারিখে তাকে সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার থেকে বদলি করে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট নিয়োগ করা হয়। সেইসঙ্গে টাস্কফোর্সের প্রধান সমন্বয়কারীর পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এর এক সপ্তাহের মধ্যে ৮ জুন তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। এরপর ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর মাসুদকে অস্ট্রেলিয়ার হ্ইাকমিশনার নিয়োগের আদেশ জারি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১১