ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কক্সবাজার ও বান্দরবানে পাহাড় ধসে ৬ সেনাসদস্যসহ ৫০ জনের মৃত্যু

আরো মৃত্যুর আশংকা, অনেক স্থানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, উদ্ধারকাজ ব্যাহত

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১০

ঢাকা: গত দুই দিনের টানা বর্ষণে কক্সবাজার শহর, সীমান্ত উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড় ধসে সেনা সদস্যসহ অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আরো মৃত্যুর আশংকা করছে স্থানীয় প্রশাসন।

পাহাড়ি ঢলের কারণে অনেক এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে  পড়েছে। এর সঙ্গে খারাপ আবহাওয়া যোগ হওযায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে , তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না পূর্ণাঙ্গ তথ্য।

মৃতদের মধ্যে রয়েছেন টেকনাফে একই পরিবারের ৫জনসহ মোট ৩৪ জন, উখিয়ার একই পরিবারের ৫ জনসহ ৬জন ও হিমছড়িতে মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণে নিয়োজিত ৬ সেনা সদস্য ও নাইখ্যংছড়ির একই পরিবারের ৪ জন।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, কক্সবাজার শহর ছাড়াও উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতেরবিল, টেকনাফের পুরান পল্লান পাড়া, হিমছড়ি, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লেঙ্গুরবিল, আমতলী, কেরুনতলী, লাতুড়ি কলা, পানখালীর লেচুয়াপ্রাং এবং হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম সিকদার পাড়ায় ধসে যাওয়া মাটি চাপা পড়ে এসব মানুষ মারা যান।

এছাড়া বান্দরবান জেলার নাই্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ভাজাবুনিয়া এলাকায় আজ মঙ্গলবার গভীর পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।

এদিকে, প্রবল বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢলে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় এর আগের ২৭ ঘণ্টায় ২৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মাত্র ৩ ঘণ্টায় ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। কক্সবাজারে এখনো বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।

রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহজাহান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, সেনাবাহিনীর ১৭ ইসিবি’র (ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন) ৮ সদস্য পর্যটন স্পট হিমছড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়েন। এদের মধ্যে দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

ওসি শাহজাহান বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এক সেনা সদস্যের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও ৫  এখনো উদ্ধার করা যায় নি। ’

এরা সবাই মারা গেছেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সাইদুল হক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, ৬২ জন সেনা সদস্য হিমছড়ি ক্যাম্পে থাকতেন। তাদের মধ্যে ৬ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ’

১৭ ইসিবির সিও (কমান্ডিং অফিসার) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মামুন টেলিফোনে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘মঙ্গলবার ভোরের ভূমিধসে  জনবল ও সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধার কাজ চলছে। ’ তবে তিনি হতাহতের বিষয়ে এখনই কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএমএম নাজিম উদ্দিন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, উপজেলা পরিষদের পশ্চিমে পুরান পল্লান পাড়ায় মঙ্গলবার ভোরে পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। লাশগুলো উদ্ধার করে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে রাখা হয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের পশ্চিমে পুরান পল্লান পাড়ায় পাহাড় ধসে ৫টি শিশুসহ ৩ পরিবারের ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন মোহাম্মদ হাশিমের দুই ছেলে-মেয়ে কুলসুমা (৭) ও নুর কলিম (৩), আবদুল জলিলের পরিবারের আবদুল জলিল (৩৫), তার স্ত্রী শাহিনা আকতার (৩০), তিন ছেলে মেয়ে আবদুর রাজ্জাক (১১), শিউলি (৮) ও ডলি (৫) এবং মোহাম্মদ শফির এক বছর বয়সী শিশুপুত্র।

এছাড়াও মাটিচাপা পড়ে একই এলাকায় আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ইউএনও নাজিম উদ্দিন আশংকা করছেন। তবে নিহতদের কারো পরিচয়ই এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তিনি বলেন, ‘রাতভর প্রবল বৃষ্টিপাতে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের বিভিন্ন স্থান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ রুটে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ’

অপরদিকে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাজহারুল আনোয়ার চৌধুরী সিফাত বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, ইউনিয়নের রহমতের বিল এলাকায় পাহাড় ধসে ৩টি শিশুসহ একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন, জয়নাল আবেদীন (৩৫), তার স্ত্রী রাহেলা ইয়াছমিন ডেইজি (২৫) এবং তাদের তিন ছেলে-মেয়ে আরমান (৭), উম্মে হাবিবা (৫) ও আড়াই বছর বয়সী মোহাম্মদ সোহান।

এছাড়া মোহাম্মদ হাশিমের স্ত্রী বেলুজা খাতুন (২৮) ও মেয়ে হালিমা খাতুনকে (৫) আহত অবস্থায় উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

একই ইউনিয়নের বদু ঘোনায় গুরা মিয়ার ছেলে (৩২) পাহাড় ধসে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে সেখানকার সূত্র।

অপরদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, ইউনিয়নের লেঙ্গুরবিল, আমতলী, কেরুনতলী, লাতুড়িকলা ও পানখালীর লেচুয়াপ্রাং এলাকা থেকে পাহাড় ধসে মৃত ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরো লাশ মাটি চাপা পড়ে আছে।

তিনি অবশ্য মৃত কারো পরিচয় জানাতে পারেননি।

হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারী বলেন, ‘সরাসরি পাহাড় চাপা পড়ে সবার মৃত্যু হয়নি। এই এলাকায় দূরের পাহাড় ধসে তার মাটি বাড়িতে ঢুকে পড়ে। অনেকেই সেই মাটিতে চাপা পড়েছেন। ’
 
তিনি জানান, এখনো অনেক মানুষ মাটি চাপা পড়ে আছেন। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

তবে স্থানীয় সংবাদ কর্মীরা ২০টি লাশ উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন।

টেকনাফ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইউনুছ বাঙ্গালী জানান, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম সিকদারপাড়ায় একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন নুর মোহাম্মদ (৪৫), তার স্ত্রী লায়লা বেগম (৪০), তাদের দুই ছেলে মেয়ে নাসিমা আকতার (৫) ও ৯ মাস বয়সি নুরুল আবছার।  

উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল আনোয়ার জানান, পুরো ইউনিয়নের ২৭টি গ্রামের মধ্যে ১৯টি গ্রামই পানিতে ডুবে গেছে। এতে চিংড়ি ঘেরের অন্তত ১০ কোটি টাকার চিংড়ি ভেসে গেছে।

এদিকে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি’র বান্দরবান প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার নাই্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ভাজাবুনিয়া এলাকায় মঙ্গলবার ভোররাতে পাহাড় ধসে একই পরিবারের খাইরুল বশর (২৫), সাজেদা বেগম (২২) এবং তাদের শিশু সন্তান সাকিব (৫), শাকেরা (২) মারা যায়। এ ঘটনায় আহত ৩ জনকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার সময় তারা সবাই গভীর ঘুমে ছিলেন। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণের ফলে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে এই ধসের ঘটনা ঘটে বলে জানান স্থানীয়রা। উপজেলার প্রধান সড়কের বিভিন্ন স্থান পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হবার কারণে এ রুটে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। যে কোন সময় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছন্ন্ হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ১৫ জুন ২০১০
প্রতিনিধি/আরআর/একে/এমএমকে/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।