ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মৃত মানুষ জীবিত করার চেষ্টা, ভণ্ড পীর গ্রেপ্তার

কলাপাড়া প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১১
মৃত মানুষ জীবিত করার চেষ্টা, ভণ্ড পীর গ্রেপ্তার

পটুয়াখালী: মানুষ মারা যাওয়ার পর জীবিত হওয়ার ঘটনা ঘটে কল্পবিজ্ঞান বা রূপকাহিনীতে। বাস্তবে এটা অসম্ভব।

তবে বিজ্ঞানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পটুয়াখালীর এক নারী ভণ্ড পীর ঝাড়-ফুঁক দিয়ে মৃত মানুষকে জীবিত করার চেষ্টা করেন। কয়েকদিন আগে এ নিয়ে ঘোষণাও দেন তিনি।

এ ঘোষণার পর দূর-দূরান্তর থেকে ছুটে আসে কৌতুহলী হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু। রোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গোলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা জাকির মুন্সীর স্ত্রী মাসুদা বেগম (৩৬) দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস রোগে ভুগছিলেন। গত সোমবার সকালে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। একইদিন দুপুরে তার মৃতদেহ মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

দাফনের দু’দিন পর অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকালে ওই বাড়ির সামনে হাজির হয় ভণ্ড পীর লাইলী বেগম ও তার দুই সহযোগী। বাড়ির সামনে গিয়ে লাইলি লোকজনকে বলতে থাকে, ‘বান মেরে হত্যা করা হয়েছে মাসুদাকে। সে মরে নাই। ওরে আমি আবার জীবিত করতে পারমু। ’

প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন জানায়, দুপুরে লাইলী ও তার দুই সহযোগী কবরের ওপরের মাটি সরিয়ে দেয়। এরপর লাশের মাথা থেকে কাফনের কাপড় খুলে ফেলে, পানি ছিটিয়ে দেয়। এরপর ভণ্ড পীর ধ্যানে বসেন এবং ঘোষণা দেন, ‘দুই ঘণ্টা পরে লাশ জ্যান্ত হবে। ’

খবরটি মোবাইলের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে সহস্রাধিক উৎসুক মানুষ জড়ো হয় কবরের সামনে। এরই এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজন লাইলী ও তার সহযোগীদের গণধোলাই দিতে শুরু করে। পালিয়ে যায় লাইলীর দুই সহযোগী। পরে পুলিশ এসে লাইলীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।

চাঞ্চল্যকর এ খবর শুনে নীলগঞ্জ থেকে ছুটে আসা বয়োবৃদ্ধ আব্দুল আজিজ বাংলানিউজকে জানান, ‘জীবনে এই প্রথম কোনো লাশ জ্যান্ত করার খবর শুনে ছুটে আইছি। ’

জানা গেছে, ভণ্ড পীর লাইলী বেগম প্রায় তিনমাস আগেই টিয়াখালীর পশ্চিম বাদুড়তলী গ্রামে ঝাড়-ফুঁক দিয়ে ‘চিকিৎসা’ শুরু করে। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর প্রতারণার অভিযোগ এনে লাইলীর স্বামী রাজমিস্ত্রী আবদুল হালিম ভণ্ড পীর ও তার সহযোগী আটজনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।

আদালত কলাপাড়া থানার ওসিকে তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়ার পরও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় মৃত মানুষ জীবিত করার এ অপচেষ্টার ঘটনা ঘটে।

কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল আউয়াল বাংলানিউজকে জানান, ‘ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে লাইলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।