ঢাকা: জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সরকার গঠিত জাতীয় কমিটিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো সহযোগিতাই করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে পাঠ্যপুস্তকে জঙ্গিবাদের কুফল ও নেতিবাচক দিক নিয়ে প্রবন্ধ,নিবন্ধ ও গল্প অর্ন্তভুক্ত করতে জাতীয় কমিটি যে অনুরোধ করেছিল তাতে সাড়া দেয়নি মন্ত্রণালয়।
গত এক বছর তিন মাসে কমিটির চারটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তবে কমিটিকে সহযোগিতা না করার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করে রোববার শিক্ষাসচিব সৈয়দ আতাউর রহমান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘পরবর্তী সভায় যাবো। আমাদের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ’
‘তাগিদপত্র দেওয়া হলেও কোনো প্রতিনিধি না থাকায় এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি’ কমিটির কার্যপত্রের এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, ‘আপনারাতো দেখছি সবকিছু আগেভাগেই জেনে যান। ’
চলতি বছর কোনো শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে জঙ্গি ও জঙ্গিবাদবিরোধী গল্প-প্রবন্ধ অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি। এ বিষয়ে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)র চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মোস্তফা কামালউদ্দিন সোমবার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘আমি এক বছরের বেশি সময় ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছি। এ ধরনের কোনো তাগাদাপত্র পাইনি। আজও সচিব স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে কথা বলেছি। ’
চলতি বছর কোনো শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে জঙ্গিবিরোধী গল্প-প্রবন্ধ অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি ‘এ বিষয়ে পরে কথা বলবো’ বলে জবাব এড়িয়ে যান।
গত ৭ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’র সভায় কমিটির তৃতীয় সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও সম্ভব হলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিাবিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশ বা অনুষ্ঠানের মাধমে জঙ্গিবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এ ছাড়াও প্রতিথযশা শিক্ষাবিদদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের কুফল ও নেতিবাচক দিক নিয়ে প্রবন্ধ, গল্প রচনা করতে হবে। ২০১০ শিক্ষাবর্ষ হতেই এ ধরনের রচনাবলীর গুণগতমান বিবেচনায় বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষা পাঠ্যক্রমে অর্ন্তভুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কোনো অগ্রগতি প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি বলা হয়, সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় কোনো অগ্রগতি জানা যায়নি। আগামী সভায় আবশ্যিকভাবে অর্জিত অগ্রগতি উপস্থাপন করতে হবে।
গত বছরের ২০ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে ১৭ সদস্যের জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও প্রতিকার সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়।
বলা হয়, এই কমিটি জঙ্গিবাদ দমনে গণসচেতনতা সৃষ্টি করবে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে সভাপতি করে গঠিত এ কমিটিতে স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা, আইন, ধর্ম, সমাজকল্যাণ, তথ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে সদস্য করা হয়েছে। এছাড়া আইজিপি, ডিজিএফআই, বিডিআর, আনসার ও ভিডিপি, এনএসআই, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও র্যাবের মহাপরিচালক এবং অতিরিক্ত আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ কমিটির সদস্য।
প্রসঙ্গত, কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালের ১২ মে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। এরপর ওই বছরের ১১ আগষ্ট কমিটির দ্বিতীয় সভা ৫ নভেম্বর তৃতীয় সভাটি অনুষ্টিত হয়।
সর্বশেষ গত ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় কমিটির চতুর্থ সভা। আগামীকালের নির্ধারিত সভাটি গত ১০ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
বাংলাদেশের স্থানীয় সময় ১৮৪৭ ঘন্টা, ২ আগষ্ট,২০১০