ঢাকা: জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ২০১৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।
রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও এলজিইডি ভবনে জাতিসংঘ বৈশ্বিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন -২০১১ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বজ্রপাতে নিহতদের ত্রাণ সাহায্য দেওয়া হবে বলে জানান খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ছায়েদুল হক।
আর আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন তৈরির চেষ্টা চলছে বলে জানান জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী।
এর আগে বৈশ্বিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন ২০১১-এর মোড়ক উন্মোচন করেন খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী ড: আবদুর রাজ্জাক।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বৈশ্বিক ঝুঁকির ০ থেকে ১০ মাত্রার মধ্যে ৯ মাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। ২০১০ সালের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দুর্যোগ প্রতিবেদনের মধ্যে শীর্ষ ১০ টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের জনসংখ্যা, অর্থনীতি, দারিদ্র, মানব উন্নয়ণ, প্রযুক্তির ব্যবহার, পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও ঝুঁকির ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা ও ইউনিসেফসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় তৈরি এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উপকূলীয় এ এলাকায় প্রতিরোধ বাঁধ নির্মাণ ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে দুর্যোগের ঝুঁকি থেকে মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব।
ড. আব্দুর রাজ্জাক তার বক্তৃতায় দেশের উন্নয়নের অংশীদার সকল প্রতিষ্ঠানকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক অভিযোজনে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
দুর্যোগে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য ইতিমধ্যে কন্টিনজেন্সি প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধারকাজ ত্বরান্বিত করতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মাধ্যমে ইতিমধ্যে স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করেছে। দুর্যোগ ঝুঁকি ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যাবলী মোকাবেলা ও হ্রাসে সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। ’
কমপ্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের সহযোগিতায় দুর্যোগ ও ত্রাণ বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ছায়েদুল হক এমপি।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী ও জাতিসংঘের রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর নীল ওয়াকার, বৈশ্বিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনের সমন্বয়কারী অ্যান্ড্রু ম্যাসক্রে, ইউএনআইএসডিআর এর এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধি মাধবী আরিয়াবন্ধু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর মহাপরিচালক আহাসান জাকির প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম।
মোহাম্মদ ছায়েদুল হক বলেন, গত কয়েকদিনে বজ্রপাতে বেশ কিছু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
বজ্রপাতে মৃত্যুবরণকারীর পরিবারকে সরকারি ত্রাণ দেওয়া হবে। বজ্রপাতও প্রাকৃতিক দুর্যোগে। তাই বজ্রপাতে যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারকে রিলিফ দেওয়া হবে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ বলা হয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় পেশাদারিত্ব সৃষ্টি, ঝুঁকি হ্রাস, আগাম সতর্কবার্তা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় সামাজিক অভিযোজন ও সামাজিক প্রতিরোধমূলক সক্ষমতা অর্জনের ওপর সরকার অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবেলায় আরো অনেক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এগুলোর মধ্যে বাঁধ নির্মাণ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, গবাদি পশু রক্ষায় মাটির কেল্লা নির্মাণ, জনসচেতনতা সৃষ্টি ইত্যাদি রয়েছে।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবেলায় সমন্বয়হীনতায় কাজে সমস্যা হয়। দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের নীতি প্রণয়নকারীদের আরো সচেতন হতে হবে। এজন্য কর্মকর্তদেরও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। ’
তিনি বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলের পাশাপাশি ঢাকা মহনগরীও দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। আমরা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১১