ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নজরুল আমাদের বড়ই আপন : রাষ্ট্রপতি

জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১১
নজরুল আমাদের বড়ই আপন : রাষ্ট্রপতি

ময়মনসিংহ: রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বলেছেন, জাতীয় কবি নজরুল আমাদের বড়ই আপন। তিনি বাংলাদেশের জনগণের চিন্তা-চেতনা ও আনন্দ-বেদনার সাথী।

বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য ও বাংলা সংস্কৃতির এক প্রধান কর্ণধার। তার আবির্ভাব বাংলা সাহিত্যের দেহে ও প্রাণে সঞ্চার করেছে তারুণ্যের বিপুল ঐশ্বর্য। তার অগ্নিঝরা লেখনী থেকে বেরিয়ে এসেছে মানবিক মূল্যবোধ, সমাজ পরিবর্তনের দর্শন, অন্যায়ের প্রতিবাদ ও আতœনিয়ন্ত্রণ অধিকারের চেতনা। তার সৃষ্টি আমাদের জাতির ঐতিহ্যেও অঙ্গ। ’
 
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ময়মনসিংহের ত্রিশালে দরিরামপুর নজরুল একাডেমি মঞ্চে শুরু হয়েছে কবি নজরুলের ১১২তম জন্মবার্ষিকীর তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠান। এরই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।

তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন, স্থানীয় সাংসদ অ্যাডভোকেট রেজা আলী।
 
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সুরাইয়া বেগম এনডিসি।

নজরুল স্মারক বক্তৃতা করেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক লোকমান হোসেন মিয়া।
 
এর আগে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছেন। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তিনদিনব্যাপী নজরুল জন্মোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
 
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে নজরুলের গান ও কবিতা মুক্তিযোদ্ধাসহ গোটা বাঙালি সমাজকে করেছে উজ্জীবিত। যুগিয়েছে অফুরন্ত প্রেরণা। ১৯২১ সালে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা নিয়ে নজরুলের আবির্ভাবের পর বাংলা কাব্য ও ছন্দের জগতে নতুন একটি ধারার প্রবর্তন ঘটে। যা অপরাপর কবি সাহিত্যিকদের কাব্যধারা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের। তার আবির্ভাবটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে সচকিত করেছিল। ’
 
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ সাহিত্যের উপাদান ও উপজীব্য হিসেবে দারিদ্র্য, অবহেলা ও বঞ্চনাকেই গ্রহণ করেছিলেন নজরুল। সমাজের বিরাজমান অন্যায় ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই তিনি বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। তাই দ্রোহ, প্রেম, মানবতা ও সৌন্দর্য্যের সম্মিলন ঘটিয়েছিলেন তার সৃষ্টিতে। পরাধীন দেশে সাধারণ মানুষকে তিনি দারিদ্র্য ও পরাধীনতা থেকে মুক্তির গান শুনিয়েছেন। ’
 
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নজরুলের গানের শিল্পগুণ, সুর, মাধুর্য ও গায়কি ঢং অন্যান্য গানের চেয়ে সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্বে ভরপুর। বাণীর ঐন্দ্রজালিক সমন্বয়ে রচিত গানগুলো অতিমাত্রায় উচ্চমার্গীয়। গানের ভাষা, প্রকরণ শৈলী ও সুর অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। তার গানের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। আধুনিক বাংলা কাব্যের ইতিহাসে তিনি একমাত্র কবি, যিনি সমান দক্ষতায় হিন্দু-মুসলমান উভয় ঐতিহ্যকে আপন কাব্যে রূপায়িত করেছেন। ’
 
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘নজরুলের ‘বাঙালির বাংলা’ শীর্ষক প্রবন্ধটি প্রমাণ করে তিনি কেবল মহান কবিই নন, বরং দূরদর্শী এক রাজনীতিবিদ ও দার্শনিকও বটে। ’
 
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বলেন, ‘নজরুল এখন থেকে প্রায় এক শতাব্দী আগে পরাধীন সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্য লক্ষ্য করেছেন। তিনি প্রশ্ন করেন, জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের যুগে একটি স্বাধীন দেশে এখনও কী নারীরা সমান অধিকার বা মর্যাদা ভোগের সুযোগ পাচ্ছেন? আর নারীর অধিকার কিছুটা সমুন্নত করতে উদ্যোগী হলে আজো এ দেশে প্রবল বাধা বিপত্তির মোকাবেলা করতে হয়। তবে যত বাধাই আসুক বাংলাদেশে নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা বদ্ধপরিকর। ’

পরে বিভিন্ন শিল্পীদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান।

বাংলাদেশ সময় : ১৩৪১ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।