ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আইজিপির কাছে রুট পারমিট বাতিলের চিঠি

ভাড়া-নৈরাজ্য ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে

মুরসালিন হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০১ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১১
ভাড়া-নৈরাজ্য ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে

ঢাকা: ভাড়া-নৈরাজ্য থেকে যাত্রীদের মুক্তি দিতে রাজধানীর রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)।

শনিবার এরকম দু’টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পাঁচটি গাড়ি থেকে ৬ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে।

ডাম্পিং স্টেশনে পাঠিয়েছে নয়টি গাড়ি।

এ নিয়ে গত বুধবার শুরু হওয়া অভিযানে ২২টি বাস জব্দ করা ছাড়াও প্রায় ৭০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করলেন ভাম্যামাণ আদালত।

এছাড়া সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী যানবাহনের রুট পারমিট বাতিলের জন্য এরই মধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)।

প্রসঙ্গত, রুপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম বাড়ানোর পর থেকেই বাসের চালক ও শ্রমিকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি আদায় করা হচ্ছে নগরীর সব রুটেই। এক্ষেত্রে যাত্রীদের ওজর-আপত্তি কানেই তুলছে না পরিবহন শ্রমিকরা। এ পরিস্থিতিতে পরিবহনে শৃংখলা ফেরানোর পাশাপাশি জিম্মিদশা থেকে যাত্রীদের মুক্তি দিতে বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীজুড়ে ভাড়া আদায়ে বাস শ্রমিকদের নৈরাজ্য ঠেকাতে গত বুধবার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে।

শনিবার নগরীর শাহবাগ ও কাটাবন মসজিদের মধ্যবর্তী বাস কাউন্টারগুলোতে এমন অভিযান পরিচালনা করেন বিআরটিএ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তোফায়েল ইসলাম।

বাংলানিউজকে তিনি জানান, সকাল সাড়ে এগারোটায় শুরু হয়ে তার আদালত বিকেল তিনটা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেন।

তিনি জানান, এসময়ের মধ্যে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী সাত পরিবহনের সাতটি গাড়ি ডাম্পিং স্টেশনে পাঠানো হয়।

গাড়ীগুলো হল- ফাল্গুন পরিবহন, মিডওয়ে পরিবহন, শতাব্দী পরিবহন, এটিসিএল পরিবহন, বাহন পরিবহন, তরঙ্গ প্লাস ও  রঙধনু পরিবহন।

ম্যাজিস্ট্রেট তোফায়েল ইসলাম আরও জানান, এ সড়কে চলাচলকারী মাই লাইন ও মেগাসিটি নামে আরো দু’টি পরিবহনের দু’টি বাসকে জাল লাইসেন্স ও নকল রুট পারমিট বহন এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে সর্বমোট দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজাইল করিম আদালত পরিচালনা করেন গুলশান এলাকায়। ওই এলাকায় চলাচলকারী বলাকা ও প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের একটি করে বাসকে ডাম্পিং স্টেশনে পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি।

ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, শনিবার সকালে গুলশানে স্থাপিত ভ্রাম্যমাণ আদালত মোট আটটি বাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও সর্বমোট চার হাজার সাতশ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

দুর্ভোগ সত্ত্বেও স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা আমজনতার

শাহবাগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার সময় দুর্ভোগ বাড়ছিলো সাধারণ মানুষের। কিন্তু সেই ভোগান্তিতেও যেন খুশি সবাই। বাসের জন্য অপেক্ষারত সকলকেই ভ্রাম্যামাণ আদালতকে সাধুবাদ জানাতে দেখা গেলো।

জনসমর্থন ও প্রত্যাশা নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট তোফায়েল ইসলামের নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা বাস থামিয়ে যাত্রীদের কাছে ভাড়া সম্পর্কে জানতে চাইলেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সাথে সাথেই অভিযুক্ত বাসের বিরুদ্ধে নেওয়া হলো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

এ সময় সাধারণ জনতা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে রাজধানীর অন্যান্য রুটের বাসগুলোর ভাড়া-নৈরাজ্য প্রতিরোধেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানালেন।

যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘জুরাইন থেকে আব্দুল্লাহপুর রুটে চলাচলকারী সালসাবিল পরিবহন ও যাত্রাবাড়ী থেকে আব্দুল্লাহপুর রুটে চলাচলকারী অনাবিল পরিবহন তাদের প্রতিটি স্টপেজে আগের চেয়ে পাঁচ থেকে দশ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে।

শাহবাগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে দাড়িয়ে থাকা আব্দুল মালেকের মত আরও অনেকে বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায়ের অভিযোগ জানাতে থাকেন।

তবে এর মাঝেও অসন্তুষ্ট ছিলেন জরুরি পরিস্থিতিতে গাড়ী না পাওয়া দু’একজন যাত্রী। এমনই একজন হলেন মিরপুরের বাসিন্দা আসলাম শেখ।

ক্ষোভের সুরে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘পিজি হাসপাতালে অসুস্থ পিতাকে ডাক্তার দেখিয়ে মাই লাইন বাসে করে মিরপুর যাচ্ছিলাম। মোবাইল কোর্টের কারণে এখন আর বাস পাওয়া যাচ্ছে না। বাসগুলোকে এভাবে শাস্তি না দিয়ে অন্য কোন ব্যবস্থা নিলে যাত্রীদের দুর্ভোগ হত না। ’

এসব অভিযোগ যাচাই করে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সহযোগিতার জন্য সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ জানান ম্যাজিস্ট্রেট তোফায়েল ইসলাম।

এ সময় বিআরটিএ এর জনবল স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে বিআরটিএ এর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত বুধবার। এ পর্যন্ত সাকুল্যে দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পরিচালনা করছেন।

সবার অভিযোগের পরিপ্র্রেক্ষিতে রাজধানীর সব রুটে আদালত বসানো না গেলেও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আদালত থাকবে বলেও জানান তিনি।

তবুও কমে না ভাড়া-নৈরাজ্য

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০৯ সালের জুলাই থেকে চলতি মে মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে সাড়ে ১৬ হাজারেরও বেশি মামলা করেছে বিআরটিএ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এসব মামলায় প্রায় দেড় কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক যানবাহন। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে প্রায় দুইশ’ জনকে। কিন্তু এর পরও রাজধানীতে বাস মালিকদের ভাড়া-নৈরাজ্য বন্ধ করা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএ এর একাধিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাস মালিক ও চালকরা যাত্রীদের কাছে যে হারে ভাড়া নেন, সে তুলনায় জরিমানা কিছুই না। সে জন্য বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ হয় না। ’

রাজধানীতে গত সপ্তাহে শুরু হওয়া ভাড়া-নৈরাজ্য ঠেকাতে গত সোমবার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাড়তি ভাড়া আদায়কারী যানের রুট পারমিট বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ এর চেয়ারম্যান আয়ুবুর রহমান খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তিন দিনে এ ২২টি  বাস জব্দ করা হয়েছে। জরিমানা আদায় হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। ’

ম্যাজিস্ট্রেট তোফায়েল ইসলাম জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত বাড়তি ভাড়া আদায়কারী বাসের রুট পারমিট তাৎক্ষণিকভাবে জব্দ করে। এরপর রুট পারমিট বাতিলের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষ দেখে থাকেন।

রুট পারমিট বাতিলের ব্যাপারে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারের দপ্তরে কমিশনারের নেতৃত্বে একটি করে কমিটি যানবাহনের রুট পারমিট দেয়। ওই কমিটিতে বিআরটিএ এর প্রতিনিধিও থাকেন। ’

‘সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী যানবাহনের রুট পারমিট বাতিলের জন্য এরই মধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে’ বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad