ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল শুরু, দুর্ঘটনায় যুবক নিহত

জাহিদুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১০
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল শুরু, দুর্ঘটনায় যুবক নিহত

সাভার: শ্রমিক অবরোধে ঘণ্টা দুয়েক বন্ধ থাকার পর আশুলিয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহসড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে। তবে এর কিছুক্ষণের মধ্যে ম্যাক্সি চাপায় নিহত হন রাজু (২৫) নামে এক যুবক।


   
সাভার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মনোয়ার হোসেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, নবীনগরগামী ওই ম্যাক্সি চাপায় নিহত যুবকের বাড়ি যশোরের নূরপুর গ্রামে।

এর আগে দ্বিতীয় দিনের মতো রোববার সকালে আশুলিয়া ও সাভারে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ সময় আহত হন পুলিশসহ অর্ধশতাধিক।

শ্রমিকরা আশুলিয়ার আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়ক ও সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক বেশ কিছু সময়ের জন্যে অবরোধ করে।

সংঘাতময় পরিস্থিতিতে এ এলাকার আড়াইশ’র বেশি তৈরি পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপ। এ ছাড়া শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে আশুলিয়ার তিনটি কারখানা।

অন্যদিকে, সহিংসতার ঘটনায় ৩৬ শ’ শ্রমিককে আসামি করে মামলা হয়েছে।

প্রত্যদর্শীরা বলেছে, রোববার সকালে জামগড়া এলাকায় বিজিএমইএর সভাপতি সালাম মুর্শেদির মালিকানাধীন এনভয় গ্রুপ ও পলমল গ্রুপের শ্রমিকরা দাবি আদায়ে কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে দুটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপ। এ সময় শ্র্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কে অবস্থান করে। পুলিশ এতে বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই হামিম গ্রুপ, নাসা গ্রুপ ও অনন্ত গার্মেন্টস ছাড়া সবকটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হলে প্রায় ২০ হাজারের মতো শ্রমিক নেমে আসে রাস্তায়। অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তারাও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় গোটা এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্র।

এ সময় শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে জলকামানের পাশাপাশি সাঁজায়ো যান থেকে টিয়ার গ্যাস ও ফাকাঁ গুলি বর্ষণ করতে দেখা গেছে। জবাবে শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এছাড়া রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ব্যারিকেডও দেয় তারা। এতে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দু’পাশের দোকানপাট, ব্যাংকসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনায় হামলা চালায়।

ওদিকে, প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের কারণে বিনোদন নগরী ফ্যান্টাসি কিংডমের দর্শনার্থীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

বেলা ১১ টার দিকে পুলিশ ধাওয়া করে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।

সহিংসতার জেরে ৩ কারখানা বন্ধ

শনিবারের সহিংসতার জের ধরে অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জামগড়ায় রেওন কমপ্লেক্সের শেড ফ্যাশন, শেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, পিঅ্যান্ডও অ্যাটায়ারস লিমিটেড নামের তিনটি তৈরি পোশাক কারখানা। রোববার সকালে কারখানার মূল ফটকে বন্ধের ঘোষণা সম্বলিত নোটিশ টানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।

৩৬ শ’ শ্রমিককে আসামি করে মামলা

এছাড়া শনিবারের সহিংসতার ঘটনায় ৩ হাজার ৬শ’ শ্রমিকের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।

শেড ফ্যাশনের মহাব্যবস্থাপক অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. শহীদুল্লাহ ও আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক আবিদ হোসেন বাদী হয়ে মামলা দু’টি দায়ের করেন।

আশুলিয়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মোস্তফা কামাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘এরই মধ্যে আটক ১১ শ্রমিককে এ দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ’

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ
 
সাভারের উলাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সকালে এইচ আর টেক্সটাইল এর শ্রমিকরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সাভার থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মাহাবুবুর রহমান জানান, খবর পাওয়ার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে যান চলাচল ফের শুরু হয়।

এসব ব্যাপারে বিজিএমই’র সভাপতি সালাম মুর্শেদি বর্তমান পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক হিসেবে মন্তব্য করে বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাই, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের অনেকের আস্থা নেই। দ্রুত আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে নৈরাজ্যসৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ’

বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত, প্রতিদিন ফ্যাক্টরি খোলা হবে আর ভাঙচুর ও লুটপাটের আতঙ্কে ছুটি দেওয়া হবে এটা চলতে পারে না। যে বেতন বাড়ানো হয়েছে তাই অনেক বেশি। ’

নিরাপত্তা না পেলে কারখানা বন্ধ রাখতে মালিকরা বাধ্য হবে বলেও জানান তিনি।

‘একইসঙ্গে বেতন কাঠামোতে বেতন দেয়াও সম্ভব হবে না’, বলেন সিদ্দিকুর রহমান।

এদিকে, তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সংগঠনের নেতারা বলেছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে গড়িমসি করার কারণেই শ্রমিকরা উত্তেজিত।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক জানান, গার্মেন্টস শিল্পে নৈরাজ্য সৃষ্টির নেপথ্যে এরই মধ্যে পুলিশ ১শ’ মদদদাতাকে চিহ্নিত করেছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

ঘোষিত মজুরি কাঠামোর প্রতিবাদে এবং ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার টাকার দাবিতে শনিবার তিনটি কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তৈরি পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ সাংবাদিকসহ আহত হন দু’শতাধিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।