ঢাকা : বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে সোনার হরিণ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক।
তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সোনার হরিণ।
মঙ্গলবার সকালে সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল’ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) আয়োজিত ‘আইন ও বিচার বিভাগে বাজেট বরাদ্দ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
খায়রুল হক আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে মামলা নিষ্পত্তির হার পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে বেশি। তারপরও আমরা এগোতে পারছি না। কারণ নতুন মামলা কমানো সম্ভব হচ্ছে না। এটা বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে গিয়েও পারিনি। ’
তিনি বলেন, ‘সমস্ত সমাজ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়লে এবং অবক্ষয় ঘটলে বিচার বিভাগ কিভাবে এর বাইরে থাকবে। তারাও তো সমাজেরন অংশ। তবে তারপরও তাদের ওপর অনেক বড় দায়িত্ব। তাই তাদের পেশাজীবনে ত্যাগ তিতিক্ষার দরকার আছে। ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেব গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রমুখ।
বিদায়ী প্রধান বিচারপতি তার বক্তৃতায় আরও বলেন, ‘বিচার বিভাগকে স্বাধীন বলে গণ্য করা হয়। তবে এজন্য দরকার বিচার বিভাগের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ ও লোকবল। এবং বাজেট খরচের স্বাধীনতা। বিচার বিভাগের আর্থিক সক্ষমতা না থাকলে দেশ পিছিয়ে যাবে। ’
আমলাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তারা যদিও অনেক দক্ষ। দেশ চালায়। কিন্তু বিচার বিভাগের সমস্যা তারা উপলব্ধি করতে পারেন না। সামান্য খরচের জন্য মন্ত্রণালয়ে দৌড়াতে হয়। ফলে সময় মতো কাজ হয় না। ‘
তিনি বলেন, ‘দেশে আইন-শৃৃংখলা পরিস্থিতি ঠিক না থাকলে কোনও কিছুই ঠিক থাকবে না। মানুষ নিজেকে নিরাপদ মনে না করলে এবং সঠিক বিচার না পেলে নিজের হাতে আইন তুলে নেবে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দেশের অনেক অগ্রগতি হলেও বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। বিচার বিভাগ লাজুক থাকলে কিছুই হবে না। আর এটাকে কার্যকর করতে সরকার কে ভাবতে হবে। ’
‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য বিচারকদের মানসিকভাবে স্বাধীন হতে হবে’ উল্লেখ কওে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, ‘তারা (বিচারকরা) যদি নিজেদের মানসিকভাবে স্বাধীন মনে না করেন, তবে বিচার বিভাগে স্বাধীনতা আসবে না। তাদের সমস্যা সমাধানে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ’
‘বিচারকদের যাতে কেউ বাজে প্রস্তাব করতে না পারে এমন আচরণ করতে হবে। তাদের শক্ত হতে হবে’ --বলেন তিনি।
‘অনেকে বিচার বিভাগের, বিচারকদের দক্ষতা নিয়ে র প্রশ্ন তোলেন‘ উল্লেখ করে বিদায়ী প্রধান বিচারপতি বলেন,‘ শুধু সমালোচনা করলে হবে না। বিচারকের সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি মামলাও বেড়েছে। বিচার বিভাগের সমস্যা খুজে বের করতে হবে। কেন বিচার বিভাগ ভালো ভাবে কাজ করছে না।
বিচার বিভাগের উন্নয়নে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন বিদায়ী প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আগে বিচারকদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিচারের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এটা অনেক কঠিন কাজ। তাদের প্রয়োজনীয় জনবল নেই। খুনের মামলার রায় দিয়ে তারা রিক্সায় চড়ে ঘরে যান। ‘
বিচারকদের বেতন ভাতাদিও বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বিচারকদের প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সহায়তা দিতে হবে। ’
বিচারক সংকট সমাধানে প্রতি বছর ন্যূনতম হলেও ১০০ থেকে ১৫০ জন বিচারক নিয়োগের পরামর্শ দেন তিনি।
তার মতে, ‘বিচারকদের আরো তদারকির মধ্যে আনতে হবে। এজন্য ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। তখন জেলা আদালতগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে সুপ্রিম কোর্টের জন্য বিষয়টি কষ্টকর। তবে অসম্ভব নয়। ’
বাংলাদেশ সময় : ১৪৫৫ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১১