ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হালদা রক্ষায় মহাপরিকল্পনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৭ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১১
হালদা রক্ষায় মহাপরিকল্পনা
চট্টগ্রাম : দেশে মিঠা পানির মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদী রক্ষায় মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এজন্য কৃষি ও মৎস্য সেক্টরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে হালদা ঘিরে ৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নসহ আরও বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পগুলো হলো- হালদা নদীর ১৩টি সøুইচ গেইট সংস্কার করে মাছের অবাধ বিচরণের উপযোগী করা, হালদা খালের বিভিন্ন অংশ খনন, ভরাট হয়ে যাওয়া হালদার সোনাইমুখ পয়েন্ট পুনরুদ্ধার, নদীতে ১২ কিলোমিটার বাঁক সৃষ্টি এবং নদীর দু’পাড়ে ৮৫ কিলোমিটার করে দুটি সড়ক নির্মাণ। হালদা রক্ষায় নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে- হালদা পাড়ে এশিয়ান পেপার মিলের বর্জ নিঃসরণের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, তিনটি ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া, সাঙ্গু নদীতে চন্দ্রঘোনা পেপার মিলের বর্জ্য নিঃসরণের বিরুদ্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া, কাঁটাখালীতে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য অপসারণ বন্ধ করা এবং এপ্রিল-জুন মাস পর্যন্ত হালদায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা চালানো বন্ধ রাখা। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে হালদা পুনরুদ্ধারে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমিটির উপদেষ্টা এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। বৈঠকে স্থানীয় সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, ‘হালদা নদী রক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বোঝাব, হালদাকে বাঁচাতে হলে এ মুহূর্তে উদ্যোগ নিতে হবে, নয়তো চোখের সামনে এর মৃত্যু দেখতে হবে। ’ তিনি বলেন, ‘হালদা একদিকে কৃষি সেচ, অন্যদিকে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র। আমাদের ভাতেরও প্রয়োজন আছে, আবার মাছের প্রোটিনেরও দরকার আছে। সুতরাং কৃষি ও মাছ এ দুটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। ’ বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংসদ ফজলে করিম হালদা পুনরুদ্ধারে নেওয়া মহাপরিকল্পনার কথা সাংবাদিকদের জানান। সøুইচ গেটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘১৩টি সøুইচ গেটের কাজ আগামী শীত মৌসুমে একসঙ্গে শুরু হবে। এ কাজ বাস্তবায়ন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রাথমিকভাবে প্রতিটি গেট সংস্কারের জন্য এক কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ’ হালদা খননের বিষয়ে সাংসদ বলেন, ‘হালদা নদীর রাউজানের সত্তারঘাট থেকে ফটিকছড়ি পর্যন্ত উজানে খনন করা হবে। একইসঙ্গে যেসব জায়গায় নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে, সেখানে পাথর দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের উদ্যোগ নেওয়া হবে। হালদার গড়দুয়ারা পয়েন্টে ১২ কিলোমিটার বাঁক সৃষ্টি করা হবে। তবে মাছের আশ্রয়স্থল কাটা হবে না। ’ এছাড়া মা মাছের আবাসস্থল সাঙ্গু, শিকলবাহা ও কর্ণফুলী নদীতেও প্রয়োজনীয় খনন করা হবে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থায়নের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সাংসদ ফজলে করিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কী পরিমাণ অর্থ লাগবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগগুলো আগামী ১৫দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে কমিটির হাতে জমা দেবেন। আশা করছি আগামী বাজেটেই প্রয়োজনীয় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নিতে পারব। ’ তিনি আরও বলেন, ‘হালদা নদী পুনরুদ্ধারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। তা পাশ হলে বাকী যে অর্থ লাগবে তা কমিটি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নেবে। এক্ষেত্রে আমার সহযোগিতা থাকবে। ’ আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভাপতি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শামসুল কিবরীয়ার সভাপতিত্বে এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এহছান ইলাহী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আহসান আলী এবং পরিবেশ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। উল্লেখ্য ভরাট, শাখা খাল খনন, ইঞ্জিন নৌকা, অবাধ দূষণ, হ্যাচারি মালিকদের দাপট আর বালি উত্তোলনে ধ্বংসের মুখোমুখি হালদা নদী রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। বাংলাদেশ সময় : ১৪৪০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১১
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ