ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৩২ বছর আগে নেওয়া ঋণ শোধ হয়নি এখনো

ফের বন্ধ হতে বসেছে রাজশাহী টেক্সটাইল মিল

শরীফ সুমন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৩ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১১
ফের বন্ধ হতে বসেছে রাজশাহী টেক্সটাইল মিল

রাজশাহী: ঋণের বোঝা টানতে টানতে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলের অবস্থা এখন শোচনীয়। ৩২ বছর আগে নেওয়া সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের বিপরীতে ইতোমধ্যে তিন কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করেছে মিল কর্তৃপক্ষ।

এপরপরও মিলের কাছে সুদসহ ব্যাংকের পাওনা এখনো প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।

এ অবস্থায় মিলটি নতুন উদ্যমে চালু করতে সরকারের কাছে প্রায় চার কোটি টাকা চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি)।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু এ প্রতিবেদন লেখার দিন পর্যন্ত প্রস্তাবের পক্ষে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ওই অর্থ পেলে প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর দুই কোটির বেশি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়েও রাজশাহী টেক্সটাইল মিলটি চালু রাখতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েই ২০০৩ সালের ৩০ জুন মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই সময় মিলে কর্মরত ৫৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ‘গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের’ মাধ্যমে বিদায় করা হয়। ২০০৪ সালের ২৭ জুলাই দৈনিক মজুরিভিত্তিতে আবারো মিলটি চালু করা হয়। কিন্তু তারপরেও মিলটি চালু রাখতে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। ব্যাংক ঋণ আর সুদ পরিশোধ করতে দিশেহারা মিল কর্তৃপক্ষ ২০০৮ সালের ২৮ অক্টোবর আবারো মিলটি বন্ধ ঘোষণা করে।

ব্যাংক ঋণের বোঝা আর সুতার বাজার অনুকূলে না থাকায় মিলটি ২০০৯ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। ২০১০ সালে আবারো মিলটি চালু করা হয়। এখন মিলটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

রাজশাহী টেক্সটাইল মিল সূত্র জানায়, সচল রাখতে ১৯৭৯ সালে মিলের সম্পদ গচ্ছিত রেখে এক কোটি, সাধারণ ঋণ ৭০ লাখ এবং মেশিন কেনার জন্য ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার ২৮৪ টাকা ঋণ নেওয়া হয়৷

মোট ২ কোটি ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ২৮৪ টাকা ঋণের বিপরীতে এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার ৪৫৩ টাকা পরিশোধ করেছে মিল কর্তৃপক্ষ।

এর মধ্যে মিল কর্তৃপক্ষ সম্পদ গচ্ছিত রেখে নেওয়া এক কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে এক কোটি ৫৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯০৮ টাকা,  সাধারণ ঋণ ৭০ লাখ টাকার বিপরীতে ৬৭ লাখ ৮৫ হাজার ৪৩৭ টাকা আর মেশিন কেনার জন্য নেওয়া ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার ২৮৪ টাকার ঋণের বিপরীতে ৮৪ লাখ ৭৯ হাজার ১০৮ টাকা পরিশোধ করেছে। এখনো মিলটির কাছে ব্যাংকের দাবি অনুযায়ী পাওনা ৫ কোটি ৩০ লাখ ১৬ হাজার টাকা।

অর্থাৎ ৩২ বছরেও মিলটিকে ব্যাংক ঋণ আর সুদের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করা যায়নি।

তবে মিল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের হিসাবে ব্যাংকের পাওনা এক কোটি ২০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। অনারোপিত সুদ ৪ কোটি ৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা ধরে ব্যাংক তাদের পাওনা দাবি করেছে।

ব্যাংক ঋণের বোঝা আর সুতার বাজার অনুকূলে না থাকায় মিলটি ২০০৯ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। ২০১০ সালে আবারো মিলটি চালু করা হয়। এখন মিলটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

এ পরিস্থিতিতে নতুন উদ্যমে কারখানাটি চালু করতে প্রায় চার কোটি টাকা চেয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সরকারের কাছে।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিটিএমসি পরিচালক (পরিচালন) সালাহ্উদ্দিন আকবর স্বাক্ষরিত প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে কারখানাটিতে মাত্র ২০-২৫টি রিং ফ্রেম মেশিন চালু আছে। মিলটিতে এখন ২৫০-৩০০ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছেন।

মিল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ১৯ লাখ কেজি সুতা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মিলের যাত্রা শুরু হয়। দ্বিতীয় দফায় ৯ লাখ ২৮ হাজার কেজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মিলটি চালু করা হলেও বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে এর অর্ধেকেরও কম।

কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ জানায়, ভারতীয় নিম্ন প্রযুক্তির মেশিন হওয়ায় দ্রুত কমে গেছে এর উৎপাদনক্ষমতা। অথচ একই উৎপাদন ব্যয়ে উন্নত প্রযুক্তির মেশিন থেকে একই সময়ে এর দ্বিগুণেরও বেশি সুতা উৎপাদন সম্ভব। ব্যয় অনুপাতে উৎপাদন না হওয়ায় প্রতিনিয়ত লোকসান গুনছে মিলটি।

মিলে প্রতিমাসে এখন লোকসান হচ্ছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। মিল আবার বন্ধ করে দেওয়া হলে লোকসান বেড়ে দাঁড়াবে ৪ লাখ টাকা। বর্তমানে মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া ভর্তুকির টাকায় বেতন দেওয়া হচ্ছে শ্রমিক-কর্মচারীদের।

কিন্তু পুরাতন ৪০টি রিং মেশিনে উন্নত প্রযুক্তির খুচরা যন্ত্রাংশ সংযোজন ও নতুন ৮টি রিং ফ্রেম মেশিন প্রতিস্থাপন করা গেলে বাড়বে এর উৎপাদনক্ষমতা। তখন আরও প্রায় ৫০০ শ্রমিকের কাজের সুযোগ হবে ওই মিলে।

কারখানাটি চালু, উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানো ও উৎপাদিত সুতার গুণগত মান উন্নত করতে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সংযোজনের জন্য প্রায় ৪ কোটি টাকার প্রয়োজন বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।

প্রস্তাবে চায়নার দু’টি কার্ডিং মেশিনের জন্য ৩৪ লাখ ২৪ হাজার, এক সেট ড্রইং ফ্রেম (অটো লেভেলারসহ) কেনার জন্য ৩৮ লাখ টাকা, একটি সিমপ্লেক্সের জন্য ৫১ লাখ ৩৬ হাজার, ৮টি রিং ফ্রেমের জন্য ১ কোটি ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার, পুরাতন মেশিনের খুচরা যন্ত্রাংশ পরিবর্তন বাবদ ৬০ লাখ এবং মেশিনারি স্থাপন ও ফ্লোর মেরামতের জন্য ১৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে।

রাজশাহী টেক্সাইল মিলের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ইসরাইল হোসেন জানান, তাদের দেওয়া প্রস্তাবটি সরকার গ্রহণ করলে কারখানাটি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে৷

তিনি জানান, দেশের অন্য কারখানাগুলোর চেয়ে এ কারখানার মেশিনগুলোর উৎপাদনক্ষমতা অর্ধেকেরও কম। ফলে লোকসান দিতে হয়। আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনে কারখানাটি চালু করলে অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব বলে তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৯৭৭ সালে ২৬ দশমিক ৫৩ একর জমির ওপর মিলটি প্রতিষ্ঠা করতে ব্যয় হয় ১৬ কোটি টাকা। কর্মসংস্থানের সুযোগ হয় ৫৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর।


বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।