ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দাম ১৫ লাখ ও দেড় লাখ!

তক্ষক আর হুতোমের খোঁজে কেশবপুরে তোলপাড়

কেশবপুর সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১১
তক্ষক আর হুতোমের খোঁজে কেশবপুরে তোলপাড়

কেশবপুর (যশোর):  রাতারাতি লাখপতি কোটিপতি হওয়ার হাতছানিতে যশোরের কেশবপুরের মানুষকে। তক্ষক আর হুতোম পেঁচার খোঁজে পড়িমরি ব্যস্ততা।

  দিন নেই, রাত নেই হন্যে হয়ে পুরনো ঘর-বাড়ি, বট, তেঁতুল ও তালগাছ বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী দু’টির জন্য রীতিমত গরু খোঁজা চলছে এখন ।

গুজব রটেছে, পাচারকারীরা বড় অংকের টাকায় তক্ষক আর  হুতুম পেঁচা কিনছে আকাশছোঁয়া দামে। তবে কী কারণে তক্ষক আর হুতোম পেঁচার এমন আক্কেলগুড়ুম দাম--সেটা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি ৫০০ গ্রাম ওজনের তক্ষক পচারকারীদের এজেন্টরা কিনছেন ১৫ লাখ টাকায়। আর সেটি আড়াই শ’ গ্রামের হলে দাম ৪ লাখ টাকা! পাশাপাশি একটি বড় হুতোম দেড় লাখ আর বাচ্চা হুতোম দাম উঠছে ৩০ হাজার টাকা!

তবে তক্ষক আর হুতোম কারা কিনছে, কেনই বা কিনছে আর এগুলো কোথায়ই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে-- এমন প্রশ্নের মোক্ষম জবাব মিলছে না। তবে, শিকারিচক্রের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। কেউ কেউ রটাচ্ছে, এদুটি প্রাণী দিয়ে জটিল আর দূরারোগ্য রোগের ঔষধ তৈরি হয়। তবে এই রটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

শুধু এটুকু জানা গেছে, জেলার বিত্তশালী পরিবারের ছেলেরাই পাচারকারী চক্রের সদস্য। মাঝে-মধ্যে দামি গাড়িতে চড়ে তারা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় চলে আসে শিকারিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।

এদিকে, গত শনিবার কেশবপুরের মূলগ্রামের মিজানুর গাজী ও আলম ২৭০ গ্রাম ওজনের একটি তক্ষক ও একটি বাচ্চা হুতোম পাচারকারীদের কাছে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনগণ তাদের পাকড়াও করে।

‘বিনা পুঁজিতে রাতারাতি বড় লোক বনে যাওয়ার আশায় এ কাজে এসেছি। তক্ষক আর হুতোম পেঁচাও ধরেছিলাম। কিন্তু, বিক্রি করতে পারিনি’- কন্ঠে রাজ্যের আক্ষেপ ঝরলো মিজানুর গাজীর। আলমের কণ্ঠেও আফসোসের সুর।

কিন্তু তারা কাদের কাছে তক্ষক আর হুতুম পেঁচা বিক্রি করতে যাচ্ছিল-- সেটা কোনোমতেই জানাতে রাজি নয় মিজান আর আলম। তবে ‘জীবনে আর এমন কাজ করবো না‘ বলে কিড়ে কসম কাটার পর মিজানুর গাজী ও আলমকে ছেড়ে দেয় এলাকাবাসী।

পরে উদ্ধার করা তক্ষক আর বাচ্চা হুতোমটিকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়।

উপজেলার পাঁজিয়া ইউনিয়নের পাঁজিয়া গ্রামের শম্ভুনাথ বাংলানিউজকে জানান, তার পারিবারিক মন্দিরের ভেন্টিলেটরের মধ্যে প্রায় ২৫ বছর ধরে বসবাস করা ২টি তক্ষক সাপ ধরার জন্য সম্প্রতি এক সন্ধ্যার পর দুর্বৃত্তরা হানা দেয়।

কিন্তু তার সচেতনতার কারণে সাপ দু’টি রক্ষা পায়। পরে দুর্বৃত্তরা তক্ষক দু’টির বিনিময়ে শম্ভুনাথকে মোটা অংকের টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। তবে তিনি তাদের নাম প্রকাশ করেননি।

উপজেলার আলতাপোল গ্রামের আব্দুল্লাহ জানান, গত সোমবার রাতে ৩ জন যুবক মোটরসাইকেলে করে তাদের বাড়িতে এসে একটি তক্ষক ধরেন। কিন্তু ওজন ও আকার দরকার মতো না হওয়ায়  তক্ষকটি তারা ছেড়ে দিয়ে যায়।

উপজেলার মনোহরনগর গ্রামের জিতেন্দ্র সরকার বাংলানিউজকে জানান, তার ঘরে থাকা একটি তক্ষক ধরার জন্য পরপর কয়েকদিন অপরিচিত যুবকরা এসে চেষ্টা চালায়। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের বাধার মুখে তারা ফিরে যায়।

কেশবপুর মহিলা কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হারিণ বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, তক্ষক সাপের বৈজ্ঞানিক নাম gekko-geako-gecko। বুকে হাঁটা এ প্রাণীটি মানুষের ক্ষতি করেছে, এমন কথা শোনা যায়নি।

তিনি আরো জানান, সম্প্রতি শুনেছেন-এ প্রাণীর বিষ থেকে নাকি ঔষধ তৈরি হচ্ছে।

তার মতে, ‘এভাবে তক্ষক ও হুতুম পেঁচা শিকার চলতে থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। ’  

এদিকে, কেশবপুর হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হেদায়েতুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘তক্ষক সাপের বিষ দিয়ে ঔষধ তৈরি করা যায় কি না তা আমাদের জানা নেই। ’

কেশবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, বিলুপ্তপ্রায় এ প্রাণীগুলো রক্ষা করা না গেলে পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হবে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদা সুলতানা জানান, তিনিও তক্ষক ও হুতুম পেঁচা ধরার কথা শুনেছেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের সাপ ও হুতোম পেঁচা না ধরার জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টি করার তাগিদ দিয়েছেন বলে জানান।

কেশবপুর থানার এসআই নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, একটি চক্র তক্ষক ও হুতোম পেঁচা ধরে বিক্রি করছে বলে তিনি শুনেছেন।   তবে, এ ব্যাপারে কেউ থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেনি, কাউকে আটকও করা হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।