ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মহান মে দিবস: বৈষম্যের শিকার মধ্যপ্রাচ্যে বাঙালি শ্রমিক

লুৎফুর রহমান, সম্পাদক, মাসিক মুকুল, দুবাই | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৯ ঘণ্টা, মে ২, ২০১১

মে দিবস দিবস আসে শ্রমিকের অধিকার মনে করিয়ে দিতে। আসে শেকল ভাঙার গান শুনাতে।

শ্রমিকের ঘামে চলে অর্থনীতির চাকা। গড়ে ওঠে দেশ ও জাতির স্বপ্নসৌধ। দেশের সীমানা পেরিয়ে জীবন ও জীবিকার তাগিদে যারা পরদেশি শ্রমিক হয়ে যান তাদের অব্যক্ত আত্মকথন প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করে মানবের দেয়ালে। আজও ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হয় অভিবাসী শ্রমিকদের। তারপরেও থাকে কোম্পানি মালিকদের বৈষম্যমূলক আচরণ। বিশেষকরে মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত বাঙালির শ্রমিকরা নানাবৈষম্য আর নির্যাতনের শিকার। যাদের কাছে ‘মে দিবস’ আলাদা কিছু নয়।

শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ৩ মে ধর্মঘটী শ্রমিক সমাবেশে পুলিশের হামলায় ছয়জন শ্রমিক নিহত হন। এর প্রতিবাদে ৪ মে হাজার হাজার শ্রমিক ফেটে পড়েন বিক্ষোভে। সেদিনও পুলিশের গুলিবর্ষণে পাঁচজন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন। আন্দোলন গড়ে তোলার অপরাধে কয়েকজন শ্রমিককে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়। এভাবে প্রাণের বিনিময়ে শ্রমিক শ্রেণী কায়েম করে দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ‘পহেলা মে’ আন্তর্জাতিক শ্রমিক ঐক্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ইতিহাসের সেই ‘হে’ মার্কেটের শ্রমিকের মতো লাখো প্রবাসী বাঙালি শ্রমিক অঝরে চোখের পানি ঝরান। যাদের অমানুষিক পরিশ্রমে চলে দেশের চাকা তাদের অধিকার নিয়ে চিন্তা করার সময় কারো নেই এমন ভাব দেখা যায় কখনো সরকারি কাজে।

পরদেশে-পরবাসে অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করার পরও কেন বৈষম্যসহ নানা শ্রমিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত বাঙালি শ্রমিক? কেন আমাদের শ্রমের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে?  আমাদের দূতাবাস এর কতিপয় কর্মকর্তাদের উদাসীনতা এবং শ্রমিকদের অধিকার সম্বন্ধে অসচেতনাই এই বৈষম্যের অন্যতম কারণ। ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার শ্রমিকদের তুলনায় পারিশ্রৃমিক ও স্বাস্থ্যসুবিধা থেতে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন বাংলাদেশি শ্রমিক। কর্মক্ষেত্রে কোনো শ্রমিক দূর্ঘটনার কবলে পড়লে কোম্পানির খরচ বহন করার আইন থাকলেও অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের মতো করে এই সুবিধাগুলো বাঙালিদের কপালে জুটেনা। এসব শ্রমিককে দেশে ফিরতে হয় খালিহাতে। হাসি ফুটাতে পারেন না সন্তানের মুখে। নিয়োগে চুক্তির গাফিলতির কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। বঞ্চিত হতে হয় অতিরিক্ত শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত পারিশ্রম থেকেও। নিজের অধিকার নিয়ে যথাযথ জ্ঞান এবং শক্তিশালী অভিবাসন আইন না থাকায় এহেন দুর্ভোগের কারণও বটে। তাছাড়া বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কনস্যালদের অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণও রয়েছে শ্রমিকদের অধিকারবঞ্চিত হবার অন্তরালে।

আমরা স্বীকার করি, সরকার অভিবাসী বাঙালি শ্রমিকদের উন্নয়নে কাজ করছেন। সম্প্রতি দেশে চালু করেছেন ‘প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক’। নিঃসন্দেহে এটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ প্রবাসিদের জন্য। এতে সকল প্রবাসি আশায় বুক বেঁধেছে। কিন্তু চলমান সমস্যা সমাধানে সরকারকে গুরুত্ব দিবে হবে। হতে হবে আন্তরিক দূতাবাসের কর্মকর্তাদের। যদিও তুলনামুলক লোকবল নেই দূতাবাসগুলোতে। তারপরেও অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে দূতাবাসকে এগিয়ে না আসলে এটা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেতে থাকবে। শ্রমিকদের সচেতন করতে এগিয়ে আসতে হবে বাঙালি কমিউনিটিকেও। শুধুমাত্র গ্রপিং-লবিং আর দেশের রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ না করে প্রবাসিদের কল্যাণে সভা সমাবেশ করলে তাদের পাশে দাঁড়ালে এ বৈষম্যটি খুব সহজেই কাটিয়ে ওঠা যাবে। আশাকরি সকলের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে কাজ করে আগামি ‘মে দিবস’ আসার আগেই আমরা আমাদের বৈষম্য কিছুটা হলেও দূর করতে সক্ষম হবো।


লেখক: সম্পাদক, মাসিক মুকুল, দুবাই। [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ