ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া চলবে না-আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১১
ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া চলবে না-আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী

ঢাকা: সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সার্ক অঞ্চলে ব্যবসার নামে ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া চলবে না। আর যদি ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হয় তবে তার আগে সমূদ্রসামী বিরোধ নিষ্পত্তি, পানির ন্যায্য হিস্যা, ছিট মহল সমস্যার সমাধান, সীমান্তে হত্যা বন্ধ হতে হবে।


 
‘সার্ক দেশসমূহের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্ণর আলাহ মালিক কাজেমীর সভাপতিত্বে এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্র্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান।
 
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ট্রানজিট হলেই ভারতের সঙ্গে ব্যবসা বেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। ট্রানজিটের জন্য রাস্তা নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মানে বাংলাদেশের ৫০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে।

তিনি বলেন, এসব অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে বছরে ব্যয় হবে আরো ১০ হাজার কোটি টাকা। অথচ এই টাকা দিয়ে দেশের রাস্তাঘাট নির্মাণ ও বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান করা যায়।

তিনি বলেন, এসব সমাধান হলে দেশে এমনিতেই বিনিয়োগ আসবে ও ব্যবসা হবে। সেজন্য ভারতের ওপর নির্ভর করতে হবে না।

তিনি বলেন, কেউ কেউ বলছেন, ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবো, আর এতে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা আয় হবে। অন্য দেশের সুবিধার জন্য এতটাকা বিনিয়োগের কোনো দরকার নেই।
 
তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। অথচ কিভাবে হবে সেই হিসাব তারা দিতে পারছেন না।
 
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু বলেন, ট্রানজিট বা কানেক্টিভিটি না হলে যদি ব্যবসা না হয় তাহলে ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে আমাদের ব্যবসা হচ্ছে কিভাবে। সবকিছু ত্যাগ করে সার্ক অঞ্চলে ব্যবসা হতে হবে তার কোনো মানে নেই।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক শক্তি বাড়লে এমনিতেই ব্যবসা হবে। এর সঙ্গে ট্রানজিটের কোনো সম্পর্ক নেই। ভারত ট্রানজিট পেয়ে গেলে আমাদের আর কোনো বার্গেনিং টুলস হাতে থাকবে না।
 
ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় রপ্তানির মাধ্যমে দেশের দারিদ্র বিমোচন সম্ভব। ভারতের সঙ্গে গত ৭ বছরে বাণিজ্য ছিল ৯০ মিলিয়ন ডলার। আর নয় মাসে এই বাণিজ্যের পরিমান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলারে।
 
তিনি বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। নতুবা এই শতাব্দীর সমস্যা দূর করা যাবে না। স্বাধীনতার গত ৪০ বছরে ভারত বিরোধীতা করে আমাদের দেশের মানুষ ৪০ ভাগ মানুষ এখনো দারিদ্র সীমার নিচে বাস করছে। এখন সময় এসেছে নতুনভাবে চিন্তা ও কাজ করার।
 
ড. মুস্তাফিজ বলেন, সিঙ্গাপুর এখন বলছে তারা দুই পাখার ওপর ভর করে উড়তে চায়। এর একটি পাখা হচ্ছে চীন ও আর আরেকটি ভারত। এই দুই দেশে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারলে সিঙ্গাপুর আকাশেই উড়বে।

সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী আমির খসরুর এক প্রশ্নের জবাবে সিপিডি নির্বাহী পরিচালক বলেন, ভারতকে ট্রানজিট দিতে গিয়ে যে রাস্তা নির্মাণ করা হবে তা শুধু ভারতই ব্যবহার করবে না, আমরাও ব্যবহার করবো। ভারতের সঙ্গে চীনের যুদ্ধ হয়েছে, এখনো তাদের মধ্যে সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। অথচ তাদের মধ্যে বাণিজ্য থেমে নেই।     
 
ড. মুজিবুর রহমান বলেন, চীন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য, মায়ানমারকে ঘিরে বাংলাদেশের জন্য বিরাট বাজার রয়েছে। এই বাজার আমাদের কবজা করার কোনো বিকল্প নেই। এই বাজারে ঢুকতে হলে আমাদের পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে।
 
তিনি বলেন, মানুষের চাহিদা কোনো সীমান্ত মানে না, যদি মানতো তাহলে ইউরোপ ও আমেরিকাতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প ও চিংড়ির এত বড় বাজার হতো না। সুতরাং চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করতে পারলে ব্যবসা হবেই। তবে সবার আগে জাতীয় ইস্যুতে আমাদের এক হতে হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘন্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।