ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জব্বারের বলীখেলা

তিনদিনের বৈশাখী মেলার আনুষ্ঠানিক শুরু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১১

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে শতবছরের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলীখেলা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।

তবে এর দু’দিন আগে থেকেই লালদিঘীর পাড় ও আশেপাশের এলাকায় মেলার আঁচ লেগেছে।



মেলা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর লালদিঘীর পাড় থেকে আশপাশের এলাকা কেসি দে রোড, বকশিরহাট, আন্দরকিল্লা, সিনেমা প্যালেস, শহীদ মিনার, নন্দন কানন এলাকায় প্রায় দু’হাজার দোকানি বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন।

এসব পণ্যের মধ্যে গৃহস্থালি সামগ্রী, গৃহসজ্জা, ফুলের চারা, আসবাবপত্র, খেলনা, খাবার সামগ্রী, ঝাড়–, পাপোশ, কুটির শিল্প, শীতল পাটি, মাদুর, হাড়ি পাতিল, মাটির ব্যাংক, বেতের চালুনি, কাঠের ওয়াড্রব, ড্রেসিং টেবিল, খাট, শোকেস, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, মুড়ি-মুড়কি ইত্যাদি।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে তালপাতার হাতপাখা নিয়ে মেলায় এসেছেন দোকানী মন্টু মোল্লা। প্রতি জোড়া পাখার দাম হাঁকছেন ৮০ টাকা।

একইভাবে চন্দনাইশ থেকে লোকমান হোসেনও এসেছেন তালপাতার হাতপাখা নিয়ে। তিনি প্রতি জোড়ার দাম রাখছেন ১৪০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত।

একই হাতপাখা দু’ধরনের দাম কেন, এমন প্রশ্নে মন্টু মোল্লার জবাব, ‘আমাদর পেশা পাখা বানানো। আমরা কারও কাছ থেকে কিনে আনিনি। সেজন্য কম দামে দিতে পারছি। ’

আর লোকমানের জবাব, ‘চন্দনাইশের তালপাতার হাতপাখা মজবুত। সেজন্য দাম বেশি। ’

তালপাতার পাখার চাহিদা যেমনই থাকুক, বাঁশের তৈরি হাত পাখা এখনও সমান সমাদৃত। মেলায় নোয়াখালীর জহির এসেছন প্রায় পাঁচ হাজার বাঁশ ও কাপড়ের তৈরি হাতপাখা নিয়ে। সব হাতপাখাই মেলায় বিক্রি হয়ে যাবে এমন আশা জহিরের।

পুরান ঢাকার মনির গত ১৫ বছর ধরে মেলায় আসছেন মৃৎশিল্প নিয়ে। এবারও এসেছেন মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে।

একইভাবে গত ১৮ বছর ধরে নরসিংদীর সুরুজ মিয়াও মৃৎসামগ্রী নিয়ে মেলায় আসছেন।

টাঙ্গাইলের কালীহাতি থেকে সুবাস কর্মকার এসেছেন মাটির তৈরি ঘর সাজানোর নানা সামগ্রী নিয়ে। বিভিন্ন কারুকাজ করা ফুলের টব, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হাতি, ঘোড়া, পেয়ারা। এসবের কোনও কোনওটার দাম ৭০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত।

সুবাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘কত মেলায় যাই! সীমান্তের ওপারের মেলায়ও গেছি। এত মানুষ তো কোথাও দেখি না। ’

মেলায় এসে দু’দিন ধরে দোকানিরা কেউ হস্তশিল্পজাত সামগ্রীতে রঙ করছেন, কেউবা শিশুদের খেলনা তৈরি করছেন, আবার কেউবা ঝাড়– ও হাতপাখা বাঁধছেন।

পণ্যগুলোকে আকর্ষণীয় করার কাজে দু’দিনের ব্যস্ততা শেষে শনিবার রাত থেকে পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে বিকিকিনি।
 
রাউজানের নোয়াপাড়া থেকে প্রবাসী আশীষ মহাজনের স্ত্রী লাভলী মেয়ে নিয়ে রোববার সকালে এসেছিলেন মেলায়।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘পরে ভিড়ের জন্য আর পারবো না। তাই আগেভাগে চলে এসেছি। ’

ফেনীর ছাগলনাইয়া থেকে নগরীর লালখানবাজারে ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন পঞ্চাশোর্ধ গৃহিনী সুরাইয়া বেগম।

শনিবার রাতে মেলা ঘোরার সময় তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এবার সুযোগ হয়েছে। ঝাড়–, পাপোশ, চালুনি এসব কিনে নিয়ে যাব। ’

বিচিত্র পণ্যের সমাহারের পাশাপাশি মেলা উপলক্ষে লালদিঘীর মাঠে শুরু হয়েছে নাগরদোলা, পুতুল নাচ আর সার্কাস।

এদিকে মেলায় আসা দোকানিদের কাছ থেকে যাতে কেউ চাঁদাবাজি করতে না পারে সেজন্য শনিবার দিনভর ও রোববার সকালে মেলায় মাইকিং করা হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন মেলা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী।

তিনি জানান, মেলায় আসা ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে মেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ পানির ব্যবস্থা রাখা হবে।

এছাড়া ওয়ার্ড অফিসে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুমে সবাই তাদের অভিযোগ কিংবা সুবিধা-অসুবিধা জানালে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নেওয়া হয়েছে কঠোর পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।

সোমবার বিকেলে লালদিঘি মাঠে অনুষ্ঠিত হবে মেলার মূল আকর্ষণ ১০২তম আব্দুল জব্বারের বলীখেলা।
চ্যানেল আই’র বার্তা বিভাগের প্রধান শাইখ সিরাজ বলীখেলার উদ্বোধন করবেন। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সিটি মেয়র এম মনজুর আলম।

বলীখেলার স্পন্সর প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক।

উল্লেখ্য, ১৯০৯ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে বকশির হাট এলাকার আবদুল জব্বার সওদাগর এই বলীখেলার প্রবর্তন করেছিলেন।

এরপর থেকে প্রতিবছর ১২ বৈশাখ তার নামেই এ বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়।

তিন দিনের এ প্রাণের মেলা মঙ্গলবার শেষ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।