ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

উদ্ধার অভিযান শেষ

এমভি বিপাশা টেনে তোলা হয়েছে, ৩৩ মৃতদেহ উদ্ধার

উজ্জল চক্রবর্তী ও ইসহাক সুমন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১১
এমভি বিপাশা টেনে তোলা হয়েছে, ৩৩ মৃতদেহ উদ্ধার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মেঘনা নদীতে বুধবার রাতে দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যাওয়া ‘এমভি বিপাশা’ লঞ্চটি শুক্রবার সকাল সোয়া ১১টায় টেনে তীরে তোলা হয়েছে। লঞ্চের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় আরো ২টি মৃতদেহ।

এ নিয়ে ওই লঞ্চডুবিতে উদ্ধার করা মৃতদেহের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৩।

আর কোনো মৃতদেহ না পাওয়া যাওয়ায় দুপুর ১টায় উদ্ধার অভিযান শেষ করা হয়েছে।

বিআইব্লিওটিএর প্রধান প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ তারেক বাংলানিউজকে উদ্ধার তৎপরতার সমাপ্তির কথা জানিয়ে বলেন, ‘উদ্ধারকৃত মৃতদেহগুলো সরাইল থানায় বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ’

এদিকে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান সকাল ১১টায় দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মৃতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেন। মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে এ অর্থ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন দাফন এবং মৃতদেহ পরিবহনের খরচ হিসেবে দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের জন্য দূরত্বভেদে ২ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে লঞ্চডুবির ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিওটিএ এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তর ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তিনটি কমিটিকেই আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইব্লিওটিএ) সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ তারেককে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে।

হাসান মাহমুদ তারেক বাংলানিউজকে জানান, ‘কমিটি ঘটনা তদন্ত করবে। দুর্ঘটনাস্থলে আলোর স্বল্পতা ছিল বলে জানা গেছে। এছাড়া চালকের কোনো ত্রুটি ছিলো কিনা এ ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। ’

অন্য তদন্ত কমিটিগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, বুধবার রাত ১টার দিকে দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে মেঘনায় ডুবে যায় লঞ্চটি।

দুর্ঘটনার সাড়ে ২১ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ এমভি রুস্তম ঢাকা থেকে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করে।

দুর্ঘটনার ১২ ঘণ্টা পর প্রাথমিকভাবে উদ্ধার অভিযান শুরু হয় বৃহস্পতিবার সকালে। বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান ভৈরব থেকে ডুবুরিদের বিশেষ টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান।

প্রথমে স্থানীয়রা জাল ফেলে তিনটি লাশ উদ্ধার করে। পরে ডুবুরিদল সেখানে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত আরো ২৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। এদের মধ্যে ১১ জন নারী, ৩ জন পুরুষ এবং ৬ জন শিশু। শুক্রবার সকালে উদ্ধার করা হয় আরো ৫টি মৃতদেহ। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত ৩৩টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে মাত্র  তিন জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন- ভৈরবের শ্যামাচরণ দাস (৩২),  কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের হাতেম মিয়া (১০) ও নরসিংদীর দৌলতকান্দির হামেত তাই (২৪)। বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

‘এমভি বিপাশা’ নামের লঞ্চটি ভৈরব থেকে ছেড়ে রাত ১টার দিকে সরাইলের রাজাপুর এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় একটি বালুবাহী ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। এতে দুই শতাধিক যাত্রী ছিলো। একশ’র মতো যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও বাকিরা নিখোঁজ রয়েছেন। একথা জানিয়েছেন সরাইলের করুয়াইল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইউসুফ।

লঞ্চের বেঁচে যাওয়া যাত্রী স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, ‘হঠাৎ করেই একটা কিছুর সঙ্গে লঞ্চটির ধাক্কা লেগে বিকট শব্দ হয়। এরপরই লঞ্চটি ডুবতে থাকে। মেঘনার রাজাপুর তীর থেকে ১০০ ফুট দূরে ডুবে যাওয়া লঞ্চটির যাত্রীদের মধ্যে ১০০ জনের মতো সাঁতরে তীরে ওঠেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।