ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

চট্টগ্রাম মহানগর আ.লীগ

কোন্দল নিরসনের দায়িত্ব পাওয়ারা নিজেরাই কোন্দলে

রমেন দাশগুপ্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১১
কোন্দল নিরসনের দায়িত্ব পাওয়ারা নিজেরাই কোন্দলে

চট্টগ্রাম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোন্দল নিরসনের দায়িত্ব পাওয়া তিন প্রবীণ নেতা নিজেরাই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন।

এই তিন নেতা হলেন- চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ইসহাক মিঞা, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।



জ্যেষ্ঠতা নিয়ে একধরনের মনস্তাত্বিক টানাপোড়েনের কারণে গত দু’মাসে যৌথভাবে একবারও বৈঠকে বসতে পারেননি তারা। এর ফলে নগর আওয়ামী লীগের বিবাদমান দু’গ্রুপের কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ কার্যত ভেস্তে গেছে।

এ অবস্থায় দু’মাসের মাথায় আগামী ২৬ এপ্রিল আবারও চট্টগ্রামে আসছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওইদিন বিকাল তিনটায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বৈঠক করে স্থানীয় তিন জ্যেষ্ঠ নেতাকে কোন্দল নিরসনের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওই তিনজনের একজন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা নিজেরা বসতে পারিনি এটা সত্যি। ব্যক্তিগতভাবে আমার কোন সমস্যা ছিলো না। আমি ইসহাক ভাই আর বাবু ভাইয়ের অধীনে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা সম্ভব হয়নি এটাই বাস্তবতা। ’

যৌথ বৈঠক করতে না পারার বিষয়টি স্বীকার করেন আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুও।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমি ও মোশাররফ আলাদাভাবে মহিউদ্দিন, আফছারুল ও বিএসসি’র সঙ্গে কথা বলেছি। দু’জনের বিষয় দু’জনে জানতাম। এর বাইরে আর কিছু জানি না। ’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ইসহাক মিঞার সেলফোনে ও বাসায় একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ঢাকায় অবস্থান করার কারণে ও সেলফোন বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

নগর আওয়ামী লীগের বিবদমান দু’গ্রুপের মধ্যে এক গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন নগর কমিটির সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। অপর পক্ষের নেতৃত্বে আছেন একই কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা.আফছারুল আমিন।

মহিউদ্দিন গ্রুপের নেতা ও নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী ইনামুল হক দানু তিন নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

এ বিষয়ে আফছারুল আমিনের পক্ষের নেতা ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘এমন কথা তো বাতাসে ভাসছে। আমাদেরও কানে এসেছে। সত্য-মিথ্যা জানি না। তবে কোন্দল নিরসনের জন্য তিন নেতার সম্মিলিত কোন উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়েনি। ’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোন্দল নিরসনে তিন নেতার মধ্যে কে নেতৃত্ব দেবেন সেটা প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করে দেননি। ফলে শুরু থেকেই এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ছিলো। আবার আক্তারুজ্জামান বাবু ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন দু’টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও বর্তমান সাংসদ। ইসহাক মিঞা একটি সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি হলেও তিনি বয়সে প্রবীণ। কিন্তু দু’জন সভাপতি ডিঙিয়ে তার নেতৃত্ব অন্য দু’জন মানতে পারেননি। এ থেকেই টানাপোড়েন শুরু।

তিন নেতার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বাংলানিউজকে জানান, দায়িত্ব পাওয়ার পর ইসহাক মিঞা প্রথমে অপর দু’নেতার সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকের আগ্রহ ব্যক্ত করে দু’জনকে টেলিফোন করেন। এর মধ্যে ইসহাক মিঞাকে ‘মহিউদ্দিনের পক্ষের লোক’ হিসেবে অভিযুক্ত করে তার সমালোচনা শুরু করেন আফছারুল আমিনের অনুসারীরা। এর ফলে ইসহাক মিঞার আগ্রহে ভাটা পড়ে।

এরপর দু’নেতার পক্ষ থেকে আর ইসহাক মিঞার সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়নি। দু’নেতা নিজেরাও বৈঠক করেননি। তবে আলাদাভাবে দু’নেতাই মহিউদ্দিন চৌধুরী, ডা.আফছারুল আমিন ও সাংসদ নূরুল ইসলাম বিএসসি’র সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেন।

কিন্তু তাদের বিচ্ছিন্নভাবে নেওয়া এ উদ্যোগে সাড়া মেলেনি বিবদমান দ্র’গ্রুপের নেতাদের।

এ প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব ছিলো না। কিন্তু তাদের মধ্যে দূরত্ব এত বেশি যে আমরা সফল হতে পারিনি। ’

এ অবস্থায় আগামী ২৬ এপ্রিলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আবারও কি নির্দেশনা দেন সেদিকে তাকিয়ে আছেন কোন্দল নিরসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।       
 
উল্লেখ্য, বিগত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আফসারুল আমিনের নেতৃত্বে বিবদমান দু’টি ধারা আলাদাভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এর মধ্যে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পক্ষে আছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইনামুল হক দানু, সাংসদ এমএ লতিফ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজম নাছিরউদ্দিনসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন।

অন্যদিকে আফসারুল আমিনের পক্ষে আছেন সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল এবং অর্থ সম্পাদক ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।