ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে সিজারিয়ান সংখ্যা বাড়ছেই

সাইদ আরমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১১
প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে সিজারিয়ান সংখ্যা বাড়ছেই

ঢাকা: ব্যক্তি মালিকানাধীন হাসপাতালগুলোতে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্য জরিপ-২০১০ অনুসারে ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৭০ শতাংশ সন্তান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

আর এই সংখ্যা সারা দেশের  মোট অস্ত্রোপচারের প্রায় ৭২ শতাংশ।

সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, ২০০৯ সালে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রসবকালে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিলো এক লাখ ৫ হাজার ৩৫৪ জন। আর ২০১০ সালে তা বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে তা বেড়েছে ৩৫ হাজার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাতৃমৃত্যুর হার ও শিশু মৃত্যুর হার কমে গেলেও যে হারে অস্ত্রোপচার বাড়ছে,  তা মা ও শিশুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রসবকালে অস্ত্রোপচার বাড়ার পেছনে প্রসব জটিলতা তো রয়েছে। তার সঙ্গে যেটি উদ্বেগজনক তা হচ্ছে, নারীর অসচেতনা, অসাধু চিকিৎসক এবং ক্লিনিকগুলোর মালিক। তারা অতিরিক্ত টাকার আদায়ের জন্য এটা করছেন।

আবার বর্তমানে মেয়েরা কষ্ট করতে চায়না। তারা মনে করছেন, একটি বা দুটি বাচ্চা নেবে তাতে অস্ত্রোপচার করে নিলে সমস্যা কোথায়।    

অবশ্য সরকারের মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্য জরিপেও বিষয়টি নিয়ে সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, অনেক সময়ই প্রসব জটিলতার জন্য গর্ভবতীর মায়ের অস্ত্রোপচার দরকার পড়ে। আবারও অনেক সময় অপ্রয়োজনেও তা করা হচ্ছে। প্রায় ১৯ শতাংশ নারী ঐ জরিপে বলেছেন, তাদের অস্ত্রোপচারের কোন দরকার ছিলো না। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অস্ত্রোপচারে উৎসাহ দিয়েছেন।  

মাতৃস্বাস্থ্য ও মাতৃমৃত্যু প্রতিবেদন- ২০০১ অনুসারে, ঐ সময় ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতালগুলোতে প্রসবকালে অস্ত্রোপাচারের হার ছিলো দুই দশমিক সাত। আর ২০১০ সালে তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে এগার দশমিক তিনে। অর্থাৎ গত দশ বছরে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে এই হার বেড়েছে প্রায় সাড়ে সাতভাগ।

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (এমআইএস) পরিসংখ্যান মতে, ২০১০ সালের প্রথম ছয়মাসে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রসবকালে অস্ত্রোপাচার করা হয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার মায়ের। অথচ এই সময়ে সারাদেশে প্রায় ৬৩৯টি হাসপাতালে অস্ত্রোপাচার করা হয়েছে এক লাখ তিন হাজার গর্ভবতী মায়ের।  

পরিসংখ্যান মতে, মোট অস্ত্রোপাচারের প্রায় অর্ধেক করা হয়েছে মাত্র ৬২টি বেসরকারি হাসপাতালে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশে মোট প্রসবের ১৫ ভাগ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হতে পারে। কিন্তু এর বেশি হলে সেটি মা ও শিশুর জন্য নিসন্দেহে ঝুঁকির।

পরিসংখ্যান মতে, দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে অস্ত্রোপচারের হার সতের শতাংশ, জেলা হাসপাতালে বারো শতাংশ ও উপজেলা হাসপাতালে নয় শতাংশ। তবে গ্রামে অস্ত্রোপচারের হার কম থাকাটাও উদ্বেগজনক। ফলে মা ও শিশুর মারা যাবার ঝুঁকি  বেশি।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারে পেছনে গর্ভবতীরাও অনেক সময় দায়ি থাকে। তারা ঝুঁকি নিতে চান না। আর এই সুযোগ নিয়ে থাকে হাসপাতালগুলো।

তারা বলছেন, গড় হিসাবে সাধারণ প্রসবের চেয়ে অস্ত্রোপচারে সন্তান জন্ম দিতে খরচ হয় প্রায় ৫ থেকে সাত গুন। অতিরিক্ত দিন হাসপাতালে থাকা, চিকিৎসকের খরচ ও ওষুধ বাবদ এই খরচ হয়ে থাকে।

বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা বেশি কেনো জানতে চাইলে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কোহিনুর বেগম বাংলানিউজকে জানান, অস্ত্রোপচার বাড়ার পেছনে অনেকগুলো উপর্সগ কাজ করে।

শুধু চিকিৎসকদের দায়ি করা ঠিক হবে না। গর্ভবতী মায়েরা এখন ভয়ের কারণে অস্ত্রোপচার করে শিশু জন্ম দিতে আগ্রহী ।
বিশেষ করে শিক্ষিত নারীরা। তারা ১০/১২ ঘন্টা প্রসব ব্যথা সহ্য করতে চাননা।

তিনি বলেন, অনেক গর্ভবতী মা বলে রাখেন, যেন তার অস্ত্রোপচারটা প্রসব ব্যথা ওঠার আগেই করা হয়। অস্ত্রোপচার বাড়ছে বলেই প্রসবকালে জটিলতা কমে মায়ের মৃত্যু হারও কমে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রসবকালে উচ্চহারে অস্ত্রোপচার সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সিফায়েত উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে প্রসবকালে অস্ত্রোপচার শিক্ষিত, ধনী এবং শহরে বেশি। কারণ তারা ঝুঁকি নিতে চান না।

অপরদিকে এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। তারা অতিরিক্ত টাকার জন্য অস্ত্রোপচারের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

তিনি বলেন, গ্রামে অস্ত্রোপচারের হার এখনও অনেক কম। ফলে সেখানে মাতৃ মৃত্যুও বেশি। অস্ত্রোপচার বৃদ্ধি ঠিক ঝুঁকিরপূর্ণ বলা যায়না। এর ফলে অনেক মা ও শিশুর জীবনও বেঁচে যাচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, ২১ এপ্রিল, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ