ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

পরীক্ষা ও ফল নিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

সোহেল রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১১
পরীক্ষা ও ফল নিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

ঢাকা: ‘পরীক্ষা শেষ হয়েছে প্রায় নয় মাস। এখনও ফল প্রকাশের কোনো খবর নেই।

কোথাও কোনো চাকরির আবেদন করতে পারছি না। ঘরে বসে বেকার সময় কাটাতে কাটাতে জীবনটাই এখন অর্থহীন মনে হচ্ছে। ’

প্রচ- ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গত বছর ঢাকা কলেজ থেকে অনার্স শেষ করা শিক্ষার্থী লিংকন।

নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা না হওয়া ও ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতার কারণে লিংকনের মতো এভাবে ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী।

চট্টগ্রাম কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে একটি বেসরকারি স্কুলে চাকরি নিয়েছিলেন নাজমুন নাহার। চাকরির নিয়োগের সময় কথামতো তিন মাসের মধ্যে পরীক্ষার মার্কশিট জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি দিতে পারেননি। ফলে তার চাকরি চলে যায়।

নাজমুন জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয় যথাসময়ে ফল প্রকাশ না করায় আমি চাকরিটি হারালাম। আমার মতো অবস্থা অনেকেরই। এটা খুবই অমানবিক। ’ দ্রুত ফল প্রকাশের দাবি জানান তিনি।

জানা যায়, পরীক্ষার সময়সূচি নিয়ে কর্তৃপক্ষের গড়িমসি, পরীক্ষকদের মাঝে উত্তরপত্র বিতরণে বিলম্ব, পরীক্ষকদের খাতা দেখতে অবহেলা, মার্কিং প্রক্রিয়ার জটিলতাসহ নানা অহেতুক ঝামেলাই যথাসময়ে ফল প্রকাশ না করার কারণ।

ঢাকা কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী লুসান বাংলানিউজকে জানান, ২য় বর্ষে পরীক্ষা শেষ হয়েছে এখন প্রায় আঠারো মাস হতে চললো। এখানও ৩য় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়নি। শিক্ষকদের বললে তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলেন। আমারা এই জট থেকে মুক্তি চাই।
 
বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করের প্রায় প্রতিটি বর্ষেই সেশন জট লেগে আছে একবছরেরও বেশি সময় ধরে। যথাসময়ে পরীক্ষা ও ফল পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হতাশা দেখে আমাদেরও খারাপ লাগে। কিন্তু কিছুই করার নেই। সবই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের খেয়াল-খুশিমতো হয়। তারা বলেন, রাজনৈতিক পট পারিবর্তনের ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও পাল্টে যায়। নতুন কর্মকর্তারা সবকিছু গোছাতে অনেক সময় চলে যায়। এর মধ্যে আবার নতুন সরকার আসে। আবার কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। পরীক্ষা ও ফল প্রকাশে এ বিষয়টি খুব প্রভাব ফেলে।
 
প্রত্যেক উত্তরপত্রের জন্য প্রত্যেক পরীক্ষক ৩৫ টাকা করে পান। ঠিক সময়ে এই টাকা নিতে গড়িমসি না করলেও পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখতে ঠিকই তারা সময় ক্ষেপণ করেন।

জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল পরীক্ষা পরিচালনা ব্যয়ের বিশেষ সম্মানীর নামে। এক বছর না যেতেই  (২০১০-১১ অর্থবছরে) তা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর, অর্থ ও হিসাব দফতরসহ নানা দফতর ও প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের অনেকেই পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট না হয়েও এই বিশেষ সম্মানীর অংশীদার হয়ে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শাখায় প্রায় ৬ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বর্তমানে নিয়োজিত আছেন। নির্ধারিত বেতনের পাশাপাশি পরীক্ষার জরুরি প্রয়োজনে তাদের অতিরিক্ত কাজ করানোর জন্য ওভারটাইম হিসেবে ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

পরীক্ষার পেছনে এত বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় হলেও ঠিক সময়ে কেন পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ হচ্ছে না জিজ্ঞেস করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘পরীক্ষা ঠিক সময়ে হচ্ছে না এটা কিছুটা সত্য। ’

তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপানো, পরীক্ষার ভেন্যু ঠিক করাসহ অনেক জটিলতার কারণে যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে। ’এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষার কারণে ওই সময় কলেজে অনার্স বা মাস্টার্সের পরীক্ষা নেওয়া যায় না। আমরা এখন পরীক্ষার মৌসুম পরিবর্তনের চিন্তা করছি। ’

ফলের ব্যাপারে তিনি জানান, ‘পরীক্ষকরা নম্বরপত্র জমা না দিলে ফল কীভাবে দেব? ৩ জন পরীক্ষককে একটি উত্তরপত্র দেখতে হয়। অনেক লম্বা প্রক্রিয়া। তাই সময় লাগে। ’

বাংলাদেশ সময় : ১৭১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।