ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

এমপি’র মধ্যস্থতায় আপসরফা

রাজবাড়ীতে বাউল নির্যাতন মামলার ৯ আসামির জামিন

জহুরুল হক, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১১
রাজবাড়ীতে বাউল নির্যাতন মামলার ৯ আসামির জামিন

রাজবাড়ী: বাউলদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান ও আচার অনুষ্ঠান পালনের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের রুল জারির মাত্র একদিন পরই রাজবাড়ীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন ২৮ বাউলকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত পাংশার রামনগরের ৯ আসামি।

আলোচিত এ মামলায় অভিযুক্তদের জামিন প্রক্রিয়া নিয়ে বুধবার সকাল থেকেই রাজবাড়ী কোর্ট অঙ্গনে আইনজীবী ও আসামিদের ঘনিষ্ঠজনদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।



দুপুর ১টার দিকে আদালতপাড়ায় পৌঁছান মামলার বাদী বাউল শাহ মহম্মদ ফকীর ও তার শুভাকাক্সক্ষীরা। এরও প্রায় দেড়ঘণ্টা পরে আদালতপাড়ায় আসেন মামলার প্রধান আসামি ইউনুস কারীসহ অভিযুক্ত ৯ আসামি।

মধ্যাহ্নবিরতির পর রাজবাড়ীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ২ নং আমলি আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে এ মামলায় অভিযুক্ত ৯ আসামি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন।

উভয় পক্ষের মধ্যে আপসনামা আদালতে দাখিল করে আসামিদের জামিনের আবেদন জানান অ্যাড. রফিকুল ইসলাম ও অ্যাড. সাইফুজ্জামান খান আজম।

এসময় আদালতে উপস্থিত মামলার বাদী মহম্মদ ফকীর আসামিদের জামিনের বিষয়ে তার কোনও আপত্তি নেই বলে জানান। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক জাহিদুল আজাদ উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালতে উপস্থিত ৯ জনের জামিন মঞ্জুর করেন। এরা হলেন ইউনুস কারী, করিম বাজারী, ইনদার সেখ, জয়নাল সেখ, ইনসান ফারাজী, নজরুল কারী, মুক্তার সেখ, রিয়াজ সিকদার ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম ফেলা কারী।

এছাড়া মামলায় অভিযুক্ত আব্দুল মালেক মাতব্বর, মোশারফ মোল্লা, নুরু খাঁ ও শহিদুল খাঁ এখনও পলাতক রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ বাউলদের জীবনের নিরাপত্তা, আচার অনুষ্ঠান পালনে স্বাধীনতা ও মামলার অগ্রগতি জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্টদের বরাবর একটি রুল জারি করেন। এরপরই স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বাউল নির্যাতনের বিষয়টির নিষ্পত্তিতে তৎপর হয়ে ওঠে।

এরই সূত্র ধরে মঙ্গলবার রাতে পাংশা ডাকবাংলোয় স্থানীয় এমপি জিল্লুল হাকিমের সভাপতিত্বে বাদী ও আসামিপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে বাউল নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী, ক্ষতিগ্রস্ত বাউল ও মামলায় অভিযুক্ত ১৩ আসামিসহ উভয়পক্ষের কয়েক শ’ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

বিচারকদের আসনে ছিলেন পাংশা উপজেলা চেয়ারম্যান হাসান আলী বিশ্বাস, বালিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, পাংশা পৌর মেয়র ওয়াজেদ আলী মাস্টার, পাংশা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল মোর্শেদ আরজ, শহীদ দিয়ানত কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, কালুখালী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন ও রাজবাড়ী জেলা বারের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম।

বৈঠকে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানের চুক্তিতে দু’পক্ষই সম্মত হলে পারস্পরিক করমর্দন আর দুঃখ প্রকাশের মধ্য দিয়ে আপস রফা এবং শেষ পর্যন্ত মামলা প্রত্যাহারেরও সিদ্ধান্ত হয়। এরপর মিষ্টিমুখ করানো হয় সবাইকে।

এদিকে বুধবার জামিন পেয়ে আদালত থেকে বেরিয়ে আসার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসামিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন তাদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

অপরদিকে মামলার বাদী মহম্মদ ফকীর বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্থানীয় এমপি ও ওসি আমার জীবনের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বললেও আরও ২/৪ দিন দেখার পর আমি বাড়িতে ফিরবো। ’

উল্লেখ্য, গত ৫ এপ্রিল পাংশার হাবাসপুরের চররামনগরের মহম্মদ ফকীরের বাড়িতে দু’দিনব্যাপী সাধুসংঘ (ওরস) অনুষ্ঠানের শেষ দিনে স্থানীয় কিছু লোক সংঘবদ্ধ হয়ে অনুষ্ঠানস্থলে হানা দিয়ে সেখানে উপস্থিত ২৮ জন বাউলকে ধরে পার্শ্ববর্তী মসজিদে নিয়ে যায়। পরে তাদের তওবা পড়িয়ে দাড়ি-গোঁফ কেটে দেওয়া ও নির্যাতন করা হয়। এঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলেও থানা কোনও মামলা গ্রহণ করেনি।

পরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দেশব্যাপী প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে পুলিশ প্রশাসন গত ৯ এপ্রিল ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে। ঘটনার ১১ দিন পর রিয়াজুল হক মৃধা ওরফে মুফতী রিয়াজ নামে এক আসামি ধরা পড়লেও তদন্তকারী কর্মকর্তার দুর্বলতা ও ভুল ফরোয়ার্ডিংয়ের কারণে একদিন পরই আদালত থেকে তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে যান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।