ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এক খাসি কয়বার কোরবানি করবেন: সাকাচৌ

এটা তার স্বভাবসুলভ ভান: ট্রাইব্যুনাল

জাকিয়া আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১১
এটা তার স্বভাবসুলভ ভান: ট্রাইব্যুনাল

ঢাকা: মঙ্গলবার সকাল ৭টা। কাশিমপুর কারাগারের রর্ক্ষীরা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বললেন, ‘স্যার, তাড়াতাড়ি ওঠেন।

ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে। ’ তখন তিনি বলেন, ‘কীসের ট্রাইব্যুনাল? আর একটু ঘুমাই। ’ একথা বলে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম থেকে ওঠেন সকাল ৯ টায়। এ জন্যই তাকে নিয়ে আসতে এতো দেরি হয়েছে।

সাকাকে আনতে কেন দেরি হলো জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তারক্ষী বাংলানিউজকে এ কথাই বলেন।  

সকাল সাড়ে ১০টায় সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার কথা থাকলেও তাকে ১১টায় হাজির করা হয়।
 
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার নিরাপত্তা হেফাজতে এক দিনের জন্য জিজ্ঞাসাবাদেও নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে ট্রাইব্যুনাল এ নির্দেশ দেন।
 
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে কাশিমপুর কারাগার থেকে সকাল ১১ টায় ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ১১ টা ২০ মিনিটের দিকে তাকে পাঁজাকোলা করে পুলিশ সদস্যরা এজলাস কক্ষে নিয়ে যান। শুনানির শুরুতে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাকার বিরুদ্ধে তদন্তে পাওয়া বিষয়াদি তুলে ধরে বলেন, তাকে এখন তদন্তকারী কর্মকর্তার হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। তিনি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ দিনের সময় প্রার্থনা করেন।

অপরদিকে তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সময় বৃদ্ধির আবেদনও করেন। এসময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান তাকে প্রশ্ন করেন, এতে কতটা সময় লাগবে? উত্তরে জেয়াদ আল মালুম বলেন, তার বিরুদ্ধে তদন্তকারী একজন অফিসার এখন লন্ডনে আছেন সেখানেও তদন্ত কাজ চলছে।

তখন ট্রাইব্যুনালের আরেক বিচারপতি এ কে এম জহির আহমেদ বলেন, ‘আমরা জানতে চাচ্ছি, কতো দিন সময় আপনাদের আরও প্রয়োজন?’ জবাবে প্রসিকিউটর বলেন, ‘আমরা ৬০ দিন সময় প্রার্থনা করছি। তবে একটি কথা বলতে চাই, বিনা কারণে একটি মুহূর্তও আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছ থেকে নেবো না। ’
 
জেয়াদ আল মালুমের বক্তব্য শষে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল হক বলেন, ‘সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে কোনও আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ’ এ সময় কাঠগড়ায় চেয়ারে শুয়ে থাকা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী হাত উঁচু করে বলেন, ‘আই ওয়ান্ট টু সে সামথিং। ’ তখন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, ‘উনি যদি কিছু বলতে চান তো বলুন। ’
 
এ সময় সাকা চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে ১৫ ডিসেম্বর তারিখে রাত ১১ টায় গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলতে থাকেন, আই ওয়াজ কিডন্যাপড, আই ওয়াজ ফিজিক্যালি অ্যাসলটেড, টর্চারড। আমাকে প্রথমে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেটা কি ছিলো আমি জানি না। পরে আমাকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও আমাকে নির্যাতন করা হয়। সেখানে রক্তে আমার কাপড় ভিজে গেছে। আমাকে তখন একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আমাকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার কয়েকজন কর্মকর্তা ছিলেন আন্তরিক। কিন্ত সেখানেও নির্যাতন চালানো হয়। ’

এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘ইউ ক্যান সি মাই লেগস, মাই ব্যাক’। এসময় তিনি পোশাক সরিয়ে তার দেহের বিভিন্ন অংশ ট্রাইব্যুনালকে দেখান।

সাকা চৌধুরী বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের অধীনে চার মাস ধরে আটক আছি। এসময়ের মধ্যে আমাকে কোনও নথিপত্র দেওয়া হয়নি। একটি কাগজও দেওয়া হয়নি। ’

তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরাতো আপনাকে বারবার বলেছি আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার জন্য। ’

জবাবে সাকা চৌধুরী বলেন, ‘আমি আইনজীবী নিয়োগ দেবো না। ট্রাইব্যুনালের যে বিধিমালা তার আওতায় আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রাখতে পারি। আমি ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের ক্যাঙ্গারু কোর্টের মুখোমুখি হয়েছি। তাও আমি নিজেই মোকাবেলা করেছি। ’

এসময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘মি চৌধুরী, প্লিজ ডোন্ট ডু পলিটিকস হেয়ার, দিস ইজ দ্য কোর্ট। ’

এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দাঁড়িয়ে সাকা চৌধুরীর বক্তব্য না গ্রহণ করার জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আর্জি জানান।

তখন সাকা চৌধুরী উত্তেজিত কন্ঠে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হু আর ইউ?  ইউ আর অলসো ফ্রম গণ আদালত। ’

তিনি বলেন, ‘আমিতো কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকি না। আমি থাকি কাশিমপুর কারাগারে। একটা তিনতলা ভবনে আমি একা একা থাকি। সেখানে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। র‌্যাবের ইন্টলিজেন্স উইসংকে আমি স্বাগত জানাই। যারা গণ আদালতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারাও আসতে পারেন। তাদের কাছেও অনেক তথ্য আছে। সেখানেতো একবার আমাদের ফাঁসি হয়েছেই। এক খাসি কয়বার কোরবানি করবেন?’

বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে যদি জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয় তবে জেলগেটে জিজ্ঞাসা করতে হবে। জেল কর্তৃপক্ষের কোন অযুহাত চলবে না। ’

তার বক্তব্যের শেষ দিকে তিনি উত্তেজিত হয়ে বক্তব্য দিতে চাইলে ট্রাইব্যুনাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল ট্রাইব্যুনালকে লক্ষ করে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘ইজ হি অ্যান ইল ম্যান? হি ইজ প্রিটেনডিং টু বি অ্যান ইল ম্যান। ’
 
ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে বলেন, ‘সে তার স্বভাবসুলভ ভান করেছে। তার কণ্ঠ ছিল স্পষ্ট। কোন অসুস্থ ব্যক্তির পক্ষে এভাবে চিৎকার করে কথা বলা সম্ভব নয়। ’

এরপর প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপুকে ডেকে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আজও অভিযুক্ত ব্যক্তিকে এখানে আনতে ১ ঘণ্টা দেরি হয়েছে। শুধু এবারই প্রথম নয়, নিকট অতীতের এমন হয়েছে। উই এক্সপ্রেস আওয়ার ডিপ ডিস্স্যাটিসফ্যাকশন। ’

ভবিষ্যতে যেন এমনটা আর না হয় তা নিশ্চিত করতে এ বিষয়ে আইজি প্রিজন এবং স্বরাষ্ট্র সচিবকে অবহিত করারও নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

বাংলাদেশ সময় ১৮৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad