ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অভিযোগ: এমভি হাং রো বংকে পরিকল্পিতভাবে ডোবানো হয়েছে

রমেন দাশগুপ্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১১
অভিযোগ: এমভি হাং রো বংকে পরিকল্পিতভাবে ডোবানো হয়েছে

চট্টগ্রাম: উত্তর কোরীয় জাহাজ এমভি হাং রো বংকে পরিকল্পিতভাবে ডোবানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এর মালিক শিনহুয়া শিপিং কোম্পানির বাংলাদেশি এজেন্ট ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন আব্দুল কাদির।

মঙ্গলবার দুপুরে তিনি বাংলানিউজের কাছে এ অভিযোগ করেন।



তিনি বলেন, ‘জাহাজটি ডুবে যাওয়ার আগে ক্যাপ্টেন বারবার টেলিফোনে বার্জ পাঠানোর জন্য বন্দরের কন্ট্রোল রুমে অনুরোধবার্তা পাঠান। কিন্তু বার্জ পাঠানো হয়নি। এমনকি স্থানীয় শিপিং এজেন্টেরও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। ’

এ ব্যাপারে জাহাজমালিক লিখিত অভিযোগ করতে চাইলেও দেশ এবং বন্দরের ভাবমূর্তির স্বার্থে অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি তাকে অনুরোধ করেছেন বলে জানান।

কেন জাহাজটি ডোবানো হল—এ প্রশ্নের জবাবে ক্যাপ্টেন কাদির বলেন, ‘জাহাজ ডুবলে বন্দর কর্তৃপক্ষের লাভ। তারা উদ্ধারের নামে ১০ টাকার কাজ ১০ হাজার টাকা দিয়ে করে কমিশন হাতিয়ে নেয়। ’

তবে অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন বন্দরের সচিব সৈয়দ মো. ফরহাদউদ্দিন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বন্দর চলবে বন্দরের নিজস্ব আইনে। কারও কোনও অভিযোগ থাকলে সেটা লিখিতভাবে দিলে খতিয়ে দেখা যায়। ’

এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে দুর্ঘটনাকবলিত এমভি হাং রো বংয়ের সাগরে ভাসার আর কোনও সম্ভাবনা নেই। উদ্ধারের পর জাহাজটি স্ক্র্যাপে পরিণত হবে বলে জানিয়েছে জাহাজটির উদ্ধারকারী সংস্থা। জাহাজটির মালিকপক্ষও এ ব্যাপারে নিশ্চিত।

মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে এবং জাহাজটির উদ্ধারকারী সংস্থা ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এ অবস্থায় স্ক্র্যাপ হিসেবে প্রায় ২৫ বছরের পুরনো হাং রো বং জাহাজটির মালিকপক্ষ দাম নির্ধারণ করেছে ১০ কোটি টাকা। তবে উদ্ধারের পর জাহাজটির দাম ১০ কোটি টাকা হবে কি-না তা নিয়ে সন্দিহান উদ্ধারকারী সংস্থা প্রান্তিক বেঙ্গল সালভেজ অ্যান্ড ডাইভিং।

উদ্ধারকারী সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. গোলাম সরওয়ার বাংলানিউজকে বলেন, ‘জাহাজটিতে যে পরিমাণ সমুদ্রের লোনা জল ঢুকেছে তাতে এর কোনও ইক্যুইপমেন্টই আর ঠিক থাকার কথা নয়। আমরা চেষ্টা করব এর কোনও ক্ষতি না করে পরিপূর্ণভাবে উদ্ধারের। কিন্তু এরপরও জাহাজটি আর সাগরে চলাচলের উপযোগী থাকবে বলে মনে হয় না। ’

জাহাজ মালিকের প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন আব্দুল কাদির বাংলানিউজকে বলেন, ‘জাহাজটির লাইট বোট, বয়া সব চুরি হয়ে গেছে। ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেছে। এটি কার্যত স্ক্র্যাপেই পরিণত হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা জাহাজটির দাম ১০ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছি। স্ক্র্যাপ হিসেবে জাহাজটিকে বিক্রি করলে আমরা শুধু চার হাজার টন লোহার দাম পাব। ’

দুপুরে মাঝ সমুদ্রে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, জাহাজটির তেমন কোনও উদ্ধার তৎপরতা নেই। মাস্তুল আর ডেকের সামান্য অংশ ছাড়া পুরো জাহাজইি ডুবে আছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার কয়েকজন ডুবুরী সাগরে নেমে জাহাজটির ডুবে থাকা অংশের গভীরতা পরিমাপ করেছেন।

প্রান্তিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সরওয়ার জানান, কাজ শুরুর পর তারা প্রথমে ওই জাহাজে থাকা চাল বের করে আনবেন। এরপর জাহাজটিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে।

মালিকপক্ষ তাদের ৯০ দিন কিংবা সম্ভব না হলে সর্বোচ্চ দেড়’শ দিনের মধ্যে জাহাজ উদ্ধারের সময় দিয়েছে। তবে প্রান্তিক ৯০ দিনের মধ্যেই জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা করবে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল রাতে বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি বঙ্গলংকা নামে একটি মাদার ভ্যাসেলের ধাক্কায় ১৩ হাজার ৪৯২ মেট্রিক টন সরকারি চালবাহী হাং রো বং জাহাজটি আংশিক ডুবে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।