ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

২০১০ সালের প্রথম ৬ মাসে প্রসূতিসেবা পাননি ৮৩ ভাগ গর্ভবতী

সাইদ আরমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১১
২০১০ সালের প্রথম ৬ মাসে প্রসূতিসেবা পাননি ৮৩ ভাগ গর্ভবতী

ঢাকা: ২০১০ সালের প্রথম ৬ মাসে দেশের ৮৩ ভাগ গর্ভবতী মা প্রসূতিসেবা পাননি। এতে গর্ভবতী মায়ের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

বাড়ছে মা ও নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘জরুরি প্রসূতি সেবার আওতা (পারফরমেন্স)-২০১০’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশের ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৬২টি জেলা হাসপাতাল, ৪০১ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৩৫ জেলার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও), ৬২ বেসরকারি হাসপাতাল এবং অন্যান্য ৬৫ সেবা কেন্দ্রসহ ৬৩৯টি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

এতে অর্র্থ সহায়তা দেয় জাতিসংঘ শিশু তহবিল।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মাত্র ১৬ দশমিক ৪৪ ভাগ গর্ভবতী মা প্রসূতিসেবা পাচ্ছেন। তবে সেবাগ্রহীতার হার ২০০৯ সালের তুলনায় আড়াই শতাংশ বাড়লেও সেবার পরিধি রয়ে গেছে মাত্র ৫০ শতাংশে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভবতী মা প্রসবকালে সঠিক সেবা না পেলে তা মা ও নবজাতক উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। তাই প্রসূতি মায়ের পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যসেবার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বরিশাল ও চট্টগ্রামে এ সেবাগ্রহীতার হার আরও কম।

বরিশালে ১২ দশমিক ৮ ভাগ গর্ভবতী মা জরুরি প্রসূতিসেবা পান। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে সেবাগ্রহীতার হার ১২ দশমিক ১০ ভাগ। ফলে বিভাগ দু‘টিতে নবজাতক মৃত্যুর হারও বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ শতাংশ গর্ভবতী মা জরুরি প্রসূতিসেবা কেন্দ্র থেকে সেবা নেন। তবে সরকারি- বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবার আওতায় এ সেবা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ঢাকায় ও সিলেটে প্রসূতিসেবা পান ১৬ ভাগ গর্ভবতী মা, রংপুর ও রাজশাহীতে ২০ ভাগ। আর খুলনায় ১৮ ভাগ গর্ভবতী মা এ সেবা পান।

তথ্য মতে, উল্লেখিত সময়ে সারা দেশে প্রসবকালে জরুরি প্রসূতিসেবা কেন্দ্রে ৯৬০ নবজাতক মারা যায়। আর একই সময়ে সারা দেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ৭০১ জন মা মারা যান।

তবে সবচেয়ে বেশি নবজাতকের মৃত্যু হয় বরিশালে। কিন্তু চট্টগ্রামে মা ও শিশু উভয়ের মারা যাওয়ার সংখ্যা অন্য বিভাগগুলোর তুলনায় বেশি।

প্রতিবেদন অনুসারে, বরিশালে সেবাগ্রহীতা ১২ হাজার ৬১ জন গর্ভবতী মায়ের মধ্যে ৭০ জন মারা যান। আর মারা যাওয়া নবজাতকের সংখ্যা ২২৪।

চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৬ হাজার প্রসবের ঘটনায় মা মারা গেছেন ১২৩ জন। মৃত নবজাতকের সংখ্যা ২১৭।  

অন্যদিকে মিট নিড (সেবার পরিধি) জরুরি প্রসূতিসেবার হার ৪৯ ভাগ। জাতিসংঘের মানের চেয়ে ৫০ ভাগ কম। এদিক থেকে পিছিয়ে আছে রংপুর ও চট্টগ্রাম।

তথ্য মতে, বরিশালে মিট নিডের হার ৪৬ ভাগ, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ৩৭ ভাগ, ঢাকায় ৬০ ভাগ, খুলনায় ৪৯ ভাগ, রাজশাহীতে ৪৬ ভাগ এবং সিলেটে ৫৯ ভাগ।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রবসকালে জটিলতার হার ২০০৯ সালের তুলনায় বেড়েছে। ২০১০ সালে এর গড় হার দশমিক ৬৩ ভাগ। ২০০৯ সালে ছিল দশমিক ৬০ ভাগ।

জাতিসংঘের মান অনুযায়ী এ হার ১ এর নিচে হতে হবে। এদিকে থেকে এ হার সন্তোষজনক। তবে বরিশাল ও সিলেটে এ হার এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। যথাক্রমে ১ দশমিক এক ও এক দশমিক ৩৮ ভাগ।

প্রতিবেদনে কয়েকটি সুপারশিও করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, জরুরি প্রসূতি সেবার পরিধি বাড়ানো, প্রয়োজনীয় জনবল নিশ্চিত করা এবং নিয়মিত তদারকি।  

প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সায়েবা আকতার বাংলানিউজকে বলেন, প্রসবকালে মা সঠিক সেবা না পেলে তা মা ও নবজাতক উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।

তিনি বলেন, অদক্ষভাবে প্রসব হলে প্রসবে সময় বেশি লাগতে পারে। এতে নবজাতকের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। নবজাতকের মাথায় রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট ও ইনফেনশন হতে পারে। এতে করে জন্মের পরই শিশু মারা যেতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বাংলানিউজকে বলেন, অতি দরিদ্র শ্রেণীর লোকেরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে যেমন বঞ্চিত তেমনি তারা প্রসূতিসেবাও ঠিক মতো পায় না।

একই চিত্র শহরের হতদরিদ্র মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘ধীরে ধীরে সচেতনতা বাড়লেও এখনও অনেক গর্ভবতী মাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না। ’

এজন্য সচেতনতা বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে বলে পরামর্শ দেন তিনি।

এেিদক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সিফায়েত উল্লাহ টেলিফোনে বাংলানিউজকে বলেন, সমীক্ষা-২০১০ অনুসারে দেশে মাতৃমৃত্যুর হার তিনশ’ ৪৪ থেকে নেমে ১৯২ তে নেমে এসেছে। সে হিসেবে জরুরি প্রসূতিসেবা গ্রহীতার সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার কথা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, ১৬ এপ্রিল, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।