ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কনটেইনারে শ্রমিক

পরিচয় গোপন করে সিঙ্গাপুর যেতে চেয়েছিল দুই বহিরাগত!

স্টাফ করেসপন্ডেণ্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১১
পরিচয় গোপন করে সিঙ্গাপুর যেতে চেয়েছিল দুই বহিরাগত!

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুরগামী জাহাজের কনটেইনারের ভেতর থেকে উদ্ধার হওয়া দু’শ্রমিকের দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছে না বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থা ও সংগঠনগুলো।

পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় বন্দর কর্মকর্তারা মনে করছেন, পরিচয় গোপন করে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিতভাবে ওই দুই বহিরাগত খালি কনটেইনারে উঠেছিলেন।



চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব সৈয়দ মো. ফরহাদউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘খালি কনটেইনার থেকে উদ্ধার হওয়া দু’জনের পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি। বন্দরে নিয়োগ দেওয়া শ্রমিক এবং বার্থ অপারেটরদের নিয়োগ করা শ্রমিকদের তালিকায়ও তাদের নাম নেই। পরিচয় নিশ্চিত করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেব। ’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম বন্দরের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঘটনার আগে-পরে অন্ততঃ এক সপ্তাহের মধ্যে এ দু’জনের নামে কোনো শ্রমিকের বন্দরের জেটিতে থাকার কথা রেকর্ডে নেই। আমরা ধারণা করছি, পরিচয় গোপন করে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই দু’জন কনটেইনারে উঠেছিলেন। আমাদের ধারণা সত্যি কিনা তা তদন্ত শেষ হলেই বোঝা যাবে। ’

তবে এ ঘটনার পর চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সংরক্ষিত এলাকার জেটি থেকেই ওই দু’শ্রমিক কনটেইনারে উঠেছিল। কনটেইনারটি বন্দরের খালি কনটেইনার ইয়ার্ডে অপেক্ষমান ছিল। কিন্তু তারা কাদের নিয়োগ করা শ্রমিক বা কীভাবে তারা সংরক্ষিত এলাকার ভেতর ঢুকেছিল এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটির কর্মকর্তা ও বন্দর সংশ্লিষ্টদের মতে, খালি কনটেইনারটি যদি বাইরের ডিপো থেকে দু’শ্রমিকসহ সরাসরি এসে জাহাজে উঠত, তাহলে প্রবেশপথে স্ক্যানিং মেশিনে ধরা পড়ত। এতে সহজেই ধারণা করা যায়, বন্দর এলাকার ভেতর জেটি থেকেই কনটেইনারটি লাইবেরীয় পতাকাবাহী হান্্সা ক্যালেডোনিয়া জাহাজে উঠেছিল।

আর যদি কনটেইনারটি স্ক্যানিং করা না হয়ে থাকলে তা ছিল নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা --বন্দর সংশ্লিষ্টদের এমনটাই অভিমত।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের বেসরকারি বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বার্থ অপারেটরদের নিয়োগ করা শ্রমিক হলে সহজেই চিহ্নিত হতো। কারণ তাদের বিভিন্ন সংগঠন আছে, নেতারাই এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতো। বেসরকারি ডিপো থেকে এলে প্রবেশপথে স্ক্যানিং মেশিনে ধরা পড়ত। তাই এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, জেটি থেকেই দু’শ্রমিক কনটেইনারের ভেতর ঢুকেছিল। ’

খালি কনটেইনার ইয়ার্ড থেকে কনটেইনারে ওঠার বিষয়ে বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ইয়ার্ডের যেখানে খালি কনটেইনার থাকে, সেখানে প্রবেশ খুব সোজা বিষয় নয়। যদি সেখান থেকে কনটেইনারে ওঠার বিষয়টি সঠিক হয়, তাহলে তদন্ত করে দেখতে হবে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে কীভাবে পরিচয়পত্র ছাড়া তারা সেখানে গেল। ’

এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির প্রধান ও চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন নাজমুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর এখন সবাই তাদের অস্বীকার করছে। তবে জীবিত দীন ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে পারলেই পুরো বিষয়টি সম্বন্ধে খোলাসা হওয়া যেত। ’

নাজমুল আলম বাংলানিউজকে জানান, কনটেইনারটির মালিক প্রতিষ্ঠান কোনটি, কনটেইনারের নম্বর কত, সর্বশেষ কোন ইয়ার্ড থেকে এসেছিল এসব বিষয় নিয়ে তারা তদন্ত করছেন। এসব বিষয় নিশ্চিত হলে দু’জনের পরিচয়ও পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন।

এর আগে গত ১৭ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে কনটেইনারবাহী জাহাজ হান্সাা ক্যালেডোনিয়া। ২০ মার্চ এক হাজার দু’শ কনটেইনার নিয়ে সেটি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ওই জাহাজের একটি খালি কনটেইনারের মধ্যে আটকা পড়েন দু’শ্রমিক আলমগীর ও দীন ইসলাম।    

গত ১০ এপ্রিল রাতে সিঙ্গাপুরের পাসির পানজাং টার্মিনালের কর্মীরা কনটেইনার খুলে মৃত অবস্থায় আলমগীরকে এবং কঙ্কালসার অবস্থায় দীন ইসলামকে দেখতে পায়।

দীন ইসলাম বর্তমানে সিঙ্গাপুরের আলেকসান্দ্রা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এ ঘটনায় চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন নাজমুল আলমকে প্রধান করে গঠিত একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে।

কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- বন্দরের উপ-পরিচালক (নিরাপত্তা) লে. কমান্ডার আকরাম হোসেন, টার্মিনাল ম্যানেজার এনাম আহমেদ এবং প্রধান নিরীক্ষক হাবিবুর রহমান।

বাংলাদেশ সময় : ১৬১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।