ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কবি গুরুর রম্যভূমিতে একুশে পদক

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫
কবি গুরুর রম্যভূমিতে একুশে পদক

রামু (কক্সবাজার): বিশ্বকবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজর্ষি গ্রন্থের রম্যভূমিতে কক্সবাজারের রামু উপজেলার কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের সমাজসেবায় ২০১৫ সালের একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
 
এর আগে তৃতীয় বাংলাদেশি বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে ২০০৩ সালে মায়ানমার সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘অ¹মহাসদ্ধম্মজ্যোতিকধ্বজ’ উপাধি লাভ করেন শ্রীমৎ সত্যপ্রিয় মহাথের।


 
রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালের একুশে পদকের জন্য সত্যপ্রিয় মহাথেরসহ ১৫ জনকে মনোনীত করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সমাজ সেবায় সত্যপ্রিয় মহাথের ছাড়াও ঝর্ণাধারা চৌধুরী, অধ্যাপক ড. অরুপ রতন চৌধুরীও মনোনীত হয়েছেন।

৮৫ বছরের বেশি বয়স্ক বৌদ্ধ মনিষা ও বিনয়াচার্য বৌদ্ধ ভিক্ষু পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।

একুশে পদকের জন্য মনোনীত শ্রীমৎ সত্যপ্রিয় মহাথের বাংলানিউজকে উৎফুল্ল কন্ঠে বলেন, আমি অত্যন্ত গর্বিত ও ধন্য হয়েছি। এ রাষ্ট্রীয় সম্মানে আমি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলিমসহ সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
 
তিনি বলেন, এ অর্জন ১৯৫০ সাল থেকে আমার ৬৫ বছর ভিক্ষুত্ব জীবনের এবং বর্তমান পরিস্থিতি পর্যন্ত সমাজ পরিবর্তনের স্বীকৃতি।
 
তিনি আরও বলেন, আমি সমাজের পিছিয়ে পড়া ও অবহেলিত মানুষের মাঝে শিক্ষা বিস্তারে এবং গরীব-দুঃখী মানুষের কল্যাণে আজীবন কাজ করেছি। এখন মানুষ শিক্ষা-দীক্ষায়, ধন-সম্পদ ও ব্যবসা বাণিজ্যের দিক দিয়ে অনেক উন্নত।  

২০০৫ সালে ভারতের দিল্লীতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ মহাসম্মেলনে সমাজসেবায় অবদান রাখায় তাকে বিশেষ সম্মান দেন ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবুল কালাম। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক অনুষ্ঠানে সত্যপ্রিয় মহাথেরকে বিশেষ সম্মাননা দেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শান্তি পুরস্কার লাভ ও বাংলাদেশি বৌদ্ধদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন বৌদ্ধ সমিতি, বুদ্ধিষ্ট ফেডারেশনসহ অসংখ্য সম্মাননা অর্জন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বৌদ্ধ ভিক্ষু শ্রীমৎ সত্যপ্রিয় মহাথের।

সংসার ত্যাগী সত্যপ্রিয় মহাথের ১৯৩০ সালের ১০ জুন কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের পশ্চিম মেরংলোয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা প্রয়াত হরকুমার বড়ুয়া ও মাতা প্রেমময়ী বড়ুয়া।

রামু সীমা বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ সত্যপ্রিয় মহাথের ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আরেক বৌদ্ধ মহাপুরূষ বিনয়াচার্য আর্যবংশ মহাথেরর কাছে প্রব্রজ্যা গ্রহণ (গৃহজীবন ত্যাগ) করে সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হন। এর ৬ মাস পরই পবিত্র মাঘী পূর্ণিমার দিনে তিনি উপ-সম্পদা (ভিক্ষুত্ব) গ্রহণ করেন।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সত্যপ্রিয় মহাথের ১৯৫৫ সালে মায়ানমারের ধর্মদূত পালি কলেজে অগ্রমহাপন্ডিত উ. বিশুদ্ধায়ু মহাথের ও প্রজ্ঞালোক মহাথেরর কাছে পালি ভাষা ও বিনয় শিক্ষা লাভ করেন। এ মহান পূণ্যপুরূষ পৃথিবীর বহু ভাষায় পারদর্শী। বুদ্ধ ধর্মের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ পালি ভাষার মূল ত্রিপিটকের বিভিন্ন অধ্যায় থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেন সত্যপ্রিয় মহাথের।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধেও অসাধারণ সাহসী ভূমিকা রাখেন শ্রীমৎ সত্যপ্রিয় মহাথের। যুদ্ধ-চলাকালীন তিনি এলাকার সহস্রাধিক অসহায় ও নির্যাতিন মানুষকে ঐতিহ্যপূর্ণ  পুরাতন কাঠের সীমা বিহারে আশ্রয় দেন। এ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাথেও বাকবিকন্ডা হয় এ বৌদ্ধ ভিক্ষুর।

দেশের সবচেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায় ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে কক্সবাজারে রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও পটিয়ার লাখেরায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার পর গৌতম বুদ্ধের সাম্য-মৈত্রী ও অহিংসার বাণীকে সর্বময় ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সত্যপ্রিয় মহাথেরর। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনঃস্থাপনসহ বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে অন্যন্য ভূমিকা পালন করছেন তিনি।

একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হওয়া ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে বাংলাদেশের সঙ্গে বর্হিবিশ্বের সুসম্পর্ক স্থাপনে কাজ করে চলেছেন মানবদরদী ও দেশপ্রেমিক পূণ্যপুরুষ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের।   

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।