ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বর্ষবরণ: রাজশাহীতে সাজ সাজ রব

শরীফ সুমন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১১
বর্ষবরণ: রাজশাহীতে সাজ সাজ রব

রাজশাহী: বাংলার প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখকে ঘিরে রাজশাহী মহানগরীতে এখন সাজ সাজ রব। বাংলা মাসের প্রথম এই দিনটিকে বরণ করে নিতে মহাআয়োজন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে নগরবাসী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক ও সাস্কৃতিক সংগঠনগুলো।



নববর্ষকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে ঈদ ও পুজোর মতোই নতুন কাপড় কেনার ধুম পড়েছে রাজশাহী মহানগরীর মার্কেটগুলোতে। শখের পান্তা-ইলিশ খাওয়ার আয়োজনও চলছে বেশ জোরেসোরে। আজ চৈত্রের শেষদিন। রাত পোহালেই বাংলা ১৪১৭ সালকে বিদায় জানিয়ে ১৪১৮ সালের নয়া সূর্যের উদয় হবে।

তবে এর আগে ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ১ মিনিট অতিক্রম করলে আতশবাজি ফুটিয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেবে নগরবাসী। নতুন বছরের প্রথম দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে শহরজুড়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আর এই প্রস্তুতির জোয়ারে নগরীর গলি  থেকে রাজপথে  বইছে উৎসবের আমেজ।

রাজশাহী নগরীর বিনোদন স্পটসহ নগরীর প্রধান প্রধান মোড়গুলো সাজানো হচ্ছে নতুন রূপে। রাস্তা ও ডিভাইডারে আঁকা হয়েছে নানা রঙ আর নকশার আলপনা। নগরীর অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সামনে নির্মাণ করা হয়েছে সুদৃশ্য তোরণ যা খুব সহজেই নগরবাসীর দৃষ্টি কাড়ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের এক ঝাঁক শিক্ষার্থী বেশ কয়েক দিন ধরে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মনোমুগ্ধকর করে সাজাতে। রয়েল  বঙ্গল টাইগার থেকে শুরু করে নান প্রজাতির প্রাণীর প্রতিকৃতি, মুখ ও মুখোশ তৈরি নিয়ে এখন তারা প্রচ- ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। একই সঙ্গে রাজশাহী আর্ট কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও পিছিয়ে নেই। তারাও সাধ্য মতো কাজ করে যাচ্ছেন।

বিপণী বিতানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, পহেলা বৈশাখে নিজেকে স্বতন্ত্র এবং নতুনভাবে উপস্থাপন করতে এবার যেন আগেরবারের চেয়ে আরও বেশি ব্যাকুল হয়ে পড়েছে তরুণী-শিশুসহ ছেলে-বুড়ো সবাই। ঈদ ও পুজোর মতোই নতুন কাপড় কেনার ধুম পড়েছে মার্কেটগুলিতে। বাংলার ঐতিহ্য কুলা, ঢেঁকি, মাথল, ডুগি, তবলা, একতারা অংকন করা লালপেড়ে সাদাশাড়ী, ফতুয়া, পাঞ্জাবী  কিনতে নগরীর প্রধান প্রধান মার্কেটগুলিতে তরুণ-তরুণীদের যেন ঢল নেমেছে।

মাঝ বয়সীরাও পিছিয়ে নেই বৈশাখী উৎসবের আয়োজন থেকে। তারাও কিছেন সাধ্যমত পোশাক-পরিচ্ছদ।

এদিকে নগরীর মার্কেটগুলিতে সাধারণ সুতি শাড়ী বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ টাকা থেকে ১৭৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে ৮শ’ থেকে হাজার টাকা দামের শাড়ীর বিক্রি বেশি বলে জানিয়েছেন আরডিএ মার্কেটের শাড়ীর ভূবন দোকানের মালিক শাহাবুদ্দিন।

এছাড়া শিশুদের জন্য নববর্ষের বাহারি ডিজাইনের পোশাক বিক্রি হচ্ছে দেড়শ’ থেকে ৬শ’ টাকায়, বড়দের ফতুয়া ২শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা। ছোটদের ফতুয়া ৭০টাকা থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা।

তবে পহেলা বৈশাখে বাঙালির এই প্রাণের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ পান্তা-ইলিশ এর প্রধান অনুষঙ্গ ইলিশের বাজার এবার বেশ চড়া। নগরীর নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ পান্তার দেখা খুব সহজে পেলেও তাদের পক্ষে ইলিশের স্বাদ নেওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। ছোট জাটকার দামও ৩শ’ টাকা কেজি ছাড়িয়েছে। বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ টাকা কেজির উপরে। তাই পান্তা ইলিশ খাওয়ার আকাক্সক্ষা নগরীর অধিকাংশ মানুষেরই এবার পূরণ হচ্ছে না।

এদিকে বাংলা নববর্ষ পালনের জন্য রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিনভর নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ, নিউ. ডিগ্রি কলেজ এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের গ্রীণ প্লাজাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাস্কৃতিক সংগঠন বণার্ঢ্য শোভাযাত্রা, নাচ, গান, নাটক, কবিতা পাঠের আসরের পাশাপাশি মেলারও আয়োজন করেছে। এরই মধ্যে কোথাও কোথাও পোড়ামাটির গহনাসহ অন্যান্য পণ্যের মেলা শুরু হয়ে গেছে নববর্ষ শুরুর কয়েকদিন আগে থেকে।

এদিকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নগরী জুড়ে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে নগরী জুড়ে নির্বিঘেœ বর্ষবরণের উৎসব পালনে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কয়েকদিন আগে থেকেই।

মহানগর পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, নববষর্ষে নগরীজুড়ে প্রায় তিন হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবে। পাশে থাকবে র‌্যাব। এছাড়া রাজশাহী নগরীর চারটি থানা এলাকাসহ সব ফাঁড়িতে বৈশাখী অনুষ্ঠানে বাড়তি সতর্কতা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে শহরের ব্যস্ততম সড়কে অতিরিক্ত পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। নগরীর প্রাণ কেন্দ্র সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট, মনি চত্ত্বর, বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন, লক্ষিপুর, তালাইমারী শহীদ মিনার রোড, সরকারি অফিস-আদালত এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকাসহ আরো কয়েকটি এলাকায় কঠোর নিড়াপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা শাখার সদস্যরাও এসব এলাকায় নজরদারী বৃদ্ধি করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।