ঢাকা: বিশাল আকৃতির কুমির। হাঁ-করে আছে।
কুমিরটির আগাগোড়া স্বচ্ছ। তাই এর পেটের ভেতরে দেখা যাচ্ছে হাড়-গোড়, মানুষের খুলি।
আর এ কুমিরটির অশুভ কর্মকা- থামাতে বর্শা হাতে এর ওপর হামলে পড়েছেন জনাকয় যুবক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে গেলেই এ দৃশ্যটি এখন সবার নজর কাড়বে। খড় ও বাঁশের চাটাই দিয়ে অতিকায় এ কুমিরটিকে তৈরি করছে চারুকলার শিক্ষার্থীরা। চারুকলার ঐতিহ্যবাহী মঙ্গলশোভাযাত্রায় শোভা পাবে এটি।
কুমিরটি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, প্রগতিবিরোধী, ধর্মান্ধ অপশক্তির প্রতীক । এর পেটের ভেতরের হাড়গোড় ও খুলি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার- আলবদর আর আল শামস ও পাকি হানাদারদের হত্যাযজ্ঞ বিভৎসতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ঢাবির চারুকলা অনুষদের শিক্ষক শিল্পী নিসার হোসেনের ড্রইংয়ে তৈরি হচ্ছে লোকজধারার এ শিল্পকর্ম।
চারুকলার কয়েকজন শিক্ষক ও সিনিয়র ছাত্রদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা প্রায় শেষ করে এনেছেন এটি তৈরির কাজ।
কুমিরটি তৈরির কাজ করছেন এমন একজন হচ্ছেন অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী চঞ্চল কর্মকার।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন,‘এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল আকর্ষণ হলো এই কুমীর। এর মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানপন্থি রাজাকার-আল বদরদের কদর্য চেহারাটাই ফুটিয়ে তুলেছি। একই সঙ্গে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিও তুলেছি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য সরকারের যতটা কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল তা তারা নিচ্ছে না। তাই এই কুমিরকে বর্শাবিদ্ধ করে আমরা প্রতীকীভাবে যুদ্ধাপরাধীদের নিশ্চিহ্ন করতে চাইছি। ’
চারুকলার শিক্ষার্থী মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, কুমিরের পেটে হাড়-গোড় ও খুলির মাধ্যমে একাত্তর সালে পাকিস্তানিদের গণহত্যার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আমরা চাই মানুষ এসব দেখুক আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আরও সোচ্চার হোক। ’
এছাড়া আরও বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরিতে প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত কাজ করছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা।
কেউ কাগজ কেটে মুখোশ বানাচ্ছেন, আবার কেউ ছাঁচে ফেলে তৈরি করছেন ম্যাশ কাগজের মুখোশ।
এসব মুখোশে ফুটে উঠছে বাঘের মুখ, রাজা-রাণী-উজির-নাজিরের মুখ, টেপা পুতুলের মুখ, পেঁচা, খরগোশ, ছোট পাখি, চশমা প্রভৃতি।
অনুষদের জয়নুল গ্যালারির সামনে একপাশে শিক্ষার্থীরা জল রঙে নদী, বন-জঙ্গলসহ নানা বিষয়ের ছবি আঁকছেন।
পাশেই মাটির হাতি, বাঘের মুখে বকের ঠোঁট, মাছ, ঘোড়া, গ্রাম্যবধু, ময়ূর, নৌকা, মাছ ইত্যাদিকে তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে জীবন্ত করে তোলা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা জানালেন, ঐতিহ্যবাহী সকল উপাদানের পাশাপাশি মঙ্গল শোভাযাত্রায় কুমিরটি সবচে গুরুত্ব পাবে। লাখো মানুষের এই শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১১