ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রমাণ পেয়েছে আইসিটি তদন্ত দল

মুক্তিযুদ্ধে গুডস হিল ছিল ‘টর্চার সেল’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১১
মুক্তিযুদ্ধে গুডস হিল ছিল ‘টর্চার সেল’

চট্টগ্রাম: গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাসভবন চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত ‘গুডস হিল’ একাত্তরে পাকিস্তানি সেনা এবং তাদের এদেশীয় রাজাকার-আলবদর- আলশামস বাহিনীর ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং একাত্তরের তৎকালীন মুসলিম লীগের নেতা-কর্মীদের হাতে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের সাক্ষ্যে এর নিশ্চিত প্রমাণ পেয়েছেন একাত্তরের মানবতাবিরোধী আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের তদন্ত দলের সদস্যরা।



একাত্তরে গুডস হিলে নির্যাতনের শিকার চট্টগ্রামের প্রবীণ ব্যবসায়ী নেতা ম.সলিমুল্লাহ’র সাক্ষ্যে নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে এ বাড়িটির নাম আসার পর মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় ওই বাসায় যান ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা।

সঙ্গে ছিলেন ম.সলিমুল্লাহ নিজেও।

গুডস হিলের মোটর গ্যারেজ এবং পাহাড়ের ওপর পারিবারিক তিনটি বাসার মধ্যে সালাহউদ্দিন কাদের বর্তমানে যে বাসায় অবস্থান করেন সেগুলো একাত্তরে টর্চার সেল ছিল বলে সলিমুল্লাাহ ট্রাইব্যুনালের সদস্যদের সামনে শনাক্ত করেন।

এসময় তিনি মোটর গ্যারেজের একটি কক্ষ দেখিয়ে দিয়ে জানান, নীচের তলার এ কক্ষে তাকে আটক করে রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল। পাশের আরেকটি কক্ষ থেকে তিনি নির্যাতনের ফলে গোঙানির শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন।

তিনি জানান, গ্যারেজের উপরের তলায় পাকিস্তানি সেনারা থাকতো।

সলিমুল্লাহ শনাক্ত করার পর ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের সদস্যরা মোটর গ্যারেজ এবং গুডস হিল ঘুরে ঘুরে দেখেন।

পরে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলে নেতৃত্ব দেওয়া সদস্য এএসপি পদমর্যাদার নুরুল ইসলাম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘গুডস হিলের মোটর গ্যারেজের নিচতলা যে একাত্তরে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এ সেলের মধ্যে অসহায় বাঙালীদের ধরে এনে আটক করে রাখা হতো। এরপর পাকিস্তানি সেনাদের এদেশীয় দালালদের সুপারিশে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো। ’

টর্চার সেলের সঙ্গে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাড়িটি ফজলুল কাদের চৌধুরীর। আর তার বড় ছেলে হচ্ছেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার আছেন। আমরা ওই তদন্তের অংশ হিসেবেই এ বাড়িতে এসেছি। ’

এর আগে বিকেল পৌনে পাঁচটায় গুডস হিলে পৌঁছানোর পর ঢোকার পথে প্রথমে পুলিশ ও তদন্ত দলের সদস্যদের মালিকের নির্দেশের কথা বলে বাধা দেন ওই বাসার প্রবেশপথে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা।

পরে আজিজুল হক নামে ওই বাড়ির একজন তত্ত্বাবধানকারী মুঠোফোনে কথা বলে প্রবেশপথ থেকে বাধা সরিয়ে নেন।

আজিজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাইফুদ্দিন কাদের সাহেবের (সাকা চৌধুরীর ছোট ভাই) স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে তারপর বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছি। ’

তবে এসময় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার ভাইদের পরিবারের কেউই বাসায়  উপস্থিত ছিলেন না।

ট্রাইব্যুনালের পরিদর্শনের আগে গুডস হিলের আশপাশের এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে তদন্ত শেষ করে গুডস হিল ত্যাগ করেন ট্রাইব্যুনাল সদস্যরা।

গত বৃহস্পতিবার সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গণহত্যা সহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্তে চট্টগ্রাম যান একাত্তরের মানবতাবিরোধী আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চার সদস্য এবং প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।

শনিবার ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের চার সদস্য চট্টগ্রামের রাউজানের কুন্ডেশ্বরী, জগৎমল্লপাড়া, উনসত্তর পাড়া এবং রাঙ্গুনীয়ার বেতাগীতে গিয়ে একাত্তরে সাকা চৌধুরীসহ রাজাকারদের হত্যা, লুণ্ঠণ, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন এবং গণহত্যার বিষয়ে কয়েকজন প্রত্যক্ষদশীর বক্তব্য নেন।

সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সংক্রান্ত বেশকিছু সাক্ষ্যপ্রমাণ ও আলামত নিয়ে শনিবার রাতেই আইজি মর্যাদার দু’সদস্য আব্দুল হান্নান খান ও সানাউল হক চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন।

ট্রাইব্যুনালের বাকী দু’সদস্য এএসপি নুরূল ইসলাম এবং পুলিশ পরিদর্শক ওবায়েদ উল্লাহ বর্তমানে চট্টগ্রামে অবস্থান করে তদন্ত করছেন।

এ নিয়ে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে গিয়ে চার দফা তদন্ত করছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

উল্লেখ্য, সাকা চৌধুরী বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় কারাগারে রয়েছেন। গত ১৬ ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।