ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

১০ বছর ধরে ঝুলে আছে রমনা বোমা হামলার বিচার

মবিনুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১১
১০ বছর ধরে ঝুলে আছে রমনা বোমা হামলার বিচার

ঢাকা: ১০ বছরেও শেষ হয়টি রমনা বটমূলে বোমা হামলার বিচার। বাংলা ১৪০৮ সনের পহেলা বৈশাখ ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জঙ্গিরা ভয়াবহ এক বোমা হামলা চালায়।

হামলায় ১০ ব্যক্তি প্রাণ হারান।

সরকার মামলাটি দ্রুত নিস্পত্তির জন্য প্রথমে তোড়জোড় শুরু করলেও বর্তমানে তা হিম ঘরে পাঠানোর অভিযোগ করেছেন মামলার সঙ্গে জড়িত আসামিপক্ষের এক আইনজীবী।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল বাবুপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলাটি করেন।

ঘটনার ৮ বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ নবেম্বর মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট  দেওয়া হয়।

অন্য ১৩ আসামি হলেন- আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা আকবর হোসেন, শাহাদাত উল্লা জুয়েল, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আব্দুর রউফ, মাওলানা মো. তাজউদ্দিন, মাওলানা সাব্বির, মাওলানা শওকাত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফিজ জাহাঙ্গীর আলম, মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া ও মুফতি আব্দুল হাই।

আসামিদের মধ্যে মুফতি হান্নান, আরিফ হাসান সুমন, শাহাদাত উল্লা জুয়েল, মাওলানা আবু তাহের ও মাওলানা আব্দুর রউফ কারাগারে আটক আছেন। বাকিরা এখনও পলাতক।

এদিকে, চার্জশিট হওয়ার পর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০০৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশ ২০০২ এর ১০ ধারার বিধান মতে ১৩৫ কার্য দিবসের মধ্যে বিচার শেষ করার বিধান রয়েছে।

অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ১৩৫ কার্য দিবসে মামলার ৮০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা গ্রহণ করেও মামলাটি নিষ্পত্তি করতে পারেননি তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারক কানিজ আক্তার নাসরীনা খানম।

১৩৫ কার্য দিবসের বাধ্যবাধকতা থাকায় গত বছরের ২৪ মে তিনি মামলাটি মহাগনর দায়রা জজ আদালতে ফেরত পাঠান।  

এরপর ৬ মাস পর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয় গত বছরের ২৫ নভেম্বর। এদিন মামলার সাক্ষী আদালতে আসলেও আসামি না আসায় সাক্ষ্য গ্রহণ আরও ৬ মাস পিছিয়ে আগামি ৩১ মে ধার্য করা হয়। দু’টি তারিখেই বছর পার।

এভাবে চললে বিচার শেষ হতে অনন্তকাল লেগে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন আসামিপক্ষের সেই আইনজীবী।

মামলাটি বর্তমানে ঢাকা মহানগর দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ ফজিলা বেগমের আদালতে বিচারাধীন আছে।
তবে মামলাটি ফের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো যায় কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগরের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর ও সিনিয়র আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি বাংলানিউজকে জানান, এ ব্যাপারে কোনও বাধা নাই।

তিনি আরও জানান, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশ ২০০২ এর ১০ ধারার ৫ উপ-ধারা বিধান মতে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে ফেরত আসা মামলাটি যে আদালতে বিচারাধীন থাকবে ওই আদালতে বিচারাধীন সব মামলার উপরে ফেরত আসা মামলাটিকে প্রধান্য দিতে হবে।

সমাজি বলেন, এছাড়া ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৩৯ ধারার গ ধারায় মামলা নিষ্পত্তির মেয়াদ বলে দেওয়া আছে। ৬ মাস পরপর মামলার তারিখ দেওয়া স্পষ্টতই বিধান দুটির লংঘন। তবে ওই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব ছিল বিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরা।

আসামিপক্ষের অন্যতম সিনিয়র আইনজীবী আমিনুল গণী টিটোর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান আদালতের সব মামলার ওপরে দ্রুত বিচার ট্্রাইব্যুনাল থেকে ফেরত আসা মামলাটিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত ছিল। এভাবে চললে চাঞ্চল্যকর এ মামলা কবে নিষ্পত্তি হবে তা বলা মুশকিল।

অথচ এ মামলার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে কোনও খবরই জানেন না বলে দাবি করেছেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, মামলাটি যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং বর্তমান আদালতে যে ৬ মাস পর পর সাক্ষ্যের জন্য দিন ধার্য করা হচ্ছে তা তিনি জানতেনই না।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর কিংবা বর্তমান আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কেউই বিষয়টি তাকে জানাননি বলে দাবি করেন তিনি।

এ সময় তিনি মামলাটি ফের দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করবেন বলে বাংলানিউজকে জানান।

সেইসঙ্গে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘এবার আমি নিজেই প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করব। ’আসামিদের মধ্যে জামিনে আছেন মাওলানা আকবর হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।