ঢাকা: সারাদেশে শুধু ২০১০ সালেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ২০৬ টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের। এর আগে ১৯৮২ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত (অধ্যাদেশ পাসের পর) ২৭ বছরে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে দু‘হাজার ৪২২টি বেসরকারি হাসপাতালকে।
আইনি সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ্য করে বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সিফায়েতউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘১৯৯৮ সালে যে অধ্যাদেশটি করা হয়েছিলো তা দিয়ে সহজেই লাইসেন্স নিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসা সেবা সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা। কিন্তু ওই আইনে তাদের মান নিয়ন্ত্রের ক্ষমতা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে খুবই কম দেওয়া হয়েছে।
দপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, ঢাকার বাইরে বেসরকারি হাসপাতালের কার্যক্রম মনিটরিং-এর দায়িত্ব দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনকে। কিন্তু সিভিল সার্জনরা তাদের কাজের ব্যস্ততার কারণে একাজে নজর দেয়না। ফলে অনুমোদন পাওয়া হাসপাতালগুলো নিয়মিত তদারকি করতে বলেও দু’বছরেও পরিদর্শন প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম নগণ্যই বলে মনে করেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক রশীদ ই মাহবুব বাংলানিউজকে জানান, বেসরকারি হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তবে তাদের মান রক্ষা করতে হবে। এজন্য সরকারের তদারকি কার্যক্রম জোড়দার করতে হবে। মানুষ টাকা খরচ করে সেবা নেবে, তার উপযুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
এজন্য আইনের সংশোধন করে তাদের তদারকির দায়িত্ব স্থানীয় প্রতিনিধি, প্রশাসনকে দেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ভুল চিকিৎসার নজির অনেক। কিন্তু শাস্তির বিধান সীমিত। তাই ভুল চিকিৎসা দিলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে, কী বিচার পাবে তার বিধান রাখতে হবে। ’
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান মতে, গত ২৭ বছরে গড়ে প্রতি বছর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৯০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিককে। গত বছর অনুমোদন পেয়েছে রেকর্ড সংখ্যক ২০৬টি হাসপাতাল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঢাকা বিভাগে ২০১০ সালে অনুমোদন পেয়েছে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৮২টি বেসরকারি হাসপাতাল। বর্তমানে ঢাকা বিভাগে বেসরকারি হাসপাতাল আছে এক হাজার ৮৯টি। নতুন অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে খুলনা বিভাগ। যেখানে এবছর ৪৬ টি নতুন প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
২০১০ সালে রাজশাহী বিভাগে অনুমোদন পেয়েছে ২৫ টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৬টি, রবিশালে ৬টি, সিলেটে ৯টি এবং সর্বশেষ ঘোষিত রংপুরে ১৪টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিককে অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সিফায়েতউল্লাহ জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ১৯৮২ সালের আইনটি সংশোধনের চেষ্ঠা করা হচ্ছে। নানা প্রতিবন্ধতাকায় তা করা সম্ভব হয়নি।
খুব শিগগিরি আইনটির সংশোধনী আনা যাবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১১।