ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

প্যাকেটটি ছিল স্যালাইনের প্যাকেটের মত

বিষক্রিয়ার শিকার ঈশ্বরদীর ১০ শিশু এখন বিপদমুক্ত

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১১
বিষক্রিয়ার শিকার ঈশ্বরদীর ১০ শিশু এখন বিপদমুক্ত

ঈশ্বরদী (পাবনা): ঈশ্বরদীতে খাবার স্যালাইন ভেবে মাছি মারার ওষুধ খেয়ে অসুস্থ্য স্কুল ছাত্ররা সবাই এখন সুস্থ্য হয়ে উঠেছে। তবে বিপদ কেটে গেলেও গত সোমবারের ঘটনার আতঙ্ক এখনও তাদের মন থেকে কাটেনি বলে জানা গেছে।



মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের বাঘইল গ্রামের ২নং বাঘইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ২য় শ্রেণীতে শিশুদের উপস্থিতি অর্ধেকেরও কম।

উল্লেখ্য, এই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ১০জন ছাত্র সোমবার খাবার স্যালাইন মনে করে ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে ফেলেছিল।

এদিকে ঘটনার পর সেলিম নামের স্থানীয় মুদি দোকানি গা ঢাকা দিয়েছে। সে ওই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রের হাতে ইঁদুর মারার বিষ তুলে দিয়েছিল।

বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত স্কুলছাত্র ইসরাফিলের মা সাজেদা বেগম বাংলানিউজকে জানান, তিনি স্থানীয় মুদি দোকানি সেলিমকে আগের দিন মাছি মারার ওষুধ দিতে বলেছিলেন। সোমবার সকালে ইসরাফিল ওই দোকানের সামনে দিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে ব্লিস্টার নামের এক প্যাকেট মাছি মারার বিষ তার হাতে তুলে দেয় দোকানি। ইসরাফিল প্যাকেটটি নিয়ে স্কুলে চলে যায়। ক্লাসের ফঁঅকে একপর্যায়ে বিষের প্যাকেটটি এক বোতল পানিতে মিশিয়ে সহপাঠীদের নিয়ে পান করে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।

মাছি মারার ওই বিষের প্যাকেটটি বাজারে প্রচলিত খাবার স্যালাইনের প্যাকেটের আকৃতি ও মোড়কের মত করে তৈরি বলে জানা গেছে। একারণেই শিশুরা বিষের প্যাকেটকে স্যালাইন বলে ভুল করেছিল।  
 
ঈশ্বরদী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামিউল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খোঁজ করেও দোকানিকে এলাকার কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার দোকানও ঘটনার পর থেকে বন্ধ রয়েছে। ’

কিন্তু বিষের মত চরম ঝুঁকিপূর্ণ আর প্রাণঘাতী পণ্য এভাবে বাজারে ছেড়েছে যে কোম্পানি তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে কাউকেউ আগ্রহী দেখা যাচ্ছে না বলে স্থানীয় অভিভাবক রমিজ উদ্দিন অভিযোগ করেন।    
 
তবে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেনকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, যারা এ ধরনের কাজ করছে তাদের খুঁজে বের করে অবশ্যই আইনের কাছে সোপর্দ করা হবে।

এদিকে ঘটনার শিকার ছাত্রদের বাড়িতে এবং ঈশ্বরদী হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিশুরা সবাই এখন পুরোপুরি সুস্থ্য।

শিশুদের চিকিৎসা প্রদানকারী ঈশ্বরদী হাসপাতালের চিকিৎসক হাসান উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিশুদের সবাইকে রাতেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। ’

তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মঙ্গলবার সকালে বাংলানিউজকে জানান, সোমবারের ঘটনায় শিশুদের মনে তৈরি হওয়া আতঙ্ক এখনো কাটেনি।

এ ঘটনায় প্রশাসনের দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে ঈশ্বরদী ইউএনও বাংলানিউজকে বলেন, ‘একটি সাধারণ মুদি দোকানে এ ধরনের বিষ বিক্রি করার কোনও বিধান আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ’

তিনি জানান, ঘটনা তদন্তে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীম আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।