ঢাকা: ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পদ থেকে অব্যাহতির বিষয়ে হাইকোটের আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ড. ইউনূসের দায়িত্ব পালন প্রশ্নে হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল মঙ্গলবার খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়ারুল হকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের বেঞ্চ এ শুনানি নেওয়ার পর এ আদেশ দেন।
এর আগে ২ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অব্যাহতির আদেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ৩ মার্চ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণব্যাংকের নির্বাচিত নয় জন পরিচালক এর বিরুদ্ধে দুটি রিট আবেদন করেন। ৮ মার্চ হাইকোর্ট দু’টি রিটই খারিজ করে দেন।
ড. কামাল শুনানির পর সাংবাদিকদের বলেন, দুটি লিভ টুআপিল ছিলো একটি ড. ইউনূসের পক্ষে করা সেটি আজ খারিজ হয়েছে। অপরটি করা হয় গ্রামীণ ব্যাংকের ৯ জন পরিচালকের পক্ষে যার শুনানি বুধবার অনুষ্ঠিত হবে।
তবে ড. ইউনূসের পক্ষে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালন পর্ষদের ৯ জন পরিচালকের করা লিভ টু আপিলের শুনানি গ্রহণের পরেই ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকছেন কি না তা বলা যাবে বলে জানান তিনি।
কোন গ্রাউন্ডে আপিল খারিজ করা হলো তা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রায়ের কপি পেলেই তা জানা যাবে।
একই বিষয়ে একটি আবেদন বাতিল হওয়ার পর অপর আবেদনেরও একই পরিণতি হবে কিনা এমন এক প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
আদেশের পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসের পক্ষে করা আপিল আবেদন (লিভ টু আপিল) খারিজ করেছে দিয়েছে আপিল বিভাগ। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকলো।
এর আগে শুনানিতে অংশ নিয়ে ড. ইউনূসের আইনজীবী ড. কামাল হোসেন হাইকোর্টে ড. ইউনূসের করা রিট খারিজ করে দেওয়া আদেশকে ‘আইনগত ভ্রান্তিমূলক’ আদেশ বলে উল্লেখ করেন।
শুনানিতে ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাউকে চাকরিচ্যুত বা অব্যহতি দিতে হলে নোটিশ দিতে হয়, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়। ইউনূসের ক্ষেত্রে তা হয়নি। সরাসরি অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, হাইকোর্ট বিভাগ কোনো রুল না দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের ভিত্তিতেই আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল তার বক্তব্য হলফনামা আকারে আদালতে জমা দেওয়া হয়নি, যা আদালতের জন্য অত্যাবশ্যক।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া তিনটি রায়কে নজির হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে ক্ষেত্রে আইনের প্রশ্ন জড়িত সেখানে রুল না দিয়ে রিট সরাসরি খারিজ করা যায় না। আমাদের রিটে আইনের অনেক ব্যখ্যা জড়িত তাই রিট সরাসরি খারিজের আদেশ আইন সম্মত হয়নি।
‘এ অবস্থায় হাইকোর্টের দেওয়া আদেশটি ‘আইনগতভাবে ভ্রান্তিমূলক’, বলেন ড. কামাল হোসেন।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৩ সালের গ্রামীণব্যাংকের চাকরি বিধিমালা কেবল কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ কর্মীর সংজ্ঞাভুক্ত নয়। এ পদের নিয়োগ দেয় পরিচালনা পর্ষদ আর কর্মী নিয়োগ দেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চাকরি বিধিমালায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদটি আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে বলেও জানান ড. কামাল।
তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে অবসরের ৬০ বছরের সময়সীমা কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের জন্য নয়।
এদিকে শুনানিতে অংশ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম বলেন, ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা। সকলের ক্ষেত্রে যে নিয়ম প্রযোজ্য হবে, তার ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম কার্যকর হবে। তিনি নোবেল বিজয়ী বলে তার জন্য নিয়ম কার্যকর হবে না, এটা ঠিক নয়।
এর আগে ২ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অব্যাহতির আদেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অব্যাহতি সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে পরের দিন ৩ মার্চ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণব্যাংকের নির্বাচিত নয় জন পরিচালক দুটি রিট আবেদন করেন। গত ৮ মার্চ তিনদিনের শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ দু’টি রিটই খারিজ করে দেন।
এর পরের দিনই এ আদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে দু’টি আবেদন (সিএমপি) করা হয়। এ আবেদনের উপর ১৫ মার্চ শুনানি শেষে আদালত দু’ সপ্তাহ শুনানি মুলতবি করেন।
এরপর গত ২৯ মার্চ শুনানি শেষে ড. ইউনূসের পক্ষে নিয়মিত লিভ টু আপিল দাখিল করতে বলেন আদালত।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে ড. ইউনূসের পক্ষে আপিল বিভাগে করা আবেদনের (সিএমপি) ওপর গত ২৯ মার্চ শুনানি নিয়ে ৪ এপ্রিল পুনরায় শুনানির দিন ধার্য করা হয়।
তবে হাইকোর্টের আদেশের কপি পাওয়ার পর ড. ইউনূসের পক্ষে নিয়মিত লিভ-টু-আপিল করার বিষয়টি আদালতে জানানো হলে আদালত মঙ্গলবার শুনানির জন্য ধার্য করেন।
বাংলাদেশ সময় ১৩৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১১