ঢাকা: ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পদ থেকে অব্যাহতির বিরুদ্ধে করা রিট হাইকোর্টে খারিজ হওয়াকে আইনগত ভ্রান্তিমূলক আদেশ বলে উল্লেখ করেছেন ড. কামাল হোসেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসের পক্ষে করা লিভ-টু আপিলের শুনানিতে ড. কামাল হোসেন এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের বেঞ্চ এ শুনানি গ্রহণ শুরু করে। এর আগে সোমবার আপিল বিভাগ এ শুনানির দিন ধার্য্য করেন।
শুনানিতে ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাউকে চাকরিচ্যুত বা অব্যহতি দিতে হলে নোটিশ দিতে হয়, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়। ইউনূসের ক্ষেত্রে তা হয়নি। সরাসরি অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, হাইকোর্ট বিভাগ কোনো রুল না দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের ভিত্তিতেই আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু অ্যাটর্নির বক্তব্য হলফনামা আকারে আদালতে জমা দেওয়া হয়নি, যা আদালতের জন্য অত্যাবশ্যক।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া তিনটি রায়কে নজির হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে ক্ষেত্রে আইনের প্রশ্ন জড়িত সেখানে রুল না দিয়ে রিট সরাসরি খারিজ করা যায় না। রিটে আইনের অনেক ব্যখ্যা জড়িত তাই রিট সরাসরি খারিজের আবেদন আইন সম্মত হয়নি।
‘এ অবস্থায় হাইকোর্টের দেওয়া আদেশটি আইনগতভাবে ভ্রান্তিমূলক’, বলেন ড. কামাল হোসেন।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৩ সালের গ্রামীণব্যাংকের চাকরি বিধিমালা কেবল কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ কর্মীর সংজ্ঞাভুক্ত নয়। এ পদের নিয়োগ দেয় পরিচালনা পর্ষদ আর কর্মী নিয়োগ দেন ব্যবস্থাপনা
পরিচালক। চাকরি বিধিমালায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদটি আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে বলেও জানান ড. কামাল।
তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে অবসরের ৬০ বছরের সময়সীমা কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের জন্য নয়।
এর আগে ২ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অব্যাহতির আদেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিরুদ্ধে পরের দিন ৩ মার্চ ড. মুহাম্মদ ইউনূসও গ্রামীণব্যাংকের নির্বাচিত নয় জন পরিচালক দুটি রিট আবেদন করেন। তিনদিনের শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ৮ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. ইউনূসের অব্যাহতি সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা দু’টি রিটই খারিজ করে দেন।
এর পরের দিনই এ আদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে দু’টি আবেদন (সিএমপি) করা হয়। এ আবেদনের উপর ১৫ মার্চ শুনানি শেষে আদালত দু’ সপ্তাহ শুনানি মুলতবি করেন।
এরপর গত ২৯ মার্চ শুনানি শেষে ড. ইউনূসের পক্ষে নিয়মিত লিভ টু আপিল দাখিল করতে বলেন আদালত।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে ড. ইউনূসের পক্ষে আপিল বিভাগে করা আবেদনের (সিএমপি) ওপর গত ২৯ মার্চ শুনানি নিয়ে ৪ এপ্রিল পুনরায় শুনানির দিন ধার্য করা হয়।
তবে হাইকোর্টের আদেশের কপি পাওয়ার পর ড. ইউনূসের পক্ষে নিয়মিত লিভ-টু-আপিল করার বিষয়টি আদালতে জানানো হলে আদালত মঙ্গলবার শুনানির জন্য ধার্য করেন।
বাংলাদেশ সময় ১২১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১১