ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

কালবৈশাখী ঝড়ে ১২ জনের মৃত্যু, আহত শতাধিক

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১১
কালবৈশাখী ঝড়ে ১২ জনের মৃত্যু, আহত শতাধিক

ঢাকা: কালবৈশাখী ঝড়ে বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।   আহত হয়েছে শতাধিক।

এছাড়া ঝড়ে শতাধিক বাড়ি বিধ্বস্ত ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, ঠাকুরগাঁও ও গাইবান্ধা থেকে  আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

জামালপুরে ৩ শিশুর মৃত্যু

জামালপুর জেলা প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের ৪টি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে দেড় হাজার বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত  হয়েছে। ঝড়ে ঘরচাপায় তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ রয়েছে পাঁচ জন। ঘর ও গাছ চাপা পড়ে আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫০ জন।

সোমবার বিকেল ৪টা থেকে জামালপুর সদর, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে প্রচ- বেগে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। প্রায় আধাঘণ্টা স্থায়ী ঝড়ে ইসলামপুর উপজেলার পাথর্শী, কুলকান্দি ও বেলগাছা ইউনিয়ন, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ি, চিকাজানি, বাহাদুরাবাদ ও সদর ইউনিয়নের অসংখ্য বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়। ঝড়ে বহু গাছ-পালা ও বৈদ্যুতিক খুটি উপড়ে ল-ভ- হয়ে পড়ে।

ঝড়ের সময় ইসলামপুর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের মিয়াবাড়িতে ঘরচাপা পড়ে আলমের শিশু ছেলে ফিরোজ (৩), ছালিম উদ্দিনের মেয়ে মনোয়ারা (১৩) এবং সদর উপজেলার পাত্তশী ইউনিয়নের জেরিন (১৩) মারা যায়।

ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ঘরচাপায় মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, ঝড়ে উপজেলার এই তিনটি ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে ঝড়ের সময় দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার  হলকার চর এলাকায় যমুনা নদীতে বালিবোঝাই নৌকাডুবিতে নিখোঁজ রয়েছে ৫ জন। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে সহস্রাধিক বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল হক নৌকাডুবিতে ৫ জন নিখোঁজ হওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । এসব এলাকায় বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ রয়েছে।

বকশীগঞ্জ  উপজেলার বগারচর, সাধুরপাড়া ও নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। শিলা বৃষ্টিতে বোর ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

শেরপুরে নিহত ৩

শেরপুর জেলা প্রতিনিধি জানান, সন্ধ্যা ৬ টায় শেরপুরের পাঁচ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে তিনজন নিহত এবং ৫ জন আহত হয়েছে। এতে ৪ শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শেরপুর সদর উপজেলা পশ্চিম কুমড়ি গ্রামের বাড়ির দেয়াল ধ্বসে পড়লে ঘটনাস্থলেই এক বৃদ্ধ (৭০) মারা যান। তিনি ঝড়ের সময় দেয়াল নির্মাণ করছিলেন। এছাড়া শ্রীবর্দী উপজেলার কেরেচড় গ্রামের সমেলা (৪৫) এবং সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী গ্রামের মমেনা (৫৫) মারা যান।

এছাড়া গাছ ভেঙ্গে গিয়ে বিদ্যুৎসংযোগের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. নাসিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ময়নসিংহে নিহত ২

ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় ঝড়ে শিশুসহ দু’জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩০জন। এ সময় ঝড়ের কবলে কয়েকশ কাঁচাপাকা বাড়ি এবং গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে এ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে।

ঝড়ের সময় নিজবাড়িতে ঘরের নিচে চাপা পড়ে মারা যায় গামারীতলা ইউনিয়নের পূর্ব গামারীতলা গ্রামের শাহাদাৎ হোসেন (৭) এবং ঘোষগাও ইউনিয়নের গলইভাঙ্গা গ্রামের মকবুল হোসেন (৪০)।

ঘর এবং গাছের চাপায় কমপক্ষে ৩০ জনের আহত হয়েছে। প্রায় ১৫ থেকে ১৭ মিনিট স্থায়ী এ ঝড়ে উপজেলার ধোবাউড়া, গামারীতলা, ঘোষগাও, পুরাকান্দলিয়া, দক্ষিণমাইজপাড়া ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে গাছপালা পড়ে তারাকান্দা-ধোবাউড়া রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।

রংপুরে নানী-নাতির মৃত্যু

রংপুর জেলা প্রতিনিধি জানান, ঝড়ে ছিঁড়ে পড়া বিদুতের তারে জড়িয়ে নানী ও নাতির মৃত্যু হয়েছে।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ঘটনাটি ঘটে।

নিহত নানী মর্জিনার (৪৫) স্বামী লালমিয়া বাংলানিউজকে জানান, নানী মর্জিনার (৪৫) নিজ গ্রাম হরিপুর থেকে নাতী লেমনকে (৭) নিয়ে তাদের বাড়ি কাশিপুর গ্রামে যাচ্ছিল।

পথে ঝড়ের তা-বে ছিঁড়ে পড়া পল্লী বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় তারা। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।

পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।


ঠাকুরগাওয়ে নিহত ১

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি জানান, ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সদর উপজেলার ৫ টি গ্রামের শতাধিক বাড়ি ও কয়েকশ হেক্টর ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে একজন নিহত এবং আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০ জন ।

নিহতের নাম মালেকা (৭০)। তার বাড়ি সদর উপজেলার সালন্দরের এলাকার বিলপাড়া গ্রামে।

সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতানুল ফেরদৌস নম্র ও ইউএনও তৌহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে সদর উপজেলার আউলিয়াপুর , আকচা, ভুল্লী,কচুবাড়ী,ও মলাণী গ্রামের ২ শতাধিক কাঁচা বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। প্রায় ২ শ হেক্টর জমির গম, ভুট্টা গম ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড় ও শিলার আঘাতে আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০  জন ।

ঝড়ের সময় বজ্রপাতে সালন্দর বিলপাড়া গ্রামে মালেকা (৭০) নামের একজন এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ আব্দুল মজিদ জানান, শিলাবৃষ্টিতে গম,ভুট্টা সরিষার  ক্ষেতে এবং আম ও লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

গাইবান্ধায় নিহত ১

গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে সাঘাটা উপজেলার যুগিপাড়া গ্রামের গিরিশ চন্দ্র বর্মন (৪৮) নামে একজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে।

গুরুতর আহত পাঁচ জনকে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঝড়ে সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর, ভরতখালি, ঘুড়িদহ, সাঘাটা সদর, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাখালবুরুজ, শিবপুর, শালমারা, কোচাশহর, মহিমাগঞ্জ, সদর উপজেলার কুপতলা, খোলাহাটি, বোয়ালি ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অসংখ্য গাছপালা উপড়ে যায়।

এসব এলাকার উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাইবান্ধা-ফুলছড়ি-সাঘাটা সড়কের ভরতখালি ও কচুয়া নামক স্থানে রাস্তার উপর গাছ উপড়ে পড়ায় গাইবান্ধার সঙ্গে সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার যোগযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।

জয়পুরহাটে ব্যাপক ক্ষতি

জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলার উপর দিয়ে সোমবার বিকেলে বয়ে যাওয়া ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মনজুর হাসান বাংলানিউজকে জানান, জেলায় প্রায় সহস্রাধিক গাছপালা উপড়ে গেছে। এছাড়া ২ শতাধিক বাড়িঘরের টিনের চালা উড়ে গেছে। বেশ কিছু মাটির  বাড়িও ধসে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে জানান, বিকেলে সাড়ে ৩ টা থেকে প্রায় আধাঘণ্টার ঝড়ে জয়পুরহাটে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি না হলেও ছোট বড় অনেক গাছ উপড়ে গেছে।

জেলার পাঁচবিবি উপজেলায় ১০ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

নওগাঁয় গমের ক্ষতি

নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর ধামইরহাট, পতœীতলা ও বদলগাছি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ধামইরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান দেলদার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আধা ঘণ্টা স্থায়ী ঝড়ে উপজেলার শতাধিক কাচা ঘরবাড়ির টিনের চাল উড়ে উড়ে গেছে। অসংখ্য গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। তার ছিড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

এছাড়া পতœীতলা ও বদলগাছিতে পাকা গমের ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।