ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিসিক ভবনে মধুমেলা

মৌচাষে মধু বিপ্লব সম্ভব

করিমুল বাশার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১১
মৌচাষে মধু বিপ্লব সম্ভব

ঢাকা: ‘মৌ চাষে আয় বাড়ে, মধু খেলে রোগ সারে’ স্লোগান নিয়ে মতিঝিলের বিসিক ভবনে শুরু হয়েছে মধুমেলা।

মেলায় স্থান পেয়েছে বিচিত্র সব ফুলের মধু।

আম-মুকুল, সরিষাফুল, কালো জিরা, লিচু ফুল... কী নেই।   এছাড়াও মেলায় পাওয়া যাচ্ছে সুন্দরবনের মধু।

এর মধ্যে সরিষা ফুলের মধু প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, লিচু ফুলের মধু ৪০০ টাকা এবং কালোজিরা ফুলের মধু কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মধুমেলাকে ঘিরে সারা দিন বিসিক ভবনে উৎসবের আমেজ। সকাল নয়টা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ভিড় করছেন ক্রেতারা।

পাঁচ দিনব্যাপী মেলা চলবে আগামী ৭ এপ্রিল পর্যন্ত।  

আয়োজকরা বাংলানিউজকে আরও জানান, দেশের বেকার জনগোষ্ঠীকে মধুচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে স্বাবলম্বী করা যেতে পারে। পাশাপাশি ব্যাপক মৌচাষের চাষের মাধ্যমে বাংলাদেশে মধু বিপ্লবও সম্ভব।

এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও বি-কিপিং ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করেছে মধুমেলা।

বিসিক’র পরিচালক (বিপণন ও প্রযুক্তি) জাহাঙ্গীর মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, বিসিকের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা নিয়ে হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার যুবক স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘বিসিক থেকে যারা প্রশিক্ষণ নেয় তাদের মধু উৎকৃষ্ট মানের হয়। ’

সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মৌ-চাষের সম্প্রসারণ ঘটানো সম্ভব এবং দেশের অর্থনীতিতে মধু বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে বলেও জানান তিনি।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত মৌমাছি পালন প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯ হাজার মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বিসিক। ৮ হাজার ২৪৮টি মৌবাক্স বিতরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অন্তত ২ লাখ মানুষ মৌ চাষে জড়িত হয়েছেন।

বিসিক আরও জানায়, মৌ চাষীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এই প্রকল্পেঋণের ব্যবস্থাও রয়েছে। মৌচাষে আগ্রহীরা বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিতে পারেন।

এ ঋণ দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারেন মৌচাষীরা।

মেলায় অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ষোল জন মৌচাষী। এরা মেলায় স্টল সাজিয়ে বিক্রি করছেন নিজ খামারের উৎপাদিত মধু। মধুর গুণাগুণ সম্পর্কিত লিফলেট বিলি করে তারা নিজের প্রতিষ্ঠানকে পরিচিত করানোরও চেষ্টা করছেন।  

মৌচাষীরা বাংলানিউজকে জানান, যে এলাকায় মৌচাষ হয় সে এলাকায় ফসলের ফলন বেড়ে যায় কয়েক গুণ। কারণ মৌমাছি দিনভর এক ফুল থেকে আরেক ফুলে মধু আহরণ করে। এতে ফুলের পরাগায়ন ঘটে।

তাই কৃষিকাজের উন্নয়নে মৌচাষ ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানান তারা।

এদিকে মৌ চাষীরা কিছু সমস্যার কথাও বলেছেন।

তারা জানান, মধু বাজারজাত করতে নানা সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। সমস্যা আছে মধুর ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়েও।

মৌচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করতে পারবো। এজন্য প্রয়োজন সঠিক উদ্যোগ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা। সরকারের সঠিক সিদ্ধান্তই পারে দেশীয় মধুর সম্প্রসারণ ঘটাতে।

তিনি বলেন, বিদেশ থেকে যে মধু আমদানি করা হয় তা বন্ধ করে দেশীয় মধুর সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে।

শুধু ঋণ দিলেই হবে না, উৎপাদিত মধু বাজারজাতের ব্যবস্থাও জরুরি বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।

১৯৬৩ সালে বাংলাদেশে পরিকল্পিতভাবে মৌচাষ শুরু হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের উদ্যোগে খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলে শুরু হয় মৌচাষ প্রকল্প। তবে ওই প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত বেশি দূর এগোতে পারেনি।

পরে ১৯৮৩ সালে বিসিক নতুন করে বাংলাদেশে মৌচাষের উদ্যোগ নেয়।

বিসিক জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে ১ হাজার ৭৫ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হয়। এর মধ্যে চাষের মাধ্যমে উৎপাদন হয় ৮১০ মেট্রিক টন।

অন্যদিকে সুন্দরবন থেকে সংগৃহীত হয় ২৬৫ মেট্রিক টন মধু।

সরকারের প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে মধুর উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে জানান বিসিক কর্মকর্তারা।

বিসিক‘র মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) আমিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সরকার প্রচার ও বিজ্ঞাপনে পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করতে পারছে না। এতে দেশীয় মধুর বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ