ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আজ ১ এপ্রিল

মূর্তিমান আতঙ্ক বাংলাভাই নামে কেঁপে উঠেছিল বাগমারা

জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১১
মূর্তিমান আতঙ্ক বাংলাভাই নামে কেঁপে উঠেছিল বাগমারা

রাজশাহী: আজ পয়লা এপ্রিল। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজশাহী অঞ্চলে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন জঙ্গি নেতা ‘বাংলাভাই’।

একইসঙ্গে জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামে আতংক ধরানো এক নামের সঙ্গে পরিচয় ঘটে সাধারণ মানুষের।

প্রশাসন ও ক্ষমতাসীনদের একটি মহলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে বাংলাভাই বাগমারা ও আশপাশের এলাকায় এক সমান্তরাল প্রশাসনই যেন কায়েম করে বসে।

কথিত আধ্যাত্মিক গুরু শায়খ আব্দুর রহমানের শিষ্য সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই রাজশাহীর রক্তাক্ত জনপদ নামে খ্যাত বাগমারায় সাত বছর আগের এইদিনে সর্বহারা নির্মূলের নামে শুরু করে তা-ব। বাংলাভাই ও তার দলবল প্রকাশ্যেই উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের পলাশী গ্রামের সড়কুতিয়া এলাকার মনোয়ার হোসেন বাবুকে গলা কেটে হত্যা করে।

এরপর বাগমারাসহ পাশের আত্রাই ও রানীনগর উপজেলায় তৎকালীন প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে একের পর এক হত্যা আর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে যায় জেএমবির সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই। তার বানানো একাধিক টর্চার সেলে বাছাই করা লোকদের ধরে এনে পিটিয়ে হত্যা করতে থাকে।

একে একে বাংলাভাই বাহিনীর শিকার হয়ে বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরের মুকুল, আত্রাইয়ের বাদশা, খেজুর আলী, দিপকসহ অনেকেই প্রাণ হারায়। তার নির্যাতনে অনেককেই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। বাংলাভাইয়ের চালানো নির্মম তা-ব আর আতংকের সেই ভয়াল স্মৃতি মনে হলে এখনো রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ শিউরে ওঠেন। দুঃসহ সেই ভয়াল স্মৃতি এখনও অনেককে তাড়া করে দুঃস্বপ্নে।  

বাগমারার হামিরকুৎসা ও ভিটিপাড়ায় ছিল বাংলাভাইয়ের প্রধান ক্যাম্প। এখানেই চালানো হতো অধিকাংশ নির্যাতন। বাংলাভাইয়ের বিশাল বাহিনীর সদস্যদের অনেকের বাড়িই ছিল বাগমারা, আত্রাই ও রানীনগরে।

এদের বাইরে স্থানীয় অনেকেই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বাংলাভাইয়ের জঙ্গি বাহিনীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানান, এদের অনেকেই এখন গা ঢাকা দিয়ে আছে।

একপর্যায়ে বাংলাভাই বাহিনীর নির্মম নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ ও ২১ আগস্ট বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার দেশে ও দেশের বাইরে তীব্র চাপের মুখে পড়ে। এ পর্যায়ে বাংলাভাই এলাকা ছেড়ে চলে যায়।

পরে র‌্যাব ও পুলিশের বিশেষ অভিযানে ময়মনসিংহের এক গোপন আস্তানা থেকে ২০০৬ সালের ৬ মার্চ বাংলাভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই বছরের ২৯ মে তাকে মৃত্যুদ- দেন আদালত। পরের বছর ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ শায়খ আব্দুর রাহমান ও বাংলাভাইসহ মোট ৫ শীর্ষ জঙ্গিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

এখন বাংলাভাই কিংবা তার গুরু শায়খ আব্দুর রহমান নেই। তবে, তাদের নির্যাতনের চিহ্ন রয়ে গেছে। এখনো সে সব চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন রাজশাহী অঞ্চলের অনেক মানুষ। বিশেষ করে রাজশাহীর বাগমারা, নওগাঁর রানীনগর ও আত্রাই, নাটোরের নলডাঙ্গা এলাকার লোকজন বাংলাভাইয়ের নামে এখনও শিউড়ে ওঠেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।