ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পুলিশ, সাংবাদিকসহ আহত ১৭

চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা রণক্ষেত্র

রমেন দাশ গুপ্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১১
চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা রণক্ষেত্র

চট্টগ্রাম: আগামী ৪ এপ্রিলের হরতালের সমর্থনে মিছিলকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরী এবং হাটহাজারীতে পুলিশের সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ দলের কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

দফায় দফায় সংঘর্ষ, লাঠিচার্জ, ইটপাটকেল ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনায় এ সময় নগরীর আন্দরকিল্লা মোড় ও আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

ঘটনাস্থলে পুলিশ, সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৭ জন।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন কোতয়ালী থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বাংলানিউজকে জানান, তিন দফা দাবি আদায় ও হরতালের সমর্থনে দুপুর পৌনে দু’টার দিকে নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে মিছিল বের করে হেফাজতে ইসলামের কয়েক’শ কর্মী। এ সময় পুলিশও তাদের অনুসরণ করতে থাকে।

মিছিলটি মসজিদের মূল ফটক থেকে বেরিয়ে আনুমানিক ৫০ গজ যাওয়ার পর আকস্মিকভাবে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় মিছিলকারীরা। এরপর তিনদিক থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। মিছিলকারীদের কয়েকজন এক সার্জেন্টকে মাটিতে ফেলে পিটিয়ে তার অয়ারলেস সেট লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া অপর এক কর্মী এক কনস্টেবলের কাছ থেকে শটগান ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।

ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুক্ষণ হতভম্ভ থাকার পর পুলিশ সংঘটিত হয়ে মিছিলকারীদের তিন দিক থেকে ধাওয়া দেয়। পাশাপাশি লাঠিচার্জ এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপও শুরু করে পুলিশ। এ সময় মসজিদের ভেতর থেকে মাইকে সংগঠনের পক্ষ থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়।

প্রায় ২০ মিনিট পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষের পর পিছু হটে মসজিদের সামনে অবস্থান নেয় মিছিলকারীরা। পরে তারা মসজিদের ভেতর গিয়ে সেখানে মাইকযোগে হরতালের সমর্থনে সমাবেশ করেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলামের চট্টগ্রাম শাখার নায়েবে আমীর ও হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার মোহাদ্দিস মো. শামসুল আলম।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (উত্তর) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ ৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। ’

এছাড়া অয়ারলেস লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

সিএমপির উপ-কমিশনার (বন্দর) কুসুম দেওয়ান বাংলানিউজকে জানান, ইটপাটকেলের আঘাতে সিএমপির কোতয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার জেদান আল মুসা, নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (উত্তর) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, কোতয়ালী থানার পেট্রল ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলামসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।

হেফাজতে ইসলামের নেতা ইলিয়াস ওসমান দাবি করেছেন, পুলিশের হামলায় তাদের সংগঠনের চার কর্মী আহত হয়েছেন। তবে ওমর ফারুক নামে এক কর্মী ছাড়া আর কারও নাম তিনি বলতে পারেননি।

বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া ইটপাটকেলের আঘাতে তিন সাংবাদিকও আহত হয়েছেন। এরা হলেন চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার চৌধুরী ফরিদ, ডেইলি সানের স্টাফ ফটোগ্রাফার হাবিবুর রব এবং এটিএন বাংলার ক্যামেরামেন ফরিদ উদ্দিন।

এদিকে আন্দরকিল্লা মোড়ে দফায় দফায় সংঘর্ষের কারণে আশপাশের এলাকার প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। লোকজনের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থল দিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

সিএমপির কোতয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার জেদান আল মুসা বাংলানিউজকে বলেন, ‘মিছিলে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্য পুলিশের ছিল না। আমরা মিছিল অনুসরণ করছিলাম। কিন্তু মিছিল থেকে আমাদের ওপর ইটপাটকেল ছোঁড়া হয়। বাধ্য হয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ’

এছাড়া হাটহাজারীর তিনটি স্পটে পুলিশ মিছিলে বাধা দেরয়ার পর ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধের পাশাপাশি যানবাহনও ভাংচুর করে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। এ সময় তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

জেলা পুলিশের হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি বাবুল আক্তার বাংলানিউজকে জানান, হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা ফতেয়াবাদ মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে মিছিল নিয়ে গিয়ে হাটহাজারীর চৌধুরীহাট, আমানবাজার এবং বড় দিঘীরপাড় এলাকায় আলাদাভাবে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। মাদ্রাসার সামনে পুলিশ তাদের বাধা দিলে কর্মীরা একটি বাস ভাংচুর করে। দুপুর তিনটার দিকে তারা আবার ব্যারিকেড তুলে নেয় বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, নারী উন্নয়ন নীতিমালার কোরআন সুন্নাহ বিরোধী সব ধারা, ফতোয়াবিরোধী রায়, ইসলামবিরোধী জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ৪ এপ্রিল হরতালের ডাক দিয়েছেন ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান আমির মুফতি ফজলুল হক আমিনী।

বাংলাদেশ সময় : ১৪৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।