রাবি: নিশাত ফারহা টুম্পা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মেধাবী শিক্ষার্থী। চারুকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
গত ২৭ মার্চ গভীর রাতে নগরীর হেতেম খাঁ এলাকার প্যারাগন ছাত্রী নিবাসে বিষপান করে ইহলোক থেকে ছুটি নিয়েছেন তিনি। টুম্পার আত্মহত্যার কারণ প্রেমঘটিত বলে ধারণা করছেন তার সহপাঠী ও বন্ধুরা।
শুধু টুম্পা নন, গত এক মাসে প্রেমঘটিত কারণে জীবন থেকে স্বেচ্ছা ছুটি নিয়ে অনন্তপুর চলে গেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই শিক্ষার্থী।
এসব অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুকে সামাজিক অস্থিরতা ও পরস্পরের প্রতি আস্থাহীনতার ফল বলে উল্লেখ করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা।
এর আগে, গত ৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের সাহাকুল ইসলাম সোহাগ নামের এক শিক্ষার্থী বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
তার বন্ধুরা জানান, ওইদিন সকালে সোহাগ গ্রামের বাড়ি নাটোর জেলার গুরুদাসপুরে যায়। বাড়ি গিয়ে বিষপান করলে রাত ৯টার দিকে স্বজনরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
এলাকার এক মেয়ের সঙ্গে সোহাগের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানায় তার পারিবারিক সূত্র। পরিবারের সদস্যদের ধারণা, প্রেমঘটিত কারণেই সাহাকুল আত্মহত্যা করেছে।
এর মাত্র দু’দিন পর ১০ মার্চ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী কবিতা রানী তার নিজ বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন।
তিনি মুন্নুজান হলের আবাসিক ছাত্রী ছিলেন। আত্মহত্যার দিনই কবিতার মাস্টার্সের ফলাফল প্রকাশ পায়। তিনি দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন বলে জানান তার সহপাঠীরা।
কবিতার বন্ধুরা জানান, তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বী হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুসলমান ছেলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আর এ সম্পর্কের টানাপড়েন থেকেই কবিতা বিষপান করেছেন বলে মনে করেন তারা।
সর্বশেষ ২৭ মার্চ গভীর রাতে নগরীর হেতেম খাঁ এলাকায় প্যারাগন নামে এক ছাত্রী নিবাসে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী নিশাত ফারহা টুম্পা। টুম্পার আত্মহত্যার কারণও প্রেমঘটিত বলে ধারণা করছে তার বন্ধুমহল।
এদিকে, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগকর্মী রকি গত ১০ মার্চ বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। রকি বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক ছাত্র।
তার বন্ধুরা জানান, রকি নিজ জেলা সিরাজগঞ্জের এক মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রেম করে আসছিল। ১০ মার্চ রাতে ওই মেয়ের বিয়ে হচ্ছে জানতে পেরে রকি হলে তার নিজ কক্ষের দরজা-জানালা বন্ধ করে বিষপান করেন। দীর্ঘ সময় দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে রকির বন্ধুরা দরজা ভেঙে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করেন।
পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রেমিকা বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে গত ১৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালযের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আশিকুর রহমান আশিক নিজের গায়ে কেরেসিন ঢেলে আগুন দিয়ে আতœহত্যার চেষ্টা চালান।
পরে তার বন্ধুরা সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে নিয়ে গিয়ে সেবা দিলে বেঁচে যান তিনি।
মাত্র এক মাসে তিন মেধাবী শিক্ষার্থীর আত্মহনন এবং অপর দু’জনের একই পথ বেছে নেওয়ার চেষ্টার ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের আতঙ্কিত করে তুলেছে।
এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র নাজমূল হক রতন বলেন, ‘মোবাইল ফোনের অপব্যবহারে মানুষ একে অপরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। মোবাইল ফোনে প্রতারণা করা এখন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এ প্রবণতা অনেক বেশি। যে কারণে তাদের মধ্যে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টিও বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ’
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. মাহবুবা কানিজ কেয়া বলেন, ‘এসব ঘটনা এক প্রকার সামাজিক অস্থিরতার ফল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানুষিক সচেতনতা বোধের অভাব থেকেই এ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে। ’
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে প্রেমঘটিত কারণে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করলে মানুষের প্রতি মানুষের আস্থার বিষয়টি আরও ক্ষীণ হয়ে যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১১