ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এনজিওনির্ভর হয়ে পড়েছে শহরাঞ্চলে জন্ম নিয়ন্ত্রণ র্কাযক্রম

সাইদ আরমান, স্টাফ করসেপন্ডন্টে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১১
এনজিওনির্ভর হয়ে পড়েছে শহরাঞ্চলে জন্ম নিয়ন্ত্রণ র্কাযক্রম

ঢাকা: ঢাকাসহ সবক’টি সিটি করপোরশেন এবং পৌর এলাকায় সন্তান উৎপাদনে সক্ষম প্রায় ৪৫ লাখ দম্পতি (১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সী) রয়েছেন। কিন্তু এসব শহরাঞ্চলে পরিবার পরকিল্পনা অধিদপ্তরের কোনো জন্ম নিয়ন্ত্রণ র্কাযক্রম নেই।

কাজটি করছে কয়েকটি এনজিও।  

দ্বিতীয় আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার প্রকল্প (ইউপিএইচসিপি) এর অধীনে ১২ টি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ছয়টি সিটি করপোরেশন এবং পাঁচটি পৌরসভায় পরিবার পরকিল্পনাসেবা (জন্ম নিয়ন্ত্রণ) দিচ্ছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের এ সেবা কেবল সচেতনতা তৈরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।  

অন্য পৌরসভাগুলোতে আরো প্রায় দেড় শতাধিক এনজিও এই দায়িত্ব পালন করছে।   সেখানে ইউএসএইড’র অনুদানে এবং পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের সহায়তায় তারা র্কাযক্রম চালায়। কিন্তু তারা ঘরে ঘরে যায় না। ফলে র্কাযত ৪৫ লাখ দম্পতি জন্ম নিয়ন্ত্রণ সেবার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এম এম নিয়াজ উদ্দিন বাংলানিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

দ্বিতীয় আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার প্রকল্প এর অধীনে ৬টি সিটি করপোরশেন হচ্ছে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল এবং খুলনা। আর পাঁচটি পৌরসভা হচ্ছে সাভার, মাধবদী, কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া।

২০১০ সালে সর্বশেষ প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভে-২০০৯  প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার পরিবার পরিকল্পনা সেবার জন্য এনজিও নির্ভরশীলতা কমাতে না পারলে শহরাঞ্চলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যর্থ হবে। বিশেষ করে বস্তিবাসী এবং শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ঝুঁকি অনেক বেশি।    অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, এখনও এমন অবস্থাই চলছে।

কিন্তু এ ব্যাপারে অধিদপ্তর কোনো কার্যক্রমও হাতে নিচ্ছে না।

ইউপিএইচসিপি প্রকল্প সশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘরে ঘরে উপকরণ বিতরণ করা তাদের কাজ নয়। বরং তাদের দায়িত্ব হচ্ছে জন্ম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিকল্পিত পরিবার গঠনে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহর হোক গ্রাম হোক জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম কোনোভাবেই এনজিও নির্ভর হতে পারে না। ফলে বিষয়টি জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ঝুঁকি হিসেবেও দেখা হচ্ছে।  

জানা গছে, দ্বিতীয় মেয়াদে এ বছরই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সশ্লিষ্ট এনজিওগুলো তাই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে সক্রিয় হচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনোভাবেই এনজিও-নির্ভর হওয়া আর ঠিক হবে না। কারণ গত ছয় বছরে তারা শহরে যে র্কাযক্রম চালিয়েছে তা মোটেও সন্তোষজনক নয়।

এনজিও প্রতিনিধিরাও স্বীকার করেছেন তাদের সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার কথা।

এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত এনজিওদের একটি হচ্ছে রুরাল ডেভেলপমেন্ট অরগ্যানাইজেশন (রুডো)। এটির এক মাঠকর্মী মশিউর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, তাদের জনবল নেই। নেই অবকাঠামোও। ফলে তারা ঘরে ঘরে গিয়ে পরিবার পরকিল্পনা সেবা পৌঁছে দিতে পারছে না। শুধু ক্লিনিক থেকে সেবা দিচ্ছে। কিন্তু মানুষ এই সেবার জন্য সেখানে যেতে আগ্রহী নয়। বিশেষ করে বস্তি এলাকার সক্ষম দম্পতিরা।

তাছাড়া তাদের হাত দিয়ে যে উপকরণ যাচ্ছে তারও সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কিনা তাও দেখার কেউ নেই। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চাইলে বিষয়টি র্পযবক্ষেণ, তত্ত্বাবধান করতে পারে। তাদের যথেষ্ট দক্ষতা ও প্রতিষ্ঠিত অবকাঠামোও রয়েছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের শীর্ষ অপর এক র্কমর্কতা বলেন, এনজিওগুলো আসলে জন্মনিয়ন্ত্রণ র্কাযক্রম পরিচালনা করছে না। তাদের সঠিক জবাবদিহিতাও নেই।    

স্থানীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে ইউএসএইডও অনুদান দিচ্ছে কয়েকটি এনজিওকে। তাদের কাছ থেকে আশানুরূপ কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এম এম নিয়াজউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, দেশের জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা পৌঁছে দেওয়ার মূল দায়িত্ব পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের। তাই ব্যর্থতার পুরো দায়ভার তাকেই নিতে হচ্ছে। শহরের মানুষকে অনেক সময়ই বলতে শোনা যায়, সেখানে আমাদের র্কমীরা যায় না। কিন্তু সত্যি হচ্ছে সেখানে আমাদের কোনো র্কাযক্রমই নেই।  

তিনি জানান, বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনি পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। গত সপ্তাহে এবিষয়ে একটি চিঠি লেখা হয়েছে।

‘শহরে র্কাযক্রম পরিচালনা করার মত কৌশল, সার্মথ্য এবং অভজ্ঞিতা আমাদের রয়েছে’ বলে তিনি দাবি করেন।  

এদিকে প্রকল্পের উপ-পরিচালক ডা. শারমিন টেলিফোনে বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হতে পারে। পরে আবার তৃতীয় র্পব শুরু হবে।

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, এর সবগুলো ওর্য়াড আমাদের আওতাভুক্ত নয়। ফলে জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের র্ব্যথতার পুরো দায়ভার আমাদের নয়। পুরো কাজটি তদারকি করে সশ্লিষ্ট সিটি বা পৌর র্কতৃপক্ষ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, মার্চ  ২৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।