চবি: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে অনেক পিছিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন পর্যন্ত ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় ওভাবে আসেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদের অধীনে ৩৬ টি বিভাগের ২০টি বিভাগেই কোন কম্পিউটার ল্যাব ও ইন্টারনেট সুবিধা নেই। এছাড়া ১০টি আবাসিক হলের একটিতেও ইন্টারনেট সংযোগ নেই। ফলে বিশ^বিদ্যালয়ে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছে ইন্টারনেট সুবিধা থেকে। অ্যাসাইনমেন্টের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ কিংবা জরুরি কোন ই-মেইলের জন্য যেতে হয় চবি থেকে ২২ কি.মি. দূরে চট্টগ্রাম শহরে।
আবার যে সময়টুকু শিক্ষার্থীদের কম্পিউচার ও ল্যাব ব্যবহারের সুযোগ থাকে সেই সময়টুকুতেও লোডশেডিংয়ের কারণে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে সমস্যার সম্মূখীন হতে হয়। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে চবি আইসিটির জন্য একটি জেনারেটর কেনা হলেও দীর্ঘ দিন অকেজো থাকার পর বর্তমানে তা উপাচার্যের কার্যালয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া ইন্টারনেটের গতির সমস্যাও প্রকট । চবিতে ইন্টারনেটের গতি অধিকাংশ সময় কম থাকে। ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি হওয়া, কম্পিউটার ভাইরাস এবং যান্ত্রিক ক্রটির কারণে গতির সমস্যা লেগেই আছে।
এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন যে পরিমাণ ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে তাও যথাযথভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। ইন্টারনেট সংক্রান্ত নানান সমস্যা সমাধানের জন্য কারিগরি জ্ঞাণ সম্পন্ন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার বা লোকের অভাব এর অন্যতম কারণ। ইন্টারনেট অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকা কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগেও অভিজ্ঞ দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সর্ম্পক বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে জানান, নতুন বিভাগ হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় জানতে হয় ইন্টারনেট থেকে এবং তাদের বেশির ভাগ একাডেমিক নোট করতে হয় ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে। অথচ বিভাগে কোন কম্পিউটার ল্যাবই নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কলা অনুষদে ৮টি বিভাগ ও একটি গবেষণা কেন্দ্রের অধীনে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে কিন্তু একটি বিভাগেও কোন নিজস্ব কম্পিউটার ল্যাব নেই। এ সমস্যা দূর করতে ২০০৬ সালে তৎকালীন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মনসুর উদ্দিন আহমদ এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক অনুদানে একটি কমম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেন। অনুষদের প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা এটি ব্যবহার করতে পারতেন। কিন্তু গত এক বছর যাবৎ ল্যাবটি বন্ধ। অথচ এটি চালু করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
ল্যাবটি আবার চালু করা হবে কি না জানতে চাইলে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া বাংলানিউজকে জানান, এটা কোন জাতীয় সমস্যা নয়, তবে এ ব্যাপারে অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যে সব বিভাগের নিজস্ব কম্পিউটার ল্যাব আছে তাদেরও তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমস্যার অন্ত নেই। ল্যাব গুলোর অধিকাংশ কম্পিউটারই অকেজো হয়ে পড়ে থাকে। ফলে পর্যাপ্ত কম্পিউটার থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার করতে পারেন না সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের কম্পিউটার ল্যাবে ২০টি কম্পিউটার থাকলেও চালু আছে মাত্র দু’টি কম্পিউটার। এর মধ্যে একটি আবার অফিসের কাজের জন্য বরাদ্দ। একারণে বিভাগের প্রায় পাঁচ’শরও অধিক শিক্ষার্থী কম্পিউটার ইন্টারনেট ব্যবহার করতে ব্যর্থ হচ্ছে। র্দীঘদিন এই অচলাবস্থা চললেও বিভাগের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বিভাগটির পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা বিভাগটির সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, কম্পিউটার গুলোর ভেতরের যন্ত্রপাতি ভাল মানের না হওয়ায় এবং ঘন ঘন ভাইরাস আক্রমণ করায় মেরামত করার পরও খুব তাড়াতাড়িই আবার নষ্ট হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ গুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত তা পৌঁছায়নি আবাসিক হল গুলোতে।
এ ব্যাপারে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইনঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ নুরুল মো¯তাফা বাংলানিউজকে জানান, কর্তৃপক্ষ চাইলে আমরা সংযোগ দিতে পারি।
এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে চবি উপার্চায (ভারপ্রাপ্ত) ড. মোঃ আলাউদ্দিন বাংলা নিউজকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এরই মধ্যে চবিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। আশাকরি খুব তাড়াতাড়িই কাজ শুরু করতে পারবো।
উল্লেখ্য, বেসরকারি উদ্যোগে ব্রডব্যান্ড সুবিধা দিতে দু-একটি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলেও হল প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে শিক্ষার্থীরা সে সেবাও পাচ্ছেন না বলে শাহ জালাল, আমানত ও মাস্টার দা সূর্যসেন হলের কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩০ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১১