রাজবাড়ী: ১৩ নভেম্বর বাংলা সাহিত্যের দিকপাল, কালজয়ী উপন্যাস “বিষাদ সিন্ধু”র রচয়িতা উনবিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম সাহিত্যিক, মীর মশাররফ হোসেনের ১৬৭ তম জন্মদিন।
১৩ নভেম্বর জন্মদিন হলেও ১৫ নভেম্বর দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলা একাডেমী স্মৃতিকেন্দ্রে অবস্থিত সমাধীস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া গ্রামের মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
মীর মশাররফ হোসেনের সমাধীস্থল রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার পদ্মদী গ্রামে। মীরের সমাধীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মন্ত্রাণালয় তার এই পিতৃপুরুষের ভিটায় তৈরি করেছে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র। যা দেশের একটি সম্ভাবনাময় সাহিত্যের তীর্থস্থান।
১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে ১ একর ৮৪ শতাংশ জমির উপর ২ কোটি ৪৮ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সম্ভাবনাময় এই স্মৃতিকেন্দ্রটি অযত্ন অবেহেলায় দিন দিন তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। লোকোবলের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে সম্ভাবনাময় এই স্মৃতি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা। সাহিত্য প্রেমিক পর্যটকেরা হচ্ছেন বিমূখ।
১৮৪৭ সালে জন্ম নেয়া এই লেখক তার জীবন কালে লিখেছেন, বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য রচনা বিষাদ সিন্ধু, জমিদার দর্পন, রত্নবতী, গড়াই ব্রিজ, বসন্ত কুমারীসহ অনেক কালজয়ী লেখা। তিনি ছিলেন ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে এক অদম্য লেখক।
প্রায় ১ যুগ পার হলেও স্মৃতি কেন্দ্রের সংগ্রহ শালায় নেই কোনো নিদর্শন। ৬টি পদে নিয়োগ থাকার কথা থাকলেও মাত্র ২ জন দিয়েই চলছে কেন্দ্রটির পরিচালনা।
সুন্দর এই নিদর্শনটি দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে ভীড় করে। মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রকে ঘিরে এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি এ জেলার মানুষের।
সরকারের সুনজর ও সঠিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মীর মশাররফ স্মৃতিকেন্দ্রটি হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র এমনটিই আশা করছেন জেলাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা।
রাজবাড়ী জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের লেখক ও গবেষক প্রফেসর মতিয়র রহমান জানান, মীর মশাররফ হোসেন বাংলা সাহিত্যের কেবল কাল পর্বেরই স্রষ্টা নন তিনি বিষাদ সিন্ধুর রচয়িতা। পাঠক সৃস্টির ক্ষেত্রে তিনি রবীন্দ্রনাথকেও ছাড়িয়ে গেছেন। সে ক্ষেত্রে রাজবাড়ীবাসী মীর মশাররফ হোসেনের দাবীদার।
জেলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস জানান, প্রখ্যাত সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের সমাধীস্থল রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার পদ্মদী গ্রামে অবস্থিত। প্রত্যেক বছর তার জন্ম বার্ষিকী পালন করা হয়। প্রত্যেক সাহিত্যপ্রেমী মানুষ যাতে স্মৃতিকেন্দ্রে আসতে পারে তার সুযোগ করে দেওয়া সরকারের দায়িত্ব।
মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র অফিস সহকারী মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে ১ একর ৮৪ শতাংশ জমির উপরে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সম্ভাবনাময় এই স্মৃতিকেন্দ্রটি অযত্ন অবহেলায় দিন দিন তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। লোকোবলের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে সম্ভাবনাময় এই স্মৃতি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা। সাহিত্য প্রেমিক পর্যটকেরা হচ্ছেন বিমূখ।
দর্শনার্থী মো. কামাল হোসেন বলেন, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র এসে দেখলাম দেশের অনেক জেলার মানুষ তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসে। এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র হলে অনেক ভালো হতো। রাজবাড়ী জেলার সুনাম খ্যাতি আরও ছড়িয়ে পড়তো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৪