ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অবৈধ শিকারে বিপন্নপ্রায় বঙ্গোপসাগরের হাঙর

মংলা সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১১
অবৈধ শিকারে বিপন্নপ্রায় বঙ্গোপসাগরের হাঙর

মংলা: বঙ্গোপসাগরে অবৈধভাবে হাঙর শিকারে মেতে উঠেছেন উপকূলীয় মংলা অঞ্চলের জেলেরা। মৌসুম শেষের পরেও তাদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে হাঙর ধরা পড়ছে।

আর এ কারণে উপকূল ও এর আশেপাশের   জেলেরা মাছের পরিবর্তে শুধু হাঙর শিকারের নেশায় মেতে উঠেছেন। ফলে বিপন্ন হতে চলেছে সমুদ্রচারী হাঙর।

এ হাঙর দিয়ে তৈরি শুঁটকি, তেল, কান, দাঁত বিক্রি করে আর্থিকভাবে অধিকতর লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকায় মাছ শিকারের বদলে তারা হাঙর শিকার করছেন।

জেলেদের সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন সংলগ্ন দুবলার চর, আশারচর, কাউয়ারচর, ফাত্রারচর শুঁটকিপল্লীতে প্রতিটি মাচায় ৮ থেকে ৯ ইঞ্চি আকৃতির হাঙরের বাচ্চা কেটে কেটে শুকানো হচ্ছে।

গত এক মাস ধরে সাগরে লাখ লাখ হাঙর ধরা পড়ায় জেলেরা মাছ করতে আর আগ্রহী হচ্ছেন না! তার পরিবর্তে তারা শুধু হাঙর শিকারের নেশায় মেতে উঠেছেন।

প্রতিটি মাছ ধরার ট্রলার প্রতিদিন ৭শ থেকে ২/৩ হাজার হাঙর শিকার করে শুঁটকিপল্লীতে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে বেচাকেনা শুরু হয় আর চলে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত।

এরপর সারা রাত ধরে চলে হাঙর কেটে মাচায় ওঠানোর পালা। এ সব হাঙর রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করতে ৪ থেকে ৫ দিন সময় লাগে বলে সংশিষ্ট শুঁটকি পল্লীর শ্রমিকরা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।

নামহীন ট্রলারের এক জেলে আবু হানিফ মিয়া জানান, সাগরে এখন হাঙরের বাচ্চা ছাড়া তেমন কোনো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। গতবারের তুলনায় এবার সাগরে অনেক বেশি হাঙর ধরা পড়ছে।

জেলে সিদ্দিকসহ কয়েকজন জেলে জানান, হাঙর শিকারের জন্য বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহার করা হয়। শীতকালে সাধারণত হাঙর বেশি ধরা পড়ে।

তারা জানান, প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় সমুদ্রের তলদেশের পানির তাপমাত্রা কমে গেলে হাজার হাজার হাঙর ঝাঁক বেঁধে পানির উপরিভাগে খাদ্যের সন্ধানে চলে আসে। এ সময় বিশেষ এক ধরনের জাল দিয়ে জেলেরা এ সব হাঙর শিকার করেন।

তারা আরো জানান, জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্যান্য কারণে শীতের পরেও এবার প্রচুর হাঙর ধরা পড়ছে।   ছোট হাঙর জালে আটকা পড়ার ২ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়। এ ছাড়া উপকূলে আসার আগে শিকার করা হাঙর সাধারণত পচে যায় না। এর ফলে বরফ কেনার দরকারও পড়ে না। সে কারণেই জেলেরা হাঙর শিকারের দিকেই বেশি আগ্রহ দেখান।    

এদিকে আড়ৎদার ও শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা ছোট ১০০ পিস হাঙর ১২শ থেকে ১৫শ টাকায় কেনেন। হাঙরের আকৃতি ছোট থাকায় প্রতি কেজিতে এর সংখ্যা হয় ১৫ থেকে ২০টি। তবে বড় হাঙর কিনছেন মণ হিসেবে। প্রতি মণ হাঙরের দাম ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। এরপর শিকার করা হাঙর দিয়ে শুঁটকি বানিয়ে চট্টগ্রাম, ঢাকায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন।

শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, হাঙরের তেল আলাদাভাবে বিক্রি হয়। আর কান প্রতিমণ ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকা, তেল প্রতিমণ ৬ হাজার টাকা ও দাঁত প্রতিমণ ৭শ থেকে ৮শ টাকায় বিক্রি করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে দুবলার চর ট্রলার মালিক সমিতি ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিন-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার এলাকায় হাঙ্গর শিকারের কথা অস্বীকার করেন।

প্রসঙ্গত, সমুদে অবৈধভাবে হাঙর শিকার করা হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য কোনো সংস্থা এ এলাকায় নেই। ফলে, এ বিষয়ে সরকারি কোনো সংস্থার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মাছের আড়ৎগুলো থেকে বন বিভাগ রাজস্ব আদায় করলেও তারা সমুদ্রে অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কোনো দেখভাল্ করে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।